ডেঙ্গিতে মৃত্যু অর্ধশতাধিক ছাড়াল

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৯২ জন, ঢাকার বাইরে ৩৩ জন। এ নিয়ে বর্তমানে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট এক হাজার ৫১৪ জন চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৫০টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক হাজার ১৭৪ জন। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩৪০ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরে এক জানুয়ারি থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন সর্বমোট ১৩ হাজার জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ২৩ দিনে। এ সময় ছয় হাজার ৮১৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া আগস্টে তিন হাজার ৫২১ জন, জুলাই মাসে এক হাজার ৫৭১ জন ভর্তি হয়েছিলেন। জুনে ডেঙ্গিতে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। আগস্টে ১১ জন এবং চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ২৩ দিনে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে আশঙ্কাজনক হারে ডেঙ্গি রোগী বাড়তে থাকায় নগরীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছে ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রতিনিধি দল। ছয় দিনের পরিদর্শনে নগরীর পাঁচটি এলাকা চিহ্নিত করেছে দলটি। এসব এলাকা ডেঙ্গি প্রাদুর্ভাবের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। চার সদস্যের দলটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা পেয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) জানিয়েছে প্রতিনিধি দলটি।

চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আবুল হাশেম সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত শনিবার আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দল নগরীতে পরিদর্শনে আসে। দলটি মৌখিকভাবে আমাদের পাঁচটি স্পট দিয়েছে। এগুলো হলো-আগ্রাবাদ, ডবলমুরিং, হালিশহর, পাহাড়তলী ও বহদ্দারহাটের বাস টার্মিনাল এলাকা। এসব স্পটে তারা সবচেয়ে বেশি এডিসের লার্ভা পেয়েছে। এজন্য স্পটগুলোতে ডেঙ্গির ঝুঁকি বেশি বলে আমাদের জানিয়েছেন।’

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ২৫ ডেঙ্গি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে উপজেলা ও নগরীর প্রাইভেট হাসপাতালে ১০ জন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ১৩ জন ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রফিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে দুজন।

বিআইটিআইডি হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘চট্টগ্রামে ডেঙ্গি রোগী প্রকট আকার ধারণ করছে। গত দুই মাসে আমাদের হাসপাতালে ৬৭ জন ডেঙ্গি রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে গত আগস্ট মাসে ২০ জন ভর্তি হন। বাকিরা চলতি মাসে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে ১০ জন রোগী চিকিৎসাধীন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগের ডেঙ্গি রোগীর রক্তক্ষরণ দেখিনি। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে যেসব রোগী ভর্তি হচ্ছে তাদের মধ্যে প্রায় রোগীর মাড়ি ও চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এ ছাড়া অধিকাংশ রোগীর ব্লাড প্রেসার কম পাওয়া যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোনো ডেঙ্গি রোগীর মৃত্যু হয়নি।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, চলতি বছর হাসপাতালে ২১৩ জন ডেঙ্গি রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে চলতি মাসে ভর্তি হয়েছেন ১৪৪ জন। এ মাসেই মারা গেছেন চারজন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে ৩৬ জন রোগী চিকিৎসাধীন। তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালেও বাড়ছে ডেঙ্গি রোগী। ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত এখানে ৪৭ জন ডেঙ্গি রোগী ভর্তি হয়েছেন। তিন দিন আগে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যুও হয়েছে।

রামেক হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের বেশির ভাগই পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর থেকে আসা। ২০ সেপ্টেম্বর বিকালে মারা যাওয়া যুবক রাকিবুল ইসলামও (২০) ঈশ্বরদী উপজেলার বাসিন্দা। মাসখানেক আগে থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে কাজ করছিলেন তিনি। হাসপাতালে নেওয়ার দুদিন পর মারা যান রাকিবুল।

রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকালে হাসপাতালে পাবনা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার মোট ২২ জন ডেঙ্গি রোগী ভর্তি ছিলেন। এদের মধ্যে ১৬ জনের পাবনায় থাকার রেকর্ড আছে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার আগে। এই ১৬ জনের মধ্যে সাতজন ছিলেন পাবনার রূপপুরেও। অন্য ছয়জনের মধ্যে পাঁচজন এসেছেন ঢাকা থেকে।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, হাসপাতালে সবসময় ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি রোগী থাকেন। তাই হঠাৎ করে বিশেষ কোনো রোগী বেড়ে গেলে চিকিৎসা দিতে সমস্যায় পড়তে হয়। তার পরও ডেঙ্গি রোগীদের বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সময়মতো হাসপাতালে এলে চিকিৎসায় সমস্যা হবে না।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *