নিউমার্কেটে সংঘর্ষ: নাহিদকে বেধড়ক পেটায় সিয়াম, কোপায় ইমন

ওই ঘটনায় আরও তিন আসামিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে র‌্যাব জানিয়েছে, সংঘর্ষের সময় ডেলিভারিম্যান নাহিদকে রড দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করেছিল ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান সিয়াম। এর পর নাহিদকে অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে ইমন। দুজনের মধ্যে সিয়াম ধরা পড়লেও ইমন এখনও পলাতক।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন গ্রেফতার ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ওই সময় দুপুর দেড়টা। পরবর্তী সময় পাশে থাকা সিয়াম রড দিয়ে নাহিদকে বেধড়ক পেটায়। এর পর চলে আসে ইমন। সে এসে নাহিদকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে চলে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কক্সবাজার ও শরীয়তপুরে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তারা হলেন মোয়াজ্জেম হোসেন সজীব (২৩), মেহেদি হাসান বাপ্পী (২১) ও মাহমুদুল হাসান সিয়াম (২১)। পরের দুজন সংঘর্ষের সূত্রপাত করেন। প্রথমজন হত্যাকাণ্ডে জড়িত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সেদিনের সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডে তাদের প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে।

র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মূলত গত ১৮ এপ্রিল নিউমার্কেটে পাশাপাশি দুটি ফাস্টফুডের দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে ইফতারি বিক্রয়ের টেবিল বসানো নিয়ে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে দোকানের কর্মচারী সজীব ও বাপ্পি ফোন করে কিছু দুষ্কৃতকারীদের আসতে বলেন। দুষ্কৃতকারীরা ওই স্থানে পৌঁছলে পুনরায় ওই দুই দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে মারামারি হয়।

মারামারি কেন্দ্র করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল কৌশলে গুজব ছড়িয়ে ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করে। এতে নিউমার্কেট এলাকায় ছাত্র ও কর্মচারীদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ঘটনাটি স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিবিধ তথ্য ও কন্টেন্ট ছড়িয়ে ইন্ধন দেওয়ার ফলে উত্তেজনা চরম সহিংসতার রূপ নেয়।

সংঘর্ষে নাহিদ (১৮) নামে একজন কুরিয়ার সার্ভিসকর্মী ও মুরসালিন (২৬) গুরুতর আহত হন এবং চিকিৎসাধীন মারা যান। বিষয়টি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্বসহকারে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ফলে র্যাব জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গতরাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-২ ও র‌্যাব ৩-এর যৌথ অভিযানে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তিরা সহিংসতা এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে দেন।

র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, গ্রেফতার বাপ্পি ও সজীব নিউমার্কেটের ওয়েলকাম ফাস্টফুডের কর্মচারী ছিল। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় যে, রাজধানীর নিউমার্কেটের ক্যাপিটাল ফাস্টফুড এবং ওয়েলকাম ফাস্টফুডের কর্মচারীদের মধ্যে গত ১৮ এপ্রিল ইফতার বিক্রির টেবিল বসানো নিয়ে বাকবিতণ্ডার সূত্রপাত হয়। পরে তারা পরিচিত কিছু দুষ্কৃতকারীকে মোবাইলে ফোন দিয়ে ডেকে আনেন। রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে ১০-১৫ জন দুষ্কৃতকারী এসে ক্যাপিটাল ফাস্টফুড দোকান কর্মচারীদের মারধর করে। এ সময় অন্যান্য দোকানের কর্মচারী আক্রমণ প্রতিহতের চেষ্টা চালায়। দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হন। পরে ব্যাপক আকারে সংঘর্ষ হয়।

ঘটনার পর বাপ্পি ও সজীব কক্সবাজারে আত্মগোপন করেন এবং নিজের পরিচয় লুকানোর জন্য তারা লম্বা চুল কেটে ছোট করে এবং কক্সবাজারের আবাসিক হোটেলে চাকরির চেষ্টা চালায়।

সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, গ্রেফতার মাহমুদুল হাসান সিয়াম সংঘর্ষের একপর্যায়ে নাহিদকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। গুরুতর আহতাবস্থায় নাহিদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন নাহিদ মৃত্যুবরণ করেন। ঘটনার পর সিয়াম গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান।

গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানায় র‌্যাব।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *