পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইমরান খানের অধ্যায় কি শেষ?

সিলেট নিউজ টাইমস্ ডেস্ক: তোশাখানা মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তেহরিক-ই-ইনসাফের চেয়ারম্যান ইমরান খানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ইসলামাবাদের দায়রা আদালত। এ কারণে ইমরান খান আর পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী জুলফিকার আহমদ ভুট্টো।

আদালতের সিদ্ধান্ত এবং গ্রেফতার একইসঙ্গে হয়েছে মনে হলেও তাকে গ্রেফতারের পর দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এই গ্রেফতার ইমরান খানের ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে? এ প্রশ্নের জবাবে দেশটির জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাসুল বখশ রাইস বলেন, আজকের গ্রেফতারে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে। পিটিআই আরও শক্তিশালী হবে এবং ভোটাররা তাদের সঙ্গে আরও সম্পৃক্ত হবেন।

তবে এ ক্ষেত্রে ভিন্নমত সিনিয়র সাংবাদিক ও বিশ্লেষক সালমান ঘানির। তিনি বলছেন, মাত্র দুদিন আগে ইমরান খান এক সাক্ষাৎকারে তার বিরোধী রাজনীতিকদের ‘চোর-ডাকাত’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। এখন আদালতের রায়ের পর তিনি নিজে একই কাতারে এসে দাঁড়িয়েছেন। বিচারিকভাবে তাকে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করা হয়েছে।

তিনি বলছেন, এখন আর ইমরান খান দলের নেতৃত্ব দিতে পারবেন না।

যদিও পাকিস্তানে এর আগেও প্রধানমন্ত্রীদের গ্রেফতার করা হয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও আগামীতে এর ফলে ইমরান খানের রাজনীতির পরিধি আরও সঙ্কুচিত হবে বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক জাইঘাম খান।

তিনি বলেছেন, ইমরান খান এবং পিটিআই অতীতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো একই আইনি জটিলতায় পড়েছে।
ইমরান খান নিজেও এর আগে অন্য রাজনৈতিক দলকে আইনের ফাঁদে ফেলেছেন। এখন সেই একই বিষয় ঘুরে ফিরে আবার তাদের কাছে ফিরে এসেছে।

তিনি মনে করেন, দেশটিতে যখন নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, তখন রাজনীতিতে পিটিআইয়ের জন্য পরিস্থিতি ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে।

এদিকে ইমরান খানের গ্রেফতারের পর এবার তার দলের কর্মীদের ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এর আগে ৯ মে তারিখে যখন ইসলামাবাদের হাইকোর্ট চত্বর থেকে তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন, পিটিআইকর্মী ও সমর্থকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।

তার দুই দিন পর সুপ্রিমকোর্টে ইমরান খানের গ্রেফতার ‘বেআইনি’ ঘোষণার আগ পর্যন্ত ক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকরা লাহোর ক্যান্টনমেন্টসহ বেশ কয়েকটি সামরিক স্থাপনা ও বেসামরিক বহু স্থাপনায় ভাঙচুর চালায় এবং সড়কে টানা বিক্ষোভ করে।

ওই ঘটনার প্রায় তিন মাস পর ইমরান খান যখন দ্বিতীয়বার গ্রেফতার হলেন, তার গ্রেফতার কিংবা গ্রেফতার পরবর্তী কর্মী-সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া দুটোর কোনোটাই আগেরবারের মতো হয়নি।

যদিও এবারেও তিনি গ্রেফতারের আগে রেকর্ড করা এক বক্তব্যে আহ্বান জানিয়েছিলেন যে ‘কেউ ঘরে বসে থাকবেন না’, কিন্তু পিটিআই নেতৃবৃন্দ সবাইকে ‘শান্ত থাকার’ এবং আইন ‘নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যত দিন ইমরান খান জেলে থাকবেন শাহ মাহমুদ কুরেশী কি দলের নেতৃত্ব দেবেন? আর ইমরানের অনুপস্থিতিতে তার দল কি জনগণ ও পিটিআই সমর্থকদের সমর্থন পাবে? হয়তো সামনের দিনে এই দুটি প্রশ্নই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *