অসভ্যতা, অমানবিকতা

নিউজ ডেস্ক:: অসভ্যতা আর অমানবিকতার আরো বীভৎস রূপ দেখা গেল পরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে। আগের দিনের মবিল সন্ত্রাসের পর গতকাল স্থানে স্থানে গাড়ি চালকদের কান ধরে উঠবস করানো, পথে পথে অ্যাম্বুলেন্সের গতিরোধ করার ঘটনা ঘটেছে। দিনভর যানবাহন না চলায় অনেকটা জিম্মি দশায় ছিল পুরো দেশ। যানবাহন না থাকায় রাজধানীতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। হেঁটে, রিকশা, ভ্যানে করে অনেকে নিজ নিজ গন্তব্যে যান। অ্যাপভিত্তিক রাইড সেবায়ও বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়েছে যাত্রীদের। এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শেষে ফের ৯৬ ঘণ্টার অবরোধের হুমকি দেয়া হয়েছে। আগামী ২১ দিনের মধ্যে আট দফা দাবি না মানলে ফের অবরোধ কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

গতকাল মহাখালী বাস টার্মিনালে মাথার নিচে ব্যাগ রেখে যাত্রী ছাউনিতে শুয়ে ছিলেন শাহরিয়ার ইসলাম।

পাশে যেতেই চোখ খুলে তাকান। তার চোখে-মুখে হতাশা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ইউনিটে দ্বিতীয় শিফটে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ট্রেনে ঢাকায় ফিরেছেন। ঢাকা থেকে যাবেন বাড়িতে বগুড়ার শেরপুরে। কমলাপুর থেকে সকাল ১০টায় মহাখালী এসে হতাশ হয়েছেন। কোনো গাড়িই ছাড়ছে না। শুধু শাহরিয়ার না, এরকম অনেক যাত্রীকে দেখা গেছে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে। যদি গাড়ি ছাড়ে এই আশায় প্রহর গুনছেন তারা। এই কর্মবিরতির শেষ কোথায় শ্রমিকরাও নিশ্চিত কিছু বলতে পারছেন না। রাজধানীতে দূরপাল্লা ও লোকাল গণপরিবহনের দেখা মিলেনি গতকালও। যে কারণে অনেকের ভরসা ছিল অ্যাপসে চালিত বাইক, সিএনজি অটোরিকশা, রিকশা ও ভ্যান। তবে ফকিরাপুল, মতিঝিল, পল্টন, কাকরাইল, প্রেস ক্লাব, বাংলামোটর, মগবাজার, রামপুরা, ফার্মগেট, তেজগাঁও, মহাখালী এলাকায় অনেককেই দেখা গেছে পায়ে হেঁটে পথ চলতে। এই দুর্ভোগের কারণে জরুরি কাজ ছাড়া বাসার বাইরে বের হননি কেউ।

মিরপুর-১১ থেকে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়েও সিএনজি অটোরিকশা পাননি মোহাম্মদ রকি। হাইকোর্টে জরুরি কাজে যাওয়ার কথা। পরে অ্যাপসের মাধ্যমে রাইড শেয়ারিং কোম্পানির একটি বাইক চালককে কল দেন। কিন্তু তিনি কল রিসিভ করে পরে জানিয়ে দেন অ্যাপসে যাবেন না। অ্যাপস চালু না করে বাংলামোটর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারবেন তিনি। ২৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে বাংলামোটরে পৌঁছেন রকি। পরে পায়ে হেঁটে শাহবাগ পর্যন্ত যান। সেখান থেকে রিকশায় দোয়েল চত্বর হয়ে হাইকোর্টে পৌঁছেন। ততক্ষণে সময় ব্যয় হয়েছে অনেক। একইভাবে রোগী নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন অনেকে।

রামপুরা থেকে হাত ভাঙ্গা এক শিশুকে নিয়ে রিকশায় ও পায়ে হেঁটে শেরেবাংলা নগর এলাকার অর্থোপেডিক হাসাপাতালে পৌঁছেন সামিয়া বেগম নামে এক গার্মেন্টকর্মী। সকালে প্রচণ্ড দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন অফিসগামীরা। গণপরিবহন না পেয়ে অ্যাপসে চালিত বাইকের ভরসায় ছিলেন। তাও মিলেনি সবার। রিকশাও পাননি অনেকে। খিলগাঁও থেকে পায়ে হেঁটে মতিঝিলের অফিসে যেতে হয়েছে মমিনুল ইসলামকে। এরকম দৃশ্য দেখা গেছে দিনব্যাপী।

মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিকরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন বাসস্ট্যান্ডজুড়ে। আড্ডা দিচ্ছেন। অনেকে ক্যানভাসারের মজমায় সময় কাটাচ্ছেন। কখনও কখনও দু-একজন করে যাত্রী আসছেন। হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ উপায় না পেয়ে বিভিন্ন বাসের কাউন্টারে বসে আছেন। তাদের চোখে-মুখে বিমর্ষতা। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এরকম দৃশ্যই দেখা গেছে ওই এলাকায়।

দুপুরে বোরকাপরা এক নারীকে দেখা গেছে একটি বাস কাউন্টারের সামনের বেঞ্চে বসে থাকতে। সঙ্গে ১০-১১ বছর বয়সী এক কন্যাশিশু। কথা হয় ওই নারীর সঙ্গে। তার নাম ফাতেমা। গৃহপরিচারিকার কাজ করেন লালমাটিয়া এলাকায়। সেখান থেকেই এসেছেন। উদ্দেশ্য মাকে দেখতে যাবেন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদির আসমিতা গ্রামে। ফাতেমা জানান, তার মা খুব অসুস্থ, যেতেই হবে। গাড়ি যে একদমই চলে না তা জানতেন না তিনি। ভেবেছিলেন দু-একটি গাড়িতো চলতেই পারে। সকাল ৯টা থেকে বাসস্ট্যান্ডে বসে আছেন। শ্রমিকরাও নিশ্চিত কিছু বলতে পারছেন না।

আসকির নামে এক পরিবহন শ্রমিক জানান, কর্মবিরতি চলছে। যেকোনো সময় কর্মবিরতি শেষও হতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত গাড়ি না পেলে ট্রেনে যাবেন বলে জানান ফাতেমা। প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।

বিকাল ৪টায় বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় ১৪ বছরের কিশোর জুবাইদের সঙ্গে। কাঁধে স্কুলব্যাগ জুবাইদ চাকরি করে হাজারীবাগের একটি রেস্টুরেন্টে। ফাতেমার মতো সেও বুঝতে পারেনি গাড়ি একদমই চলছে না। জুবাইদ বলে, এত কঠিন ধর্মঘট বুঝতে পারিনি। নেত্রকোনার কলমাকান্দা নিজেদের বাড়িতে যেতে চেয়েছিল জুবাইদ। গাড়ি না পেয়ে হতাশ হয়ে কিশোর ছেলেটি হাজারীবাগে ফিরছে। তাও কোনো বাস নেই। ফিরতে হবে সিএনজি অটোরিকশায়। সিএনজি অটোরিকশার জন্য অপেক্ষা করছিল জুবাইদ।

বাসস্ট্যান্ডের সামনে পার্কিং করা ১৫-২০টি মোটরসাইকেল। প্রায় সবগুলোই অ্যাপসে ভাড়ায় চালিত। মোটরসাইকেলের যাত্রীরা জানান, অনেকেই এখন অ্যাপসে যাত্রী নিতে চান না। এখন যাত্রী বেশি। অ্যাপসে নিলে লাভ কম। কথা বলে ভাড়া নির্ধারণ করলে বেশি ভাড়া আদায় করা যায়। একইভাবে সিএনজি অটোরিকশার চালকরাও যাত্রীদের কাছ থেকে তুলনামূলক বেশি ভাড়া আদায় করছেন।
এদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, খিলগাঁও, মালিবাগ, মগবাজার, ধানমন্ডি, গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন এলাকায় কোনো বাস চলতে দেখা যায়নি। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে কোনো দূর পাল্লার গাড়িও ছেড়ে যায়নি। বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে পরিবহন শ্রমিকদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

প্রথমদিনের মতো যানবাহনে হামলা ও চালকদের শরীরে মবিল লাগানোর তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। সকালের দিকে কিছু কিছু এলাকায় প্রাইভেট যানবাহনের চালকদের কানে ধরিয়ে উঠবস করানোর কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। পুলিশি বাধায় শেষ পর্যন্ত শ্রমিকরা এসব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকে। তবে গতকালও গণপরিবহন না পেয়ে যাত্রীদের ভোগান্তি ছিল চরমে। সকালে সরজমিন যাত্রাবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী থানা থেকে ১০০ হাত দূরে অবস্থান নেন শ্রমিকরা। দলবেঁধে তারা সেখানে দাঁড়িয়ে প্রাইভেট কার, মাইক্রো, ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চালকদের হেনস্তা করা শুরু করে। এ সময় তারা কিছু কিছু যানবাহনে লাথি-ঘুষি দেয়। কয়েকজন চালককে মবিল লাগিয়ে দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন। মুগদা-মানিকনগর এলাকায় সকালে পরিবহন শ্রমিকরা প্রাইভেট যানবাহনের চালকদের ওপর চওড়া হন। কয়েকজন চালককে কানে ধরে উঠবস করাতেও দেখা গেছে। এর পর থেকে সারাদিন শ্রমিকদের আর কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি।

দুপুরের দিকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে জানা যায় গতকালও কোনো দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। তবে দূরপাল্লার যাত্রীরা সকাল থেকেই টার্মিনালে আসেন। অনেক যাত্রীই বাস না পেয়ে নিরাশ হয়ে ঘরে ফিরেন। আল আমিন নামের এক ব্যবসায়ী গত দুু’দিন ধরে আটকা পড়েছেন ঢাকায়। ব্যবসার কাজে গত শনিবার তিনি ঢাকা এসেছিলেন। তার বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার। মানবজমিনকে তিনি বলেন, শনিবার ঢাকা এসেছিলাম। কাজ শেষ করতে করতে অনেক রাত হয়ে যায়। পরে আর ওইদিন কুমিল্লা যাইনি। রাতের বেলা একটি হোটেলে কাটিয়ে রোববার সকালের দিকে টার্মিনালে আসি। এসে দেখি কোনো বাস নাই। আমার মতো আরো অনেকে দাঁড়িয়ে আছে। কাউন্টারগুলো বন্ধ রয়েছে। কথা বলে তথ্য নেয়ার মতো কোনো মানুষ পাচ্ছিলাম না। পরে জানতে পারি পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট চলছে। আজও একি অবস্থা দেখছি।

হবিগঞ্জের মাধবপুরের যাত্রী নজরুল ইসলামও জানালেন তার সমস্যার কথা। পারিবারিক কাজে যেতে হবে মাধবপুর। সকাল ১০টায় এসেছেন কিন্তু গত দুই ঘণ্টা ধরে একটি বাসের দেখা মেলেনি। আর না গেলেও হবার নয়। তিনি কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের আশপাশের সড়কে দেখা যায়, একুশে পরিবহন, স্টার লাইন, নিউলাইন, এনা পরিবহন, শ্যামলী, মামুন, আল রিয়াদ, ঢাকা এক্সপ্রেস, বলাকা, জননীসহ আরো একাধিক কোম্পানির বাস সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। টার্মিনালের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ বাস শ্রমিকরা বাস পরিষ্কারের কাজ করছেন। পুরাতন চাকা খুলে নতুন চাকা লাগাচ্ছেন।

এদিকে গতকাল অফিস, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি ছিল চরমে। গণপরিবহন না থাকায় অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি। আবার অনেকেই জরুরি কাজে বের হয়ে আবার ফিরে গেছেন বাসায়। সকাল ১০টার দিকে মালিবাগ মোড়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন নুসরাত আরা। তিনি উত্তরার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তিনি বলেন, অনেকক্ষণ ধরে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। একটি বাসও চলাচল করছে না। সিএনজিচালকদের সিগন্যাল দিচ্ছি তারা ৪০০/৫০০ টাকা ভাড়া দাবি করছে। এছাড়া পাঠাও, উবারে রিকুয়েস্ট পাঠাচ্ছি কোনো চালকই তা গ্রহণ করছেন না।

মতিঝিল শাপলা চত্বর এলাকায় দাঁড়িয়ে সকালে বাসের অপেক্ষা করছিলেন মোহাম্মদ আলী। তিনি যাবেন মিরপুরের বিআরটিএতে। বাস না থাকায় অনেকবার পাঠাওকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। পরে অ্যাপস ছাড়া এক চালককে ঠিক করে তিনি মিরপুর যান। ধানমন্ডির ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউল্যাবে) লেখাপড়া করেন আসিফ শাওন। খিলগাঁও থেকে কোনো বাস না পেয়ে তিনি পরে ১৫০ টাকা দিয়ে রিকশা ভাড়া করে ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্য রওনা দেন। শাওন বলেন, বাস নাই এই সুযোগে রিকশাচালকরা সুযোগ পেয়ে গেছে। ৭০/৮০ টাকার ভাড়া তারা ২০০ টাকা চেয়ে বসে আছেন। এছাড়া রাইড শেয়ারিং কোম্পানি পাঠাও-উবারেও আমন্ত্রণ জানিয়ে কোনো লাভ হয়নি।

পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি সংসদে: ধর্মঘটের নামে পরিবহন শ্রমিকরা সারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান। এ বিষয়ে সরকারের পুলিশ প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। তিনি জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দাবি করেন। সোমবার দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনের শেষদিনের বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ দাবি করেন। পরিবহন ধর্মঘটের প্রসঙ্গ তুলে পীর ফজলুর রহমান বলেন, এই সংসদে পাস করা সড়ক পরিবহন আইনের কিছু ধারা পরিবর্তনের দাবিতে গত দুইদিন থেকে পরিবহন শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করছে। এই অবরোধের নামে শ্রমিকদের কেউ কেউ নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে।

বিভিন্ন স্থানে যাত্রী ও চালকদের মুখে পোড়া মবিল মেখে দেয়া হয়েছে। একটি অসুস্থ শিশুকে হাসাপাতালে নেয়ার সময় এম্বুলেন্স আটকে দেওয়ায় শিশুটি মারা গেছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই অবরোধে সারা দেশের মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অবরোধের নামে মানুষের আত্মমর্যাদায় যারা আঘাত করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নীরব রয়েছে। এই ঘটনা আমাদের আহত করেছে। আমি এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সংসদে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দাবি করছি।

রূপগঞ্জে যাত্রীদের ওপর শ্রমিকদের হামলা: আহত ১০
স্টাফ রিপোর্টার, রূপগঞ্জ থেকে জানান, সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের তারাব বিশ্বরোড ও বরপা এলাকায় লেগুনা ও অটোরিকশা যাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। এসময় ১০ যাত্রী আহত হয়।
জানা যায়, শ্রমিক ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে রূপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের তারাব বিশ্বরোড, বরপা, রুপসী, গাউছিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকেই অবস্থান নেয় পরিবহন শ্রমিকরা। তারা স্থানীয় রুটে চলাচলরত লেগুনা, থ্রি হুইলার, ব্যাটারিত চালিত অটোরিকশা, সিএনজিসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচলে বাঁধা দিতে থাকে। সকাল ৯টার দিকে বরপা এলাকায় পরিবহন শ্রমিকরা একটি লেগুনা আটক করে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালায়। এ সময় যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে পরিবহন শ্রমিকরা যাত্রীদের উপর হামলা চালিয়ে আমান উল্লাহ, আনোয়ার, বিল্লাল, সিদ্দিকসহ ৫ যাত্রীকে পিটিয়ে আহত করে। অপরদিকে, মহাসড়কের তারাব বিশ্বরোড এলাকায় পরিবহন শ্রমিকরা অটোরিকশার যাত্রী রেহেনা আক্তার, সালাম, আকবর আলী ও শাকিলসহ আরো ৫ যাত্রীকে গণপরিবহনে উঠার দায়ে প্রহার করে।

লাশের গাড়ি আটকে চালককে মারধর করলো শ্রমিকরা
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, প্রিয়জনের লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন স্বজনরা। একদিকে কান্নার রোল অন্যদিকে রাস্তায় ভোগান্তি। লাশবাহী এম্বুলেন্স থামিয়ে চালককে পিটিয়ে আহত করেছে কিছু শ্রমিক। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার সকাল ১০টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জের আউশকান্দি এলাকায়। মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য নারায়ণ কর্মকার জানান, আমার বড়ভাই বাদল কর্মকার রোববার সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সোমবার সকালে সিলেট থেকে লাশ নিয়ে এম্বুলেন্সযোগে মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর গ্রামে আসার সময় আউশকান্দি এলাকায় পৌঁছালে ৫/৬ জনের একদল শ্রমিক তাদের লাশবাহী এম্বুলেন্স আটক করে। পরে চালককে গাড়ি থেকে নামিয়ে ব্যাপক মারধর করে তারা। এ সময় এম্বুলেন্সে থাকা তাদের স্বজনরা অনুনয়-বিনয় করে চালককে না মারার অনুরোধ করলেও তাদের মন গলেনি। পরে স্থানীয় কিছু লোকের অনুরোধে শ্রমিকরা এম্বুলেন্সটি ছেড়ে দেয়। একটি স্বাধীন দেশে লাশ নিয়ে যেতে দেয়া হয় না- এটা কি ভাবা যায়। আমরা কোন দেশে বাস করি। এভাবে কথাগুলো বলে বিচার দাবি করেন জগদীশপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য নারায়ণ কর্মকার।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *