কবির আল মাহমুদ,স্পেন : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস স্পেনের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় হুয়ান কার্লোস ইউনিভার্সিটি গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে যৌথভাবে একটি সেমিনার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদ এবং ভাষা আন্দোলনের পথিকৃত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই জাতির পিতার নেতৃত্বে শুরু হয় বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রাম, যার চূড়ান্ত পরিণতি পায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের মাধ্যমে। মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভের জন্য প্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশির উদ্যোগকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পূর্ণ স্বীকৃতি আদায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা স্মরণ করে তিনি তার বক্তব্যে বিশ্বে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা ভাষাসমূহ সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদেরকে আরো বেশী কার্যকর ভূমিকা রাখার আহবান জানান।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, পৃথিবীর শতকরা ৪০ ভাগ মানুষের নিজের মাতৃভাষায় শিক্ষা অর্জনের সুযোগ নেই। পৃথিবীর কোন কোন অঞ্চলে এই সংখ্যা আরো অধিক। তিনি আরো বলেন বিশ্বে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন গনগোষ্ঠী বাংলা ভাষায় কথা বলে। এছাড়াও তিনি টেকসই উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ নিশ্চিতকরণে মাতৃভাষার জ্ঞান আরোপের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।
হুয়ান কার্লোস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রখ্যাত অধ্যাপক কার্লোস ইউরিটে সানচেজ সেমিনারে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্বের উপর মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এসময় বহুমাত্রিক ভাষাকে বিশ্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য উল্লেখ করে তিনি ঝুঁকিপূর্ণ ভাষাসমূহ সংরক্ষণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আরো গবেষণার দরকার বলে মনে করেন। এছাড়াও সেমিনারে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রেনা গাফারোভা ও আইন বিভাগের অধ্যাপক খাভিয়ার পোরাস বেলারা বাংলা গুরুত্ব তুলে বক্তব্য দেন।
সেমিনারে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের উপর নির্মিত একটি প্রামান্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। রাষ্ট্রদূত, আমন্ত্রিত অধ্যাপকগণ ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অস্থায়ীভাবে স্থাপিত শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে ভাষা শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী, থিংকট্যাঙ্ক, কূটনৈতিক কোরের সদস্যবৃন্দ, প্রেস ও মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, প্রবাসী বাংলাদেশ কম্যুনিটির সদস্যবৃন্দ ও দূতাবাসের সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে আগত প্রায় ১৫০ জন অতিথিকে দুপুরের খাবারে আপ্যায়ন করা হয়। এছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্য এবং মহান একুশের ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।