প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খরচ না করে ভবিষ্যতের জন্য রাখার আহ্বান

নিউজ ডেস্ক:: ভবিষ্যৎ পৃথিবী এবং প্রজন্মের জন্য যুক্তিসঙ্গত ভোগের তাগিদ দেওয়া হয়েছে উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) এক সেমিনারে।বলা হয়েছে- পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় মানুষ এখন যখন ভোগ করে তখন সর্বোচ্চ ভোগের চেষ্টা করে। এটা সেবা, সম্পদ বা দ্রব্য সব ক্ষেত্রেই করে থাকে।লোভে পড়ে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খরচ না করে ভবিষ্যতের জন্য রাখতে বলা হয়েছে।

ফলে পরিবেশ বা আশপাশের কী প্রভাব পড়ল বা পড়ল না- সেটি খেয়াল রাখছে না। এ অবস্থায় সামনে যা পৃথিবীতে আসছে বা ইতোমধেই এসেছে তাদের কথা ভাবা হচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার এখনই উপযুক্ত সময়। সেটি না হলে জলবায়ু পরিবর্তনের এ সময়ে ভয়াবহ ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।

বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সংস্থাটির কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের প্রফেসরিয়াল ফেলো ড. এমএ সাত্তার মণ্ডল। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাজ্যের বার্থ ইউনিভার্সিটির এমিরেটাস প্রফেসর ড. গোফ উড।

মূল প্রবন্ধে গোফ উড তার পরিবারের একটি উদাহরণ তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে ২২৬ বছরের একটি টাইমলাইন দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, আমার বাবা ২০০৫ সালে মারা যান। তার বয়স ছিল ১০০ বছর। তার বাবা মারা যান ৩০ বছর আগে ১০১ বছর বয়সে।  জেনারেল গর্ডন যখন খার্তুমে (১৮৮৫) নিহত হন তখন তিনি প্রায় ১০ বছর বয়সি ছিলেন। এ ঘটনা আমার দাদা ভালো করে মনে রেখেছেন। তাই আমার কাছে ১৮৭৪ সালের খুব সরাসরি রক্তরেখা আছে। আমার একটি ১৬ বছর এবং ১৩ বছর বয়সি দুটি নাতি আছে। এক অর্থে আমার কাছে অর্থবহ এবং নৈতিকভাবে ২২৬ বছরের টাইমলাইন আছে। মানুষের অতীতের অনেক কিছুই বর্তমানকে প্রভাবিত করে।

তিনি বলেন, ধীরে ধীরে দেশগুলোর মধ্যে এবং এর মধ্যে সম্পদ ও রাজনৈতিক ক্ষমতার ঘনত্ব, বায়ু এবং পানি দূষণ, গাছপালা এবং প্রাণীদের জন্য আরও হুমকি তৈরি করছে। বন উজারের উচ্চহার, গবেষণা ও প্রশমনে কম সরকারি ব্যয়, ব্যক্তি প্রতি উচ্চ কার্বন নির্গমনের দিকে বর্তমান বিশ্বের সবকিছুই পরিচালিত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

গোফ উড আরও বলেন, সর্বজনীন আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তার প্রচারে স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন মনোযোগের প্রয়োজন হবে। কারণ অন্যান্য ধরনের বলিদানমূলক আচরণকে প্ররোচিত করার জন্য যেসব বিষয় কাজ করে সেগুলো আর থাকবে না।

সভাপতির বক্তব্যে ড. সাত্তার মণ্ডল বলেন, আজকের উপস্থাপনের মূল বিষয়বস্তু হলো আমরা সব সময় যে আচরণ করি সেগুলো ঠিক নয়।  বিশেষ করে ভোগবাদী ও পুঁজিবাদী সমাজে বর্তমানে ভোগের যেসব সামগ্রী বা সেবা আছে সেগুলো যখন আমরা ভোগ করি সেসময় কখনো কখনো যৌক্তিক আচরণ করি না।  ফলে যেটা হয় আমরা আমাদের বর্তমান ভোগের চাহিদা মেটাবার জন্য অথবা এটাকে আরও উচ্চতর পর্যায়ে নেওয়ার জন্য আমাদের অজান্তেই হয়ত বা আমরা আমাদের ভবির্ষ্যতকে বিপদাপন্ন করে তুলি। এটার কোনো সমাধান তিনিও (গোফ উড) দেওয়ার চেষ্টা করেননি। আমরাও এর কোনো সমাধান পাইনি। কিন্তু একটি আবেদন বারবার এসেছে তিনি ও আজকে এটা পুনরাবৃত্তি করেছেন যে, রাষ্ট্র ও সমাজ এই দুটোকে যদি দেখি তাহলে রাষ্ট্রের ক্ষমতাটা ব্যক্তি সমাজ থেকে অনেক বেশি।

‘রাষ্ট্র এই যুক্তিসঙ্গত আচরণ, যেটাকে আমরা বলি বিধিমালা বা রেগুলেশন করবার ক্ষমতা সেটি রাষ্ট্র রাখে। রাষ্ট্র হচ্ছে আবার সমাজেরই একটি প্রতিফলন। রাষ্ট্র ও সবাই মিলে যত যুক্তিসঙ্গত আচরণ করবে অন্তত এটুকু মনে রেখে যে আমার কল্যাণ নির্ভর করছে শেষ বিচারে অন্যের কল্যাণের ওপর। এরকম হলে চলা যাবে না।  প্রফেসর উড এটাই বলেছেন আমরা যুক্তিসঙ্গতভাবে ভোগবাদি সমাজে ভোগ করব। তা পারস্পারিক সমঝোতার ভিত্তিতে হলে আরও ভালো হবে। এটি আমাদের জানতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, জলবায়ুগত পরিবর্তন হয়েছে মানুষের আচরণগত। যেমন- আমাদের বন উজাড় করে ফেলেছি। আমাদের কার্বন গ্যাস নিঃসরণ বাড়ছে। এসব কিছু করি আমাদের ভোগবাদী সমাজের কারণে। এটা কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট প্যানেল কাজ করছে। এক্ষেত্রে পলিসি ভালো থাকে কিন্তু কাজ বাস্তবে দেখা যায় না।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *