মার্তিনেজকে নিয়ে মাশরাফির ‘হৃদয় উজাড় করা’ স্ট্যাটাস

স্পোর্টস ডেস্ক: আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ মাত্র ১১ ঘণ্টার সফরে ঢাকায় এসেছেন। সোমবার ভোরে তাকে বহনকারী ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এর পর সেখান থেকে সরাসরি হোটলে গিয়ে বিশ্রাম নেন এই আর্জেন্টাইন তারকা।

সংক্ষিপ্ত সফরে আসায় তিনি বাংলাদেশের মানুষের আর্জেন্টিনার প্রতি যে উন্মাদনা সেটা প্রত্যক্ষ করতেই পারলেন না। কারণ সময় সংক্ষিপ্ত হওয়ায় সাধারণ ভক্তদের সঙ্গে কোনো ইভেন্টই রাখা হয়নি তার সফরসূচিতে। এ নিয়ে খানিকটা মন খারাপ মার্তিনেজের।

ফান্ডেডনেক্সট নামে একটি আইটি প্রতিষ্ঠান মার্তিনেজকে ঢাকায় আনার ক্ষেত্রে স্পন্সর করে। রাজধানীর প্রগতি সরণিতে এই প্রতিষ্ঠানের অফিস পরিদর্শন করেন লিওনেল মেসির এই সতীর্থ। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন তিনি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। সেখানেই কিছুক্ষণের জন্য মার্তিনেজের সঙ্গে আড্ডা আর গল্পে মেতে উঠেছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজারা।

এরই ফাঁকে মাশরাফির ছেলেমেয়ের সঙ্গে ছবি তোলেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক। তাদের দেন অটোগ্রাফ। সেই ছবি এবং নিজের অনুভূতি জানিয়ে মাশরাফি তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে মার্তিনেজ সম্পর্কে নিজের সব আবেগ যেন একসঙ্গে ঢেলে দিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক এই অধিনায়ক। বলেন, ‘এমি, বাংলাদেশের মাটিতে আপনাকে স্বাগতম।’

মাশরাফির পোস্টটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘এমিকে ভালো লাগার শুরু কোপা আমেরিকা থেকেই, যেখানে সে টাইব্রেকারে দুটি গোল আটকে দিয়ে দলকে জয় এনে দিল। কত বছর পর বড় কোনো শিরোপা জিতল আর্জেন্টিনা! লিওনেল মেসিও পেল দেশের হয়ে প্রথম বড় ট্রফির স্বাদ। স্বাভাবিকভাবেই পাখির চোখে তাকিয়ে ছিলাম বিশ্বকাপের দিকে। কিন্তু সৌদি আরবের সাথে হেরে মনে হয়েছিল, আরেকটি বিশ্বকাপও হয়তো শেষ হবে হতাশায়। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়ানো এবং পরে বিশ্বকাপ জয় দেখতে পারাটা ছিল অনেক দিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের মতো।

সেই জয়ের অন্যতম নায়ক এমির সঙ্গে দেখা হলো আমাদের এই ঢাকায়। খুব অল্প সময়ের জন্য দেখা, কিন্তু দারুণ এক অনুভূতি। বিশ্বকাপ জয়ী দলের গোলকিপার চোখের সামনে! সে তো জানে না, আমার এবং আমার মতো আরও কত কোটি মানুষের কত বছরের অপেক্ষা শেষ হলো, যেদিন তার ওই হাত ধরেই আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয় করল!

আজকে সে ইন্টারভিউয়ের মাঝেই একবার ট্রাউজার উঠিয়ে দেখাল, পায়ের ঠিক সেই জায়গায় একটি ট্যাটু করিয়েছে, বিশ্বকাপ ফাইনালে শেষ বাঁশির ১৮ সেকেন্ড আগে কোলো মুয়ানির শটটি আটকিয়ে দিয়েছিল যে জায়গা দিয়ে। এক সেকেন্ডের জন্য মনে হলো, আসলে বিশ্বকাপটাতো ওখানেই জিতে নিয়েছে।

আজকে আসলে বেশি ভালো লাগছে আমার সন্তানদের জন্য। যখন বললাম, ‘এমি আসছে, তোমাদের কি দেখা করার ইচ্ছা আছে?’ ওরা লাফাচ্ছিল। সবশেষ দুটি দিন ওরা ঠিকমতো ঘুমাতে পারছিল না এমিকে দেখবে বলে। আজকে এমির সঙ্গে দেখা হওয়ার পর বললাম, ‘বাচ্চারা তোমার অটোগ্রাফ নিতে চায়।’ সে এত আন্তরিকতা দেখাল, এক কথায় অসাধারণ। এমনকি সে ছবিও তুলে দিল ওদের সঙ্গে। এখন তারা মহাখুশি, আর ওদের খুশিতে আমিও এখন মহাখুশি।

এমি, আপনাকে স্বাগত এই বাংলার মাটিতে। এখানে আপনাদের অগুনতি ভক্ত আছে, যুগ যুগ ধরে। আশা করি, আপনারও ভালো লাগছে এই মাটিতে পা রেখে।

পাশাপাশি এটাও ভাবি, সত্যি বাংলাদেশ একদিন বিশ্বকাপ ফুটবলে কোয়ালিফাই করবে আর আমরা আমাদের পতাকা নিয়ে মিছিল করব, ইনশাল্লাহ। অনেকের কাছে এখন এটা অবাস্তব মনে হতে পারে। তবে আমি বিশ্বাস করি, কাজটা কঠিন, খুব কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। স্বপ্ন পূরণের সেই দিনটির অপেক্ষায় আছি, ইনশাল্লাহ।’ আবারও বাংলাদেশে আসার বিষয়ে কথা দেন মার্তিনেজ।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *