১৯৩৭ সালের ৮ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া রফিকুল হকের গ্রামের বাড়ি রংপুরের কামালকাচনায়। তার দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে দেশের বাইরে থাকেন।
সত্তরের দশকে গড়া শিশু কিশোরদের সংগঠন ‘চাঁদের হাটে’র প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক দাদুভাই। তার আগে তার পরিকল্পনায় এবং তার তত্ত্বাবধানে দৈনিক পূর্বদেশে ‘চাঁদের হাট’ নামে ছোটদের একটি পাতা বের হত। তখন থেকে তিনি ‘দাদু ভাই’ নামে পরিচিতি পান। পরেই ১৯৭৪ সালে ‘চাঁদের হাট’ নামে শিশু সংগঠন গড়ে তুলেন।
১৯৭২ সাল দেশে প্রত্যাবর্তনের পর চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু লন্ডন যান। তার দেশে ফিরে আসা উপলক্ষে সে সময়ের বহুল প্রচারিত দৈনিক ‘পূর্বদেশ’ একটি বিশেষ সংখ্যা বের করে। ওই পত্রিকার প্রথম পাতায় বঙ্গবন্ধুর ছবির সাথে ‘ঘরে ফিরা আইসো বন্ধু’ শিরোনামে একটি কবিতা ছাপা হয়, যা খুবই আলোচিত হয়।
বাংলা শিশু সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য রফিকুল হক দাদুভাই ২০০৯ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার, একই বছর বাংলাদেশ শিশু একাডেমী পুরস্কার, অগ্রনী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, চন্দ্রাবতী একাডেমি পুরস্কার, নিখিল ভারত শিশুসাহিত্য পুরস্কারসহ দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেন।
তিনি যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক ছাড়াও ওই প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে ছিলেন। নব্বই দশকে প্রতিষ্ঠিত দৈনিক রুপালীর নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে দৈনিক জনতার নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। কাজ করেছেন দৈনিক লাল সবুজ, আজাদ, বাংলাদেশ অবজারভারে।
সত্তর দশকে শিশু কিশোরদের জনপ্রিয় ‘কিশোর বাংলা’ নামের সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন তিনি।
আশির দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য ‘নিধুয়া পাথার কান্দে’ নামে একটি নাটক লিখছিলেন তিনি, যা পরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ‘বর্গি এলো দেশে’ সহ তার প্রকাশিত বাইয়ের সংখ্যা ৭টি।
দাদুভাইয়ের আশিতম জন্মদিন উপলক্ষে এক লেখায় ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন বলেছেন, “আজকের বাংলাদেশে আমাদের শিল্প- সাহিত্য- সাংবাদিকতার ভূবনটি আলোকিত করে রেখেছেন যারা তাদের অনেকেই একদা এই রফিকুল হক দাদু ভাইয়ের প্রীতির বলয়ে আবদ্ধ ছিলেন দীর্ঘ দিবস আর দীর্ঘ রজনী।”
সেমসয় তরুণ লেখক ইমদাদুল হক মিলনের প্রথম গল্পটি এই দাদুভাইয়ের হাত দিয়ে দৈনিক পূর্বদেশের চাঁদের হাটের পাতায় ছাপা হয়েছিল বলে রিটন তার লেখায় উল্লেখ করেছেন।
ইমদাদুল হক মিলন দাদু ভাইয়ের জন্ম দিনের এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, চিরনবীণ বিস্ময়কর দাদু ভাই যদি না থাকত, তাহলে ইমদাদুল হক মিলন নামে কোন লেখকের জন্ম হত না।
তার হাতদিয়ে গড়া ‘চাঁদের হাট’ অনেক আলোকস্তম্ভ তৈরি করেছে বলেছিলেন ইমদাদুল হক মিলন।
বুড়িয়ে গেছে বুড়িগঙ্গা
বাড়ছে বহর ঢাকার
চলছে নদী বাটোয়ারা
খেলটা অঢেল টাকার।
এই কবিতা পংক্তি উল্লেখ করে এক লেখায় লেখক আনিসুল হক বলেছেন, “তার ছড়ার ছন্দ নির্ভুল, মিল অপূর্ব, অনুপ্রাস জাদুকরি, শব্দের ব্যবহার লাগসই, উপমাচিত্রকল্প কিংবা কল্পনার ব্যবহার অপরুপ। এই কবিতা একটা বার্তা একটা ম্যাসেজ।”