মাকালকান্দি গণহত্যা দিবস আজ মেলেনি কোন সাহায্য সহযোগিতা যুদ্ধাপরাধিদের বিচার চান স্বজনরা

আজিজুলইসলামসজীব:: আজ ১৮ আগস্ট। মাকালকান্দি গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার প্রত্যন্ত হাওরাঞ্চলের মাকালকান্দি গ্রামে মন্দিরে মনসা পূজা চলাকালীন নির্বিচারে দুই শতাধিক হিন্দু নর-নারীকে হত্যা করেছিল পাক হানাদার বাহিনী। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহতদের প্রত্যেক পরিবারের সদস্যদের নগদ ১ হাজার টাকা এবং একটি করে সনদপত্র দেন। কিš‘ এরপর তারা আর কোনো সাহায্য সহায়তা পাননি।
বানিয়াচং উপজেলার উত্তর-পূর্ব কোণজুড়ে হিন্দু অধ্যুষিত একটি দুর্গম গ্রামের নাম মাকালকান্দি। মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ গ্রামটি ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অন্যতম নিশানা। ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন হবিগঞ্জ সার্কিট হাউসে মহকুমা শান্তি কমিটির সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের এক সভায় বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ থানার হিন্দু প্রধান এলাকায় সশস্ত্র আক্রমণ করার পরিকল্পনা করে তারা।
পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে হত্যাযজ্ঞে যোগ দিয়েছিল সৈয়দ ফজলে হক মোতাওয়াল্লী, বানিয়াচং উপজেলা বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক কনর মিয়া, আব্দুল খালিক, আজমান, ইব্রাহিম শেখ, আতাউরসহ অনেকে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৮ আগস্ট ভোরে ২৫/৩০টি নৌকায় বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রসহ ’স্থানীয় রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে মাকালকান্দি গ্রামে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। জ্বালিয়ে দেয় শত শত ঘরবাড়ি। নারী, পুরুষ, শিশু বাছ বিচার না করে হত্যাযজ্ঞ চালায় তারা। মায়ের কোল থেকে শিশুকে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর হাওরের পানিতে ফেলে দেয়। বেশ কয়েকটি অন্তঃসত্ত্বা নারীকেও হত্যা করে নরপশুরা।
ধ্বংসযজ্ঞের পর বাড়িঘর ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ডায়রিয়া, মহামারি ও অর্ধাহারে মারা যায় শিশু ও নারী-পুরুষ। শিক্ষা ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ এ গ্রামের বাড়িঘর থেকে ধান, স্বর্ণালংকার থেকে শুরু করে ঘরের পিলার পর্যন্ত নিয়ে যায় লুণ্ঠনকারীরা। এ গ্রামে সরকারিভাবে এখনও পর্যন্ত কোনো স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়নি। হত্যাযজ্ঞের হাত থেকে যারা বেঁচে গেছেন তারাও পাননি নূন্যতম সুযোগ-সুবিধা।
ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং ওই গ্রামে হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় নিহত ও আহতদের নাম মুক্তিযুদ্ধাদের তালিকায় যেন না পায়।
ওই গ্রামের মিনতি রানীর কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানীবাহিনী। তিনি বলেন- আমার কুল থেকে আমার সন্তানকে ছিনিয়ে নিলে আছরিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। আমি হাতে পায়ে ধরেও আমার সন্তানকে বাঁচাতে পারি না।
বানিয়াচং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল খালেক বলেন- মাকালকান্দিতে এতগুলো মানুষকে মারা হয়। কিš‘ এখন পর্যন্ত সেখানে কোন স্মৃতিস্তম্ভ করা হয়নি। আমরা চাই দ্রুত সেখানে সরকারি উদ্যোগে একটি স্মৃথিস্তম্ভ করা হোক।
এদিকে, হত্যাযজ্ঞের হাত থেকে যারা বেচে গেছেন তারাও পাননি নূন্যতম সম্মান ও বেচে থাকার কোন সুযোগ-সুবিধা। এদের অনেকেই অর্ধাহারে-অনাহারে দিন যাপন করছে। সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে এদের সাহায্যে কেউ এগিয়ে না আসলেও তাদের একটাই দাবি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হউক।
কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *