বাংলাদেশের এমপি শহিদকে কুয়েতের পুলিশ ‘আটক’ করেছে নাকি আলোচনার জন্য ডেকেছে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য কুয়েতের পুলিশ আটক করেছে বলে যখন দেশটির বলে গণমাধ্যমে খবর দিচ্ছে, তখন ওই সংসদ সদস্যের স্ত্রী বলছেন, তাকে আলোচনার জন্য ডেকে নিয়ে গেছে দেশটির শৃঙ্খলা বাহিনী। আর ঢাকা বলছে, ‘আটক’ হবার খবর শুনলেও আনুষ্ঠানিক খবর আসেনি, কোন কারণও জানা যায়নি।

লক্ষ্মীপুর-২ আসনেরএমপি মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম কুয়েতে পুলিশের হাতে আটক হবার খবর বের হবার পর তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম, যিনি নিজেও একজন সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি, তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন কুয়েতের সরকারি দপ্তর ও সিআইডি তাকে আলোচনার জন্য ডেকে নিয়েছে।

অবশ্য ‘আলোচনার জন্য ডেকে নেয়ার’ একদিন পরেও শহিদ ইসলামের ঢাকা অফিসের কর্মকর্তা ও তার ব্যক্তিগত সহকারী দুজনেই বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, বেলা এগারোটা পর্যন্ত মিস্টার ইসলাম ছাড়া পেয়েছেন বলে কোনো খবর তারা পাননি।

রোববার মিস্টার ইসলামের আটক হবার খবর আসে গণমাধ্যমে এবং আজ বাংলাদেশ সময় বেলা এগারটা পর্যন্ত ঢাকায় তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা তিনি ফিরে এসেছেন কি-না সে সম্পর্কে কোন তথ্য জানাতে পারেননি।

তবে তারা বলেছেন নতুন কোন অগ্রগতি হলে তারা তা গণমাধ্যমকে জানাবেন।

শহিদ ইসলামের স্ত্রীর দেয়া বিবৃতির একাংশ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এমপি শহিদ ইসলাম আটক হয়েছেন কুয়েতে, এ খবর কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিজেও মিডিয়ার মাধ্যমে পেয়েছেন। এবং এখন পর্যন্ত তার আটকের বিষয়ে কুয়েত সরকারিভাবে বাংলাদেশকে কিছু জানায়নি।

“আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আপনাদের মতোই শুনেছি। আমাদের রাষ্ট্রদূত ফোন করেছিলেন এবং তিনি বলেছেন আমাদের একজন সংসদ সদস্য, যিনি স্বতন্ত্র সদস্য ওনাকে ধরে নিয়ে গেছে উনি শুনেছেন”।

কী কারণে মিস্টার ইসলামকে আটক করা বা ডেকে নেয়া হলো সে সম্পর্কে কিছু জানা গেছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুয়েত সরকার সরকারিভাবে কিছু জানায়নি এবং রাষ্ট্রদূত মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছেন যে কি কারণে তাকে নিয়ে গেছে। কিন্তু কুয়েত সরকার এ ব্যাপারে কিছুই জানায়নি।

“উনি (এমপি শহিদ ইসলাম) ওখানে ব্যবসা করেন। ওনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। সে ব্যবসায়িক কোনো কারণে হয়তো এসব হয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো বিস্তারিত কিছু জানি না”।

তবে শহিদ ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম তার বিবৃতিতে বলেছেন, “প্রকৃতপক্ষে মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম কুয়েতে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি খ্যাতনামা মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও। এই কোম্পানির কুয়েতি অংশীদারও রয়েছেন। এ প্রতিষ্ঠানে ২৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশী কর্মরত। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির কারণে অন্যান্য দেশের মতো কুয়েতেও তিন মাস ধরে লকডাউন চলছে। এ পরিস্থিতিতে অনেক অভিবাসী কর্মী বেকার হয়েছে। তাদের কেউ কেউ সরকারি দপ্তরে অভিযোগ করেছে। এসব বিষয় নিয়ে কুয়েতের সরকারি দপ্তর ও সিআইডি তাকে আলোচনার জন্য ডেকে নিয়েছে”।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন

 

রাজনীতির চমক শহিদ ইসলাম,

রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকটাই অপরিচিত মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে তাক লাগিয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সমর্থন আদায় করে।

মহাজোটের প্রার্থীই সরে দাঁড়িয়েছিলেন মিস্টার ইসলামকে কেন্দ্রীয়ভাবে তার জোট সমর্থন দেয়ায়।

নির্বাচনের পর আরেক চমক ছিলো মিস্টার ইসলামের স্ত্রী যখন সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন।

এরপর দেশের রাজনীতির চমক এই সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম আবারও আলোচনায় আসেন গত ফেব্রুয়ারিতে যখন কুয়েতের একটি সংবাদপত্রে বাংলাদেশি মানবপাচারকারীদের নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশের জের ধরে।

যাকে পরে ভুয়া সংবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

গতকাল সোমবার মিস্টার ইসলাম আবারো আলোচনায় যখন বাংলাদেশের গণমাধ্যমে কুয়েতি সংবাদপত্রকে উদ্ধৃত করে প্রচার করা হয় যে মিস্টার ইসলামকে ‘মানব পাচারে’ জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করেছে কুয়েতের পুলিশ।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *