ভূমি আত্মসাৎ করতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে এভারগ্রীন হাউজিং

দেশের বিভিন্ন জায়গায় ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে ভূমি আত্মসাৎ করতে উঠে পড়ে লেগেছে এভারগ্রীন হাউজিং কর্তপক্ষ। কোটি টাকার সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হাউজিং প্রকল্প তৈরি করার অভিযোগ দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়ায় তারা আমাকে ও আমার সন্তানদের বিরুদ্ধে মামলা হামলা করে জুলুম করছে। শাহ্ নুর আহমদ ও তাঁর ছেলে এবং তার সহযোগীরা প্রতিনিয়ত রাস্তা-ঘাটে আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এরপর থেকেই তারা একটি চক্রের মাধ্যমে আদম ব্যবসার মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে।

রবিবার দুপুরে (২১ মার্চ) সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন সিলেট নগরের ২৪ নং ওয়ার্ডের মীরাপাড়াস্থ মরহুম আব্দুল গফুরের ছেলে রুহুল আমিন।


লিখিত বক্তব্যে তিনি আমি এবং আমার ছেলেদের কোনো ধরনের ট্রাভেল ব্যবসা নাই। বিদেশ মানুষ পাঠনোর কোনো কাজে আমরা জড়িত নই। তারপরও মাদারীপুরের ডাসার থানায় আমাকে ও শরীয়তপুরের জাজিরা থানায় আমার ছেলেকে আদম ব্যবসার মিথ্যা মামলায় আমাদের জড়ানো হয়েছে। এলাকার সন্ত্রাসীদের মূল হোতা এভারগ্রীন হাউজিং এর চেয়ারম্যান জামাত-শিবিরের অর্থের যোগানদাতা জামাল মো. নূর উরফে পেছন মিয়া ও তার একান্ত সহযোগী তার ভাগনা ৫নং টুলটিকর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হোসেন এবং তাঁর আরেক সহযোগী বিয়ানীবাজারের উত্তরবাগ এলাকার মৃত তৈয়ব আলী খানের ছেলে শাহ্ নুর আহমদ ও তার ছেলে এবং তার সহযোগীরা আমার স্বাভাবিক জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে।

সংবাদ সম্মেলনে রুহুল আমীন আরও বলেন, ‘সদর উপজেলার দেবপুর মৌজার জে.এল.নং-৯৬, ছাপা ৭৭১নং খতিয়ানের ১৪৩৭ দাগে ১১৫ শতক জায়গার মালিক ছিলেন আমার দাদা গনি মিয়া। পরবর্তীতে পরে আমি ও আমার স্ত্রী পারভীন বেগম উক্ত জায়গা বিভিন্ন দলিলে খরিদ করে নামজারী ও মাঠ ফরসা নিয়া ভোগ দখল করিয়া আসছি। আমার মৌরসী ও খরিদা স্বত্বের ১৪৩৭ দাগের সংলগ্ন এভারগ্রীণ আবাসিক প্রকল্প গড়ে উঠেছে। যা দেবপুর মৌজায় এই আবাসন প্রকল্পের নিজস্ব ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা আমার ১৪৩৭ দাগে জোরপূর্বক দখল নেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।


এদিকে দেবপুর মৌজায় বিভিন্ন দাগ নিয়ে তাদের সাথে দেওয়ানি মামলা চলছে। তারা বিভিন্ন সময় উক্ত ভূমিতে কাম কাজ ও বাসাবাড়ী বানানোর পায়তারা করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালায়। সন্ত্রাসীদের মূল হোতা ও হাউজিং এর মালিক আব্দুর রব, আব্দুর ছালাম গং এবং চেয়ারম্যান জামাত-শিবিরের অর্থ দাতা জামাল উরফে পেছন মিয়া ও তার ছেলে আদেল এবং মৃত ময়নুদ্দিন এর ছেলে আবুল হাসান, মৃত আফতাব মিয়ার ছেলে সেলিম আহমদ, মৃত দুদু মিয়ার ছেলে মোস্তাক আহমদ, মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে তারেক আহমদ, মৃত লুদু মিয়ার  ছেলে শাহিন আহমদ, মৃত আমিন মিয়ার ছেলে মাহবুব আমিন, সাইস্তা মিয়ার ছেলে শিপলু মিয়া, সিরাজ তালুকদারে ছেলে সেলিম আহমদ, শাহ নুর আহমদ খানের ছেলে ছাদেক খান গং রা আমকে বিভিন্নভাবে হয়রানী করছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘আমার জায়গা দখল নিতে তারা প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে আমার এবং আমার তিন ছেলের বিরুদ্ধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালত, সিলেটে ১৩২/২০২০ নং মামালা দায়ের করে জামাল মোহাম্মদ নুর উরফে পেছন। যা পরবর্তীতে (২৬ জানুয়ারি ২০২১ সালে সিলেট ১ম আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আবারও আমার তিন ছেলেসহ আমাকে শাহপরাণ (র.) থানায় মিথ্যা ঘটনায় ১২৮ নং এফআইআর দায়ের করে। যা বর্তমানে ননজিআর ২০/২০২০ নং মামলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন আছে।

রুহুল আমীন বলেন, এসব অপকর্মের মুল শেল্টারদাতা হলেন জামাল উরফে পেছনের ভাগনা চেয়ারম্যান আলী হোসেন ও আপন ভাতিজা মেম্বার মাহবুব আমীন। এই প্রভাবে আমাদের বিভিন্নভাবে জোরেবলে জায়গা নেওয়ার পায়তারা করে এবং বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় সাক্ষী দিয়া জেল খাটানোর চেষ্টা করে আসছে। এমনকি তারা আমার মৌরসী ও রায়-ডিক্রির জায়গার উপর লোলুপ দৃষ্টি ফেলেছে।’

তিনি বলেন- ‘হাউজিং এর দালালরা আমার ১৪৩৭ দাগে ৪৪ পয়েন্ট জমি নামজারী করে নেয়। পরবর্তীতে সহকারী কমিশনার (ভূমি), সদর, সিলেটকে ভুল তথ্য দিয়ে ৪৪ পয়েন্টের বদলে ১৬ শতক নামজারী করায়। স্বত্ব ৬০/২০১৫ ইং নং মোকদ্দমায় উক্ত জাল নামজারী নিয়া দরখাস্ত দাখিল করি। উক্ত মামলা বর্তমানে বিচারাধীন আছে। এভারগ্রীণ প্রকল্প সরকারের অনেক ভূমি আত্মসাৎ করে রেখেছে।’

রুহুল আমীন জানান- ‘আলী হোসেন চেয়ারম্যান পড়ালেখা করা অবস্থায় শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এখন সে লোক দেখানো আওয়ামী লীগ নেতা। আওয়ামী লীগের প্রভাবে অনেক হয়রানীমূলক কাজ করছে। সাধারণ মানুষ তার ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না। এতে সরকারের কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়। এই বিষয় নিয়ে ১২ মে ২০১৪ তারিখে সহকারে রেজিস্টারি, জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রেরণ করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন চেয়ারম্যান ও জেলা সাব-রেজিস্টার কার্যালয় অভিযোগ করা হলেও এতে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ কারণে তারা আমার ও আমার পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়।’

তিনি বলেন- গত ২০২১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মাদারীপুর জেলার ডাঁসার কালকিনী থানায় মোহাম্মদ সহিদ সরদার নামের ব্যক্তি দিয়ে আদম ব্যবসার মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এবং আমার ছেলের বিরুদ্ধে শরিয়তপুর জেলার জাজিরা থানায় ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি পুতুল আক্তার নামে এক মহিলা দিয়ে আদম ব্যবসার মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানী করছে। এবং দেশের আরো বিভিন্ন জেলা থেকে মামলা দিয়ে আমাকে ও আমার ছেলেদের হয়রানী করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো এসব মিথ্যা মামলায় আমি ও আমার ছেলেরা হাজিরা দিতে গেলে তাদের গুন্ডা বাহিনী দিয়ে আমাকে ও আমার ছেলেদের হত্যা ও গুম করা। তাই এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *