পিতার সম্পত্তির অংশ চাওয়ায় মামলায় শিকার বিল্লাল হোসেন

নিজের পিতার রেখে যাওয়া বাসা-বাড়ি ও দোকানকোঠাসহ ৩৪ শতক জায়গা সম্পত্তির অংশ চাওয়ায় এবং স্বত্ব বাটোয়ারা মামলা করা কারণে আপন মা ও ভাইদের ষড়যন্ত্রে অতীষ্ট সিলেট নগরীর বাদামবাগিচা সেতুবন্ধন ৫৫/১ নং বাসার মৃত রাজা মিয়ার ছেলে মো. বিল্লাল হোসেন।

তার দাবি, মা ও ভাই-বোনদের কয়েকজন সম্পত্তির লোভে অন্ধ। আদালতে স্বত্ব বাটোয়ারা মামলা দায়েরের পর থেকে তারা একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে চলেছেন। আদালত থেকে শুরু করে পুলিশ কোথাও বাকি রাখেনি তারা। মিথ্যা অভিযোগে একাধিক মামলা দায়ের করেছে। প্রাণে মারার উদ্দেশ্যে একাধিকবার হামলার ঘটনাও ঘটিয়েছে। এমতাবস্থায় জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটছে তার।

মঙ্গলবার বিকেলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বিল্লাল হোসেন এমন দাবি করেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, ‘পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তির জন্য মা ও ভাই ইলাল তার সহযোগীদের নিয়ে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। সম্পত্তির লোভে গর্ভধারিণী মা রানী বেগম আমাকে ও আমাকে সমর্থনকারী ভাই-বোনদের আসামি করে থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ সদস্যরা এসব বিষয় তদন্ত করছেন। এর আগেও এরকম তারা মামলা দায়ের করেছিল বিভিন্ন সময়ে। মামলায় আমিসহ আমার ভাইয়েরা আদালত থেকে খারিজ পেয়েছি। একটিতে জামিনে রয়েছি। তারা আদালতে সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করতে পারেনি। এরপর তারা ব্যর্থ হয়ে প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে। সর্বশেষ আমার ছোটভাই ইলাল গত ৯ জুলাই মিথ্যা তথ্য দিয়ে একটি অনলাইন পত্রিকায় কাল্পনিক ঘটনা দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করিয়েছে। যাতে তারা উল্লেখ করেছে আমি নাকি আমার মা’কে মারধোর করেছি। এ বিষয় সংযুক্ত করে তারা থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছে। অথচ সেদিন রাতের ঘটনা ছিল পুরোপুরি উল্টো। রাতে ইলাল আহমদ আমাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রাণে মারার উদ্দেশ্যে নিজে হামলা চালিয়েছে যার সিসিক্যামেরা ফুটেজ আমার কাছে রয়েছে। আমি আত্মরক্ষার্থে নিজের ঘরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেই। সে বাসার দরজাতেও ধাক্কাধাক্কি করেছে। আমি ভয়ে ও আতঙ্কে ঘর থেকে বের হইনি। পরে জরুরি সেবা নাম্বার ৯৯৯ এ ফোন করলে পুলিশ এসে আমাকে ঘর থেকে উদ্ধার করেন।
পুলিশ এসে আমাকে যখন বাসা থেকে উদ্ধার করে করে তখন আমার মা রানী বেগম ও ভাই ইলাল নিজের হামলার ঘটনাকে আড়াল করতে কল্পকাহিনী সাজিয়ে মারধোর ও চুল কেটে দেয়ার নাটক সাজায়। সেই কল্পকাহিনী দিয়ে তারা আমি, আমার স্ত্রী রাহেলা বেগম ও ভাই সালাম আহমদকে জড়িয়ে থানায় মিথ্যে অভিযোগ দেয়। আমার প্রতিবেশি সাহেদ ও জাবেদের সহযোগিতায় ইলাল হোসেন মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করিয়ে আমার এবং আমার পিতার দীর্ঘদিনের সুনাম ক্ষুন্ন করার পায়তারা চালাচ্ছে।

লিখিত বক্তব্যে বিল্লাল হোসেন আরও বলেন, ‘মা রানী বেগম, আমার ভাই কালাম, হেলাল, ইলাল, জালাল, বোন রেখা, জহুরা ও ফাহিমা বেগম মিলে চাচ্ছেন বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি তারা নিজেরা একাই সারাজীবন ভোগদখল করতে। আমার মা আমাদের পিতার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। প্রথম পক্ষের স্ত্রী আমাদের বড় মা সুফিয়া বেগম দীর্ঘদিন ধরে তার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে নগরীর উত্তর কাজীটুলা এলাকাতে তার পিতৃগৃহে বসবাস করছেন। পিতার জীবদ্দশায় বারবার তাদের সম্পত্তির অংশ ভাগ-বাটোয়ারা করে দেয়ার চেষ্টা করলেও মা, ও তার সাথে থাকা ভাই-বোনেরা এতে বাঁধা দেন। আমরা চাই সম্পদ সুষ্ঠুভাবে সকল অংশীদারগণ নিজেদের প্রাপ্য বুঝে পান।’

বিল্লাল হোসেন দাবি করেন, বাবার মৃত্যুর পর পর থেকে তিনি ও ভাই আব্দুস সালাম মিলে আপোস বাটোয়ারার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছি। কিন্তু মা ও ইলালসহ কয়েকজন ভাই-বোনের আপত্তির কারণে আপোসে বাটোয়ারা সম্ভব হয়নি। এলাকার মুরব্বীরাও একাধিকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। বাটোয়ারার কথা বলায় ২০১৬ সালে তারা তাকে মারধোর করেছে। তখন ভাই সালাম আহমদও আহত হন। তারা হয়রানী ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতেই বারবার মামলা করছে এটি প্রমাণ হয় তাদের মামলায় কেউ সাক্ষী দিতে যায় না। তদন্তে করেও তাদের অভিযোগ প্রমাণিত করতে পারে না তারা। তারা বারবার আদালতে গিয়ে মামলা দায়ের করেন। আমাদের বাড়ির উত্তর ও দক্ষিণ দিকে বসবাসরত আমার প্রয়াত দুই চাচার পরিবারে ভাইবোন ও চাচীরাও কিন্তু বিগতদিনে তাদের মামলায় কোনদিনও সাক্ষী হননি।

বিল্লাল হোসেনের লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, সম্পত্তির অংশ ভাগাভাগির দাবি জানানোয় ক্ষুব্দ হয়ে মা রানী বেগম মিথ্যে অভিযোগে মামলা (সি.আর ৬১/২০১৮) দায়ের করেন। তাদের ওই অভিযোগ আদালতে মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে। তাদের পক্ষে কেউ সাক্ষ্য দিতে আদালতে যায়নি। তাই আদালত মামলা থেকে বিবাদিদেরকে খারিজ করে দিয়েছেন। এরপরে গণমান্য ব্যক্তিবর্গের পরামর্শে আমার সৎ ভাই জামাল আহমদ ও জুনেল আহমদ, বোন সাহারা বেগম; আপন ভাই কামাল হোসেন, আব্দুস সালাম, আমার বোন রহিমা বেগম; আমার সৎমা সুফিয়া বেগম এবং আমি বাদি হয়ে সিলেটের যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে সিলেটে স্বত্ব বাটোয়ারা মামলা (নং-২৯৭/২০১৯) দায়ের করি। আমাদের সবার বড় ভাই জামাল আহমদ জায়গা-জমি নিয়া দুঃশ্চিন্তা করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত ১৫ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অভাব অনটনে তার পরিবার মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। তিনি ছিলেন বাটোয়ারা মামলার ১ নম্বর বাদি। তার মরামুখ পর্যন্ত দেখতে যাননি আমার মা-ভাইয়েরা। বাটোয়ারা মামলার বিবাদীগণ হচ্ছেন আমার আপন ভাই কালাম আহমদ, হেলাল আহমদ, ইলাল আহমদ, জালাল আহমদ, রেখা বেগম, জহুরা বেগম, ফাহিমা বেগম ও আমার মা রানী বেগম। স্বত্ব (বাটোয়ারা) মামলার দায়েরের পর রাগান্বিত হয়ে ইলাল আহমদ আমাদের বিরুদ্ধে এয়ারপোর্ট থানায় নতুন আরেকটি মামলা (জি.আর-৮২/২০২০) দায়ের করে। মা রানী বেগম বাদি হয়ে সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে (এয়ারপোর্ট সি.আর-১৫/২০২০) মামলা করেন। একের পর এক মামলা দিয়ে তারা আমাদেরকে হয়রানী করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে সম্পত্তি একাই গ্রাস করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। আইনের আশ্রয় নিতে আমার ভাই মো. আব্দুস সালাম বাদি হয়ে সিলেটের মুখ্য ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতে  মামলা (এয়ারপোর্ট সি.আর-১৩২/২০১৮) দায়ের করেন। যা আদালতে চলমান রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিল্লাল হোসেন বলেন, তারা আমাদের হয়রানী করতে ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে ওঠেপড়ে লেগেছে। এসব কারণে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে আমরা দিন কাটাচ্ছি। আমরা সবসময় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ভয়ে আছি আমার ভাই ইলাল তার সন্ত্রাসী সহযোগীদের নিয়ে আবারও প্রাণে মারার উদ্দেশ্যে হামলা করতে পারে। তাই জীবনের নিরাপত্তার জন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সহযোগিতা কামনা করছি।

সংবাদ সম্মেলনে বিল্লাল হোসেনের ভাইদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- কামাল হোসেন, আব্দুস সালাম ও সৎ ভাই জুনেল আহমদ।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *