খালেদার জন্য বিশেষ আবেদন করছে পরিবার!

সিলেট নিউজ টাইমস্ ডেস্ক:: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতির আশঙ্কায় তাঁর মুক্তির জন্য ‘বিশেষ আবেদন’ করার কথা ভাবছে তাঁর পরিবার। তবে এটি সাজা মওকুফের নাকি প্যারোলের (শর্তসাপেক্ষে মুক্তি) আবেদন সে বিষয়ে গতকাল শুক্রবার রাত পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বিএনপির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত সাজা মওকুফ চেয়ে আবেদন করার সম্ভাবনাই বেশি।

গত ১৪ জানুয়ারি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের আবেদন করা হলে সরকার তা বিবেচনা করতে পারে। জেলখানায় যাঁরা থাকেন এবং বহুদিন কারাদণ্ড ভোগ করেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারা অনুযায়ী তাঁদের দণ্ড নানা বিবেচনায় অনেক সময় স্থগিত হয় বলে সেদিন উল্লেখ করেছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি বলেছিলেন, সাধারণত সাজা সাসপেন্ড করা হয় অনেক দিন সাজা খাটার পর। সরকার বিশেষ বিবেচনায় এটা স্থগিত করতে পারে। এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারা মোতাবেক খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ স্থগিত করে তাঁর ইচ্ছামতো চিকিৎসা নিতে দেশে-বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ম্যাডামের পরিবারের সদস্যরা তাঁর চিকিৎসার জন্য যেকোনো মূল্যে মুক্তি চান। তাই বিশেষ আবেদনের কথা বলেছেন। এটি তাঁরা সঠিকভাবেই বলেছেন। কারণ ম্যাডাম সত্যিই অনেক বেশি অসুস্থ। সুতরাং তাঁর জীবন বাঁচানো এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি।’

খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের বিশেষ আবেদন করার কথা মিডিয়ায় বলেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে এখনো আলোচনা হয়নি।’

গত এক বছরে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য দলের পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে বেশ কয়েকবার দেনদরবার চললেও শেষ পর্যন্ত কোনো সমঝোতা হয়নি। কারণ সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল প্যারোল দিতে চেয়েছে। অন্যদিকে খালেদা জিয়াসহ বিএনপি চেয়েছে জামিনে মুক্তি। খালেদা জিয়া প্যারোল নিতে রাজি নন বলে বিএনপির বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

সূত্র মতে, দলগতভাবে বিএনপি খালেদা জিয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নিতে ভয় পাচ্ছে। কারণ সরকার ও খালেদা জিয়া দুই পক্ষই ওই ইস্যুতে ‘রাজনৈতিকভাবে লাভ’ করতে চায় বলে বিএনপির অনেক নেতা মনে করেন। তাই প্যারোল কিংবা সাজা স্থগিত কোনোটিতেই তাঁরা ঝুঁকি নিতে সাহস পাননি। কারণ খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে বিএনপির রাজনীতির অনেক কিছু নির্ভর করছে। প্যারোল নিলে জনগণের কাছে প্রতীয়মান হবে যে বিএনপি সরকারের কাছে নতি স্বীকার করেছে। অন্যদিকে সাজা স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হলে সাজা সমর্থন বা স্বীকার করে নেওয়া হয়। এতে নেত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার ভবিমূর্তি ক্ষণ্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে দলের মধ্যে আলোচনা আছে। তাই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে বিএনপি বিভিন্ন সময় আলোচনা করলেও প্যারোল বা সাজা মওকুফের বিষয়ে কখনো প্রকাশ্যে অবস্থান ব্যক্ত করেনি। বিষয়টি তারা পরিবারের হাতে ছেড়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে সাম্প্রতিককালে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বেশি অবনতি হওয়ায় পরিবারের সদস্য এবং দলীয় নেতাদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তাঁদের সবাই মনে করেন, রাজনীতির তুলনায় খালেদাকে বাঁচানো আপাতত বেশি জরুরি। দলীয় নেতা ও পরিবারের সদস্যরা মনে করেন, খালেদা জিয়া বেঁচে থাকলে রাজনীতির লাভ-ক্ষতি পরে দেখা যাবে।

গতকাল বিকেলে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পর তাঁর বোন সেলিমা রহমান সাংবাদিকদের কাছে বিশেষ আবেদন করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও বিস্তারিত কিছু বলেননি। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর মুক্তির জন্য বিশেষ আবেদন করবেন কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো আবেদন করিনি। আমরা ভাবছি আবেদন করব। তবে এখনো ঠিক করিনি এটা। কারণ তাঁর যে শরীরের অবস্থা, এভাবে বেশি দিন চলতে গেলে উনাকে জীবিত অবস্থায় আমরা বাসায় নিয়ে যেতে পারব না। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।’

সেলিমা রহমান বলেন, ‘উনার (খালেদা জিয়া) যে অবস্থা তাঁর দ্রুত উন্নত চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে হবে। তাঁর শরীর খুবই খারাপ। তাঁর ডায়াবেটিস আজকে (শুক্রবার) ১৫ ফাস্টিং। এভাবে আর কত দিন চলবে? এখানে তো প্রায় এক বছরের কাছাকাছি হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য আমরা চাই উন্নত হসপিটালে নিয়ে উনার চিকিৎসা দেওয়া আর উনার মুক্তির ব্যবস্থা করা।’

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *