দোয়ারাবাজার উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ ক্লোজারে প্রকল্প নেই : অরক্ষিত তিন হাওর

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: দোয়ারাবাজার উপজেলায় ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে ৩৪টি প্রকল্পে ৫ কোটি ৮ লাখ টাকা বরাদ্দে বাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। গত বছর এ উপজেলায় ২৩টি প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ছিল আড়াই কোটি টাকা। এ বছর আরো ১১টি প্রকল্প বাড়ানো হয়েছে। বেড়েছে প্রকল্পের বরাদ্দও। বিগত বছরের নির্মিত বেড়িবাঁধের কাজে পুনরায় প্রকল্প গ্রহণ ও একাধিক স্থানের অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করার অভিযোগ থাকলেও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্লোজারে প্রকল্প গ্রহণ না করায় সংশ্লিষ্ট হাওরের বোরো ফসল অরক্ষিত থাকবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।

উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের নাইকো সড়কের ভাঙ্গা থেকে ইসলামপুর রাজনগর ব্রিজ পর্যন্ত অন্তত ৫টি ক্লোজারে চলতি বছরে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। গত বছর এই ক্লোজারে প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও চলতি বছরে কোনো প্রকল্প না থাকায় ফসলহানির শঙ্কায় এখন আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন স্থানীয় কৃষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, এ বছর উপজেলার অন্যতম বোরো ফসলের ছোট হাওর ফুটলি উড়া, বিয়াস উড়া, দেওয়ালা তিনটি ছোট হাওরের ৫ শতাধিক বোরো ফসল হুমকির মুখে পড়বে। ঝুঁকির মধ্যে পড়বে নাইন্দাসহ অন্যান্য হাওরের বেড়িবাঁধগুলো। হাওর ঘেঁষে নাইকো কোম্পানির সড়কে ইসলামপুর রাজনগর ব্রিজ পর্যন্ত গত বছর পাহাড়িঢলে ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ ফুট পর্যন্ত ভেঙে গিয়ে অন্তত ৫টি স্থানে বড় বড় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। প্রয়োজনীয় বাঁধে প্রকল্প নেই কেন প্রশ্নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কর্মকর্তারা এখন দায়সারা বক্তব্য দিচ্ছেন। পাউবো’র বর্তমান উপজেলা শাখা কর্মকর্তা সমশের আলী বলছেন, পূর্বের কর্মকর্তা এখানে প্রকল্প গ্রহণের চাহিদা প্রেরণ না করায় এমনটি হয়েছে।

তবে তিনি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রকল্প গ্রহণের চাহিদা ইতোমধ্যে প্রেরণ করেছেন বলে জানান।

অপরদিকে, উপজেলার বিভিন্ন হাওরে চলমান কাজগুলো পরিদর্শন করে দেখাগেছে, অধিকাংশ ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে চলছে স্বেচ্ছাচারিতা, মানা হচ্ছে না নীতিমালা। এছাড়া বেশ কয়েকটি প্রকল্পের বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও এখন প্রশ্ন ওঠেছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটি বাঁধ বাতিলসহ আরো কয়েকটি বাঁধ অপ্রয়োজনীয় বলে চিহ্নিত করেছেন। এছাড়া বাঁধের ৩০ মিটারের মধ্যে মাটি না কাটার নির্দেশনা থাকলেও অধিকাংশ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) তা উপেক্ষা করছে। বাঁধের নিকট থেকে মাটি কাটার ফলে বেশির ভাগ বাঁধই রয়েছে হুমকির মুখে।

উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ইসলামপুর, খইয়াজুড়ি, গিরিশনগর গ্রামের কৃষকরা জানিয়েছেন, গত বছর নাইকো ভাঙায় বরাদ্দ হলেও চলতি বছরে কোনো প্রকল্প নেই। ফলে কয়েকটি হাওরে পানি ঢুকে ফসলহানি ঘটবে। তাই জরুরি ভিত্তিতে এই ভাঙা বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া এই সড়কে আরো কয়েকটি ছোট বড় খাড়া রয়েছে। যা দিয়ে হাওরে পানি ঢুকতে পারে।

ইউপি সদস্য শাহ আলম বলেন, উপজেলার নাইকো সড়কের ভাঙা থেকে ইসলামপুর রাজনগর ব্রিজ পর্যন্ত বেড়িবাঁধের কাজ দ্রুত করা প্রয়োজন। গত বছর প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও এ বছর এ বেড়িবাঁধে কোনো প্রকল্প নেই। অথচ এই সড়কের বড় বড় একাধিক ভাঙা রয়েছে। যা দিয়ে হাওরে পানি ঢোকার শঙ্কা রয়েছে। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ।
সুরমা ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার মামুনুর রশীদ জানান, এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রয়োজনীয় ফসল রক্ষা বাঁধ, অথচ এখনে কোনো প্রকল্পই গ্রহণ করা হয়নি। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বার বার বলে আসছি।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *