সিসিক নির্বাচন ১০ নং ওয়ার্ড বিশুদ্ধ পানি, ডাস্টবিন এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা দুর্বল

সুমন ইসলাম :: সুরমা নদীর তীর ঘেঁষে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ ১০ নম্বর ওয়ার্ড। ঘাসিটুলা, ডহর, কলাপাড়া, ওয়াপদা, হিয়াবরণ, শামীমাবাদ, কানিশাইল ও মজুমদারপাড়া নিয়ে এই জনগুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে আছে কুষ্ঠ হাসপাতাল, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আছে বেসরকারি পর্যায়ে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদরাসা। নৌকার সোনালী দিন ফুরিয়ে গেলেও আছে কয়েকটি খেয়াঘাট।

ঐতিহ্যবাহী বেত শিল্পের একাধিক কারখানা, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নারী জাগরণের অনন্য প্রতিষ্ঠান মঈনুদ্দিন মহিলা কলেজ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডসহ আরো জনগুরুত্বপূর্ণ বহু প্রতিষ্ঠান এবং স্থাপনা রয়েছে এই ওয়ার্ডে। পুরো এলাকা জুড়ে বড় বড় সড়ক। সবগুলো সড়কেই লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া।

তবে স্থানীয় একাধিক ভোটারের অভিযোগ ওয়ার্ডে সমস্যার শেষ নেই। বড় আর সুন্দর সড়ক দেখে বুঝা যাবেনা ওয়ার্ডের ভেতরের শূন্যতা। নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভোটের হিসাব-নিকাশেও উঠে আসছে সেই সমস্যাগুলোর কথা। আর এই নাগরিক সমস্যাকেই এখন বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন সকল বয়েসি ভোটাররা। নতুন এবং পুরাতন প্রার্থীদের মধ্যে কে দূর করতে পারবেন ওয়ার্ডের সমস্যা -এমন ভাবনার খতিয়ান এখন দীর্ঘ হচ্ছে ভোটারের মনে। সিটি কর্পোরেশনের এই ওয়ার্ডে মোট প্রার্থী রয়েছেন ছয়জন। ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ চৌধুরী।

আগামী ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনেও তিনি টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে অপর প্রার্থীরা হলেন, ঘুড়ি প্রতীকে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, ঠেলাগাড়ি প্রতীকে মো. তারেক উদ্দিন তাজ, ট্রাক্টর প্রতীকে মো. মোস্তফা কামাল, ব্যাডমিন্টন প্রতীকে মো. আব্দুল হাকিম, লাটিম প্রতীকে মো. মুজিবুর রহমান। এই ওয়ার্ডে ভোটারের সংখ্যা ১০৪৫২। নারী-পুরুষ মিলিয়ে ভোটার প্রায় সমান। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, খাবার পানি, জলাবদ্ধতা, বিদ্যুতের খুঁটি এলাকার মূল সমস্যা। এবার নির্বাচনে এসব সমস্যার দিকে নজর রয়েছে আমাদের। ড্রেনেজ এবং ডাস্টবিন ব্যবস্থা দুর্বল। আছে মশার উপদ্রপ। সব মিলিয়ে এলাকার সচেতন মানুষ নির্বাচনে প্রতীকের চেয়ে যোগ্য প্রার্থীকেই বেশী গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাদের একটাই কথা- মিষ্টি কথায় ভোটারদের মন আর জয় করতে পারবেন না কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত ভোটাররাই এবারের নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে দেখা দিয়েছেন। আর এসব কারণেই প্রার্থীরা ভোট চাইতে গিয়ে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন। এলাকার উন্নয়নে কে যোগ্য প্রার্থী এমনটাই ভাবছেন সাধারণ ভোটাররা। কেউ বলছেন, এলাকার নানা সমস্যার সমাধান চাই। চাই কানিশাইল থেকে ওয়াপদার বেহাল সড়কের সংস্কার। কেউ বলছেন, জন্মের পর এই এলাকায় কোনোদিন কোনো ডাস্টবিন নির্মাণ হয়নি। যে কারণে প্রতিদিনের ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলতে হয়। এতে করে নদীর সৌন্দর্য এবং প্রবাহমান গতির উপর আঘাত করা হচ্ছে। দূষিত হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ। পাশে সুরমা নদী থাকলেও কানিশাইল এলাকায় কোনো ঘাট নেই। যে কারণে বৃহত্তর এলাকার মানুষ নানা ধরণের উপকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। তারা দৈনিক সিলেটের ডাককে জানান, তাদের এলাকায় গত নির্বাচনের সময় একটি টিউবওয়েল স্থাপন করে দিয়েছিলেন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমেনা বেগম রুমি। এরপর আর কোনো টিউবওয়েল স্থাপন হয়নি। যে কারণে বাসিন্দাদের বিশুদ্ধ পানির পুরনো সংকট রয়েই গেছে। সব মিলিয়ে বিরাজমান সমস্যাগুলো ভোটের হিসাবে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তবে বর্তমান কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ চৌধুরীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার এলাকায় রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো হবে।

পরিকল্পনায় আছে উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থার। জনগণ জায়গা দিলে প্রতিটি ওয়ার্ডে ডাস্টবিন করার পরিকল্পনা আছে বলেও তিনি জানান। তবে এবার নির্বাচিত হলে অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার চিন্তা রয়েছে এই কাউন্সিলরের। এদিকে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ভোটারদের সমস্যা সমাধানে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। পুরনো সমস্যা ছাড়াও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে নতুন নতুন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তারা। কাউন্সিলর প্রার্থী মো. তারেক উদ্দিন তাজ বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে বিগত চব্বিশ বছর ধরে চলছে পানির সমস্যা। আমি নির্বাচিত হলে সেই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করবো। ওয়ার্ডের উন্নয়নে আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। কাউন্সিলর প্রার্থী মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শামিমাবাদ এলাকার প্রায় চারশতাধিক বাসিন্দার কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। নেই আবাসিক পানির ব্যবস্থা।

আমি নির্বাচিত হলে বস্তির উন্নয়নে বয়স্কভাতা, রিকসা প্লেইট, প্রতিবন্ধী ভাতা থেকে যেন কেউ বাদ না পড়ে সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবো। কাউন্সিলর প্রার্থী মো. মোস্তফা কামাল বলেন, একটু বৃষ্টি হলে মোল্লাপাড়া পানিতে ভেসে যায়। আমি নির্বাচিত হলে পুরো ওয়ার্ডকে একটি আদর্শ ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে কাজ করে যাবো। কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল হাকীম বলেন, জলাবদ্ধতা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, বিশুদ্ধ পানিসহ আমার ওয়ার্ডে বিদ্যমান রয়েছে নানা সমস্যা। আমি নির্বাচিত হলে সব সমস্যা সমাধানে কাজ করবো। কাউন্সিলর প্রার্থী মো. মুজিবুর রহমান বলেন, নগরীর মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত আমাদের ওয়ার্ড। অতীতে এই সমস্যার সমাধান হয়নি।

বিশেষ করে পানি এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা এলাকাবাসীর গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওয়ার্ডের বাসিন্দা তরুণ সায়েদ আহমদ জানান, আমাদের এলাকা সমস্যায় জর্জরিত। সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক হলেও আমরা ওয়ার্ডবাসী নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সূত্রঃ দৈনিক সিলেটের ডাক

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *