আ.লীগের সম্মেলন ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা

নিউজ ডেস্ক::  আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন ঘিরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ-র‌্যাব-ডিবি, সাদা পোশাকে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান নিয়েছেন। প্রতিটি প্রবেশপথে আর্চওয়ের মাধ্যমে তল্লাশি চালিয়ে নেতাকর্মী ও মানুষকে ভেতরে প্রবেশ করানো হবে। 

শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনস্থল পরিদর্শন করেছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ও র‌্যাব মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ (আইইবি) সংলগ্ন গেট অথবা শিখা চিরন্তন গেট দিয়ে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে আমন্ত্রিত অতিথি, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ-সদস্য এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের। এছাড়া এ দুই গেট দিয়ে প্রবেশ করবেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য, মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকও।

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সব কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাংলা একাডেমি, রমনা কালীমন্দির, টিএসসি ও চারুকলা অনুষদসংলগ্ন গেট দিয়ে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে।

শুক্রবার সকালে পরিদর্শন শেষে ডিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, সম্মেলনের নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে আমাদের ফোর্স ডিপ্লয়মেন্ট করেছি। আমাদের এসবি ও র‌্যাবসহ সবাই মিলে এই ভেন্যুতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখেছি। সব গেটে আর্চওয়ে ও সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এই সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগদান করবেন। প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। এর আগে অনেকবার তার জীবননাশের চেষ্টা হয়েছে। আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি বেঁচে গেছেন। এজন্য আমরা তার নিরাপত্তাকে সবসময়ই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে, ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে কিনা- এসব পর্যবেক্ষণ করছি।

তিনি বলেন, ডগ স্কোয়াডের মাধ্যমে চারদিকে সুইপিং, ম্যানুয়াল সুইপিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। একই সঙ্গে সাদা পোশাকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এক কথায় আমরা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখেছি। নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো ধরনের হুমকি আছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, বিশ্বে যত বড় রাজনৈতিক নেতা আছেন তারমধ্যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা বারবার তার জীবননাশের চেষ্টা করেছে। অনেক প্রমাণ আপনাদের কাছে আছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানোসহ সব খুঁটিনাটি বিষয় মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজিয়েছি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, দুই জঙ্গি ছিনতাই, নতুন জঙ্গি সংগঠনের উত্থানে সুনির্দিষ্ট কোনো থ্রেট আছে বলে মনে করি না। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চলছে। ওই জঙ্গিদের বেশ কয়েকজন সহযোগী এবং অন্য গ্রুপের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। বাকি জঙ্গিদেরও আমরা নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করতে পেরেছি। যতবারই মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছে আমরা ততবারই জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। ভবিষ্যতেও সক্ষম হব।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুজবের বিষয়ে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুজব মনিটরিং চলছে। আশা করব সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়িয়েও সমাজে কোনো অস্থিরতা তৈরি করতে পারবে না।

 

এদিন দুপুরে নিরাপত্তা ভেন্যু পরিদর্শন শেষে র‌্যাব মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সম্মেলনস্থলের বিভিন্ন পয়েন্টে র‌্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স, প্যাট্রোল পার্টি থাকবে। ডগ স্কোয়াডের মাধ্যমে সুইপিং করা হবে। বোম্ব ডিসপোজাল টিম, সাদা পোশাকে সদস্যরা মোতায়েনসহ আমাদের কমান্ডো টিম প্রস্তুত রয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য এবং সম্মেলনের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য র‌্যাব সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে। তিনি বলেন, বাইরে থেকে যাতে কোনো অপশক্তি এসে ঝামেলা করতে না পারে- এটাকে মাথায় রেখেই আমাদের নিরাপত্তা পরিকল্পনা করা।

তিনি বলেন, এখানে যারা আসবে তারা আমন্ত্রিত, সবাইকে কার্ড দেওয়া হয়েছে। কার্ড যাচাইয়ের কাজটা করবে মূলত এসবির লোকেরা। আর আমাদের যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে, আমাদের কাজ হচ্ছে আগতদের সুইপ করা।

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করলে কোনো অপশক্তিই কিছু করবে পারবে না। দেশে চলমান রাজনৈতিক উত্তাপ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব ডিজি বলেন, রাজনীতিতে সরকারি দল থাকবে, বিরোধী দল থাকবে। এটাকে উত্তাপ বলে মনে হয় না। রাজনীতির স্বাভাবিক গতি বলে মনে করি। এটা হবেই, যেহেতু সামনে নির্বাচন। তবে এটাকে কেন্দ্র করে অন্য কোনো শক্তি কিছু করতে পারবে বলে আমি মনে করি না।

দুই জঙ্গি পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব ডিজি বলেন, আমরা আত্মসমালোচনায় বিশ্বাস করি। আমি অবশ্যই আমার দুর্বলতা থাকলে স্বীকার করব। দুই জঙ্গি পালিয়ে গেছে, এটা আমাদের ব্যর্থতা। তাদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছি।

বন্ধ থাকবে যেসব সড়ক: আওয়ামী লীগের সম্মেলন কেন্দ্র করে শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশে বেশকিছু সড়কে বন্ধ থাকবে যান চলাচল। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা ট্রাফিক বিভাগ থেকে শুক্রবার এ তথ্য জানানো হয়েছে। ট্রাফিক বিভাগ জানায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশস্থলে ঢুকতে ১১টি পয়েন্টে সড়কে বন্ধ রাখা হবে যান চলাচল।

কাঁটাবন ক্রসিং, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং, কাকরাইল ক্রসিং, কাকরাইল চার্চ ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার, ভাস্কর্য ক্রসিং, উপাচার্য ভবন ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ক্রসিং, জগন্নাথ হল ক্রসিংয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকবে।

গাড়ি পার্কিং: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হল মাঠ (ভিআইপি), মল চত্বর, পলাশী ক্রসিং হতে ভাস্কর্য ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে, নীলক্ষেত ক্রসিং হতে পলাশী ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে, ফুলার রোড রাস্তার দুই পাশে, দোয়েল চত্বর ক্রসিং হতে শহিদুল্লাহ হল ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে, সবজি বাগান হতে নেভাল গ্যাপ পর্যন্ত, সুগন্ধা থেকে অফিসার্স ক্রসিং পর্যন্ত, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল গলি, নেভাল গেট এলাকা, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বিপরীত পাশে, দিলকুশা ও মতিঝিল এলাকায় রাস্তার দুই পাশে গাড়ি পার্কিং করা যাবে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *