নিউজ ডেস্ক:: নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় কোচিং সেন্টারের আড়ালে এক লম্পট শিক্ষকের বিকৃত যৌনাচারের খবর পাওয়া গেছে। সর্বশেষ ওই লম্পট শিক্ষকের হাতে ধর্ষিত দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর মা থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে। এরপরই বেরিয়ে আসে শিক্ষকের যৌনাচারের নানা ঘটনা। ওই শিক্ষকের নাম তাপস কুমার সিং। গত ২১শে অক্টোবর সন্ধ্যায় দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী লম্পট তাপসের ধর্ষণের শিকার হয়। এর আগেও তাপসের কোচিং সেন্টারে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও লোকলজ্জার ভয়ে কোন ছাত্রী বা তাদের অভিভাবকরা আইনের আশ্রয় নেননি। আর তাপসের লাম্পট্যে তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন তারই কোচিং সেন্টারে কাজ করা নারী ও পুরুষ শিক্ষকরা। পুলিশের তদন্তে এমন চিত্রই উঠে এসেছে।
শুধু পুলিশ নয়, নারায়ণগঞ্জের একজন আওয়ামী লীগ নেতার কাছেও লম্পট তাপসের লালসার শিকার একাধিক ছাত্রীর অভিভাবকরা অভিযোগ করেলেও কেউই মামলা করতে রাজি না হওয়ায় এ বিষয়ে ওই আওয়ামী লীগ নেতাও কিছু করতে পারেননি। সবশেষ ঘটনায় দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর মা ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়েরের পর স্থানীয় এলাকাবাসীর পাশাপাশি ওই আওয়ামী লীগ নেতাও তার শাস্তি দাবি করেছেন।
এদিকে সোমবার তাপসের পরিবারের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে ঘটনাটি সাজানো উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাপসের পরিবার। তাপস ষড়যন্ত্রের শিকার উল্লেখ করা হলেও কারা, কেন এবং কী কারণে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি তাপসের স্ত্রী রেখা সিং এবং ছোট ভাই লিটন কুমার সিং।
জানা গেছে, ফতুল্লা রেলস্টেশন সংলগ্ন এডুকেশনাল কেয়ার নামে তাপস কুমার সিংয়ের একটি কোচিং সেন্টার রয়েছে। ওই কোচিংয়ে ষষ্ঠ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কোচিং করানো হয়। ফতুল্লার সস্তাপুর এলাকার কমর আলী হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী দেড় মাস আগে তাপস সিংয়ের কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন। ছাত্রীর মা অভিযোগ করে বলেন, এসএসসি পরীক্ষাকে সামনে রেখে তিনি তার মেয়েকে ওই কোচিং সেন্টারে ভর্তি করেন। কোচিং সেন্টারের প্রতিটি কক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো থাকায় তিনি নিশ্চিন্তে মেয়েকে ওই কোচিংয়ে দেন। গত ২১শে অক্টোবর সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে মেয়ে তাকে জানায়- সে ওই কোচিংয়ে আর পড়বে না। তাপস স্যারের ব্যবহার তার ভাল লাগে না। এরপর তিনি মেয়েকে জেরা করে ঘটনা সম্পর্কে জেনে থানায় গিয়ে মামলা করলে পরদিন ২২শে অক্টোবর পুলিশ তাপসকে গ্রেপ্তার করে।
ঘটনার শিকার দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী এ প্রতিবেদককে বলেন, ঘটনার দিন সে যথারীতি কোচিংয়ে যায়। কোচিংয়ে সে-ই একমাত্র মানবিক বিভাগের ছাত্রী। বাকিরা বিজ্ঞান এবং ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থী। ঘটনার দিন কোচিং শেষে সব শিক্ষার্থী চলে গেলেও তাকে কোচিংয়ের এক ম্যাডাম বলেন, তুমি দোতলায় গিয়ে তাপস স্যারের কাছে ভূগোল পড়ে এসো। ওই ছাত্রী ম্যাডামকে জানান, ভূগোল ক্লাসতো অন্য ম্যাডাম পড়ান, তিনিতো আজ (ঘটনার দিন) আসেননি। তারপরেও ওই ম্যাডাম বলেন, তুমি দোতলায় যাও তাপস স্যারের কাছে গিয়ে ভুগোল পড়ে এসো। ম্যাডামের কথায় ওই ছাত্রী দোতলার একটি কক্ষে গেলে তাপস ওই শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরে এবং পরে মুখের ভেতরে গেঞ্জি পুরে দিয়ে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ঘটনা ঘটিয়ে ঘটনাটি কাউকে না বলতে শাসিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
ওই ছাত্রীর অভিযোগ ওই ম্যাডাম কোচিংয়ের সিসি টিভি ফুটেজ নিয়ন্ত্রণ করে। যে কক্ষে এ ঘটনা ঘটেছে সেই কক্ষেও সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। তিনি সিসি টিভিতে সব কিছু দেখলেও তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি। এ থেকে তার অনুমান, ঘটনার সঙ্গে ওই ম্যাডামও জড়িত। ফতুল্লা মডেল থানার ওসি শাহ মঞ্জুর কাদের বলেন, তাপস পেশায় একজন শিক্ষক হওয়ায় আমরা প্রাথমিকভাবে সতর্কতার সঙ্গে ঘটনার তদন্ত করেছি। আমরা ওই কোচিংয়ের একজন ছাত্রের সাক্ষ্য নিয়েছি। এছাড়া কোচিংয়ের সামনের এক দোকানদারও জানিয়েছে ঘটনার দিন ওই শিক্ষার্থী সবার শেষে কোচিং থেকে বের হয়। ওসি আরও বলেন, এছাড়াও ওই ছাত্রীকে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানোর আগে থানার একজন মহিলা পুলিশ কনস্টেবল দিয়ে পরীক্ষা করে ধর্ষণের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মামলা গ্রহণ করে তাপসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।