সুনামগঞ্জের সীমান্তের হলহলিয়ায় দুর্গে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে প্রাচীন সভ্যতার আবাসিক ভবন

সুনামগঞ্জ-প্রতিনিধি:: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তের হলহলিয়ায় দুর্গে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে প্রাচীন সভ্যতার আবাসিক ভবনের ধ্বংসাবশেষ।এ খনন ও অনুসন্ধানে হলহলিয়া রাজবাড়ি দুর্গের অভ্যন্তরে একাধিক আধুনিক কক্ষের সন্ধান মিলেছে। দুর্গের প্রবেশপথে একটি অনন্য আবাসিক ভবনেরও অস্তিত্ব পেয়েছে খনন দলটি। তাছাড়া খননকালে মাটির বিভিন্ন স্তরে পোড়ামাটির তৈরি বিভিন্ন ধরনের প্রত্নবস্তু পাওয়া গেছে। এর ফলে সুনামগঞ্জের এই বিস্মৃতপ্রায় হলহলিয়া দুর্গ ও রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অনন্য দিক উন্মোচিত হলো বলে মনে করেন সুধীজন।

গত বছর প্রত্নসম্পদ ঘোষিত হওয়ার পর গত ৭ জানুয়ারি দুর্গটি খননের উদ্যোগ নেওয়া হয় সরকারিভাবে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরেও প্রাথমিকভাবে খননের উদ্যোগ নেয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। সরকার ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর প্রথম দফা খননের উদ্যোগ নেয়। সামান্য থোক বরাদ্দ দিয়ে এই কার্যক্রম চালানোর পরে খননকারী প্রাচীন সভ্যতার প্রত্নসম্পদের কথা জানিয়ে অধিকতর খনন ও অনুসন্ধানের দাবি জানায়।

২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় হলহলিয়া দুর্গ ও রাজবাড়িকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে।

এরপরই গত ৭ জানুয়ারি অনুসন্ধান ও খনন শুরু করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। খনন ও অনুসন্ধানের ফলে প্রতিদিনই প্রত্নবস্তু বেরিয়ে আসছে বলে খননকারীরা জানান। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মো. আতাউর রহমানের নেতৃত্বে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হান্নান মিয়ার নির্দেশে এই খনন কাজ ও অনুসন্ধান শুরু হয়। এ খনন ও অনুসন্ধান দলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন ফিল্ড অফিসার মো. শাহীন আলম। খনন দলের সদস্যরা হলেন- ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান (অতি.দা.) মো. হাফিজুর রহমান, আঞ্চলিক দপ্তরের গবেষণা সহকারী মো. ওমর ফারুক, সিনিয়র ড্রাফটসম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, আলোকচিত্রী মো. নূরুজ্জামান মিয়া, সার্ভেয়ার চাইথোয়াই মারমা, পটারী রেকর্ডার ওমর ফারুক ও অফিস সহায়ক লক্ষণ দাস।

খননের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত হওয়ায় সঠিকভাবে নিরবচ্ছিন্ন গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে এখানকার প্রাচীন পটভূমি জানার সুযোগ হবে। পাশাপাশি এই ঐতিহাসিক অঞ্চলকে প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যটন আরো বিকশিত হবে। এতে প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাসও উন্মোচিত হবে।
চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মো. আতাউর রহমান বলেন, প্রথমে আমরা খননকাজ শুরু করার পর থেমে গিয়েছিলাম। কারণ এটি প্রত্নসম্পদ হিসেবে স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হয়নি। আমাদের প্রাথমিক খননে প্রাচীন সভ্যতা ও ইতিহাসের নানা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাই। এগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করার পর মন্ত্রণালয় প্রত্নসম্পদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই এখন থেকে অধিকতর খনন ও অনুসন্ধানের দীর্ঘমেয়াদী কাজ চলবে।

তাই আমরা খনন করতে গিয়ে প্রাচীন আবাসিক সুসজ্জিত কক্ষের নমুনা পেয়েছি। প্রবেশ পথে পেয়েছি পোড়ামাটির মূল্যবান প্রত্নসম্পদ।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *