‘সন্ত্রাসীদের হুমকিতে স্কুল কলেজে যেতে পারছেন না সন্তানরা’

সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাহে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে গুন্ডা-সন্ত্রাসীদের হুমকির কারণে চরম নিরপত্তাহীনতায় ভুগছেন মৃত ফিরোজ খানের পরিবারের সদস্যরা। এমনকি তাদের সন্তানরা স্কুল কলেজেও যেতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন তার পুত্রবধু জোহেলা বেগম রুমি। বুধবার দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে রুমি বলেন, শাহী ঈদগাহে ফিরোজ খানের নামে সেটেলমেন্ট জরিপ অনুযায়ী ১০১৬৭, ১০১৬৫, ১০১৬১, ১০১৬৬, ১০১৬৯, ১০১৮০, ১০১৬৮, ১০১৬৩ ও ১০১৬৪সহ ১৯ দাগে মোট ১ দশমিক ১৯ একরের বেশি সম্পত্তি রয়েছে। এই জমি নিয়ে দায়েরকৃত একটি মামলা আদালতে বর্তমানে বিচারাধীন। কিন্তু এই এলাকার মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে শুয়েবুন নবী জাল দলিলের মাধ্যমে ২০১৫ সাল থেকে এই সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টা করছেন।

এমনকি গত বছর ২৯ মে হামলা চালিয়ে আমাদের বসতঘরসহ দোকানপাট ভাংচুর করেছেন। এতে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। শুয়েবুন নবী ও তার আমমোক্তার আশরাফ আহমদ সুমন এখনো আমাদের হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছেন এবং এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানায় জিডিও করা হয়েছে।

বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হলেও তাদের অযৌক্তিক শর্ত আদালত অবমাননার শামিল হওয়ায় আমরা তা মানতে পারিনি। এর আগে স্থানীয় ভূমিখেকো গিয়াস উদ্দিন চক্রের মাধ্যমে আমাদের ১১টি দোকানের ভাড়া সালিশদের হাতে রাখা হয়েছে এবং তারা প্রতি মাসেই টাকা উত্তোলন করেছেন। এতে আমরা আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছি।

তিনি বলেন, শুয়েবুন নবীর নেতৃত্বে ভূমি খেকো চক্রটি দশমিক ২৫ একর ভূমির মূল্য প্রায় সাড়ে ১৭ লাখের উপরে হওয়া সত্ত্বেও বড় অংকের কর ফাঁকি দিয়ে তারা মাত্র সাড়ে ৫ লাখের কম মূল্য ধরে ২০১৮ সালে সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে একটি জাল দলিল তৈরি করে আমাদের ১২টি দোকান কোটা দখলের অপচেষ্টা চালায়।

তারা বাসায় প্রবেশ করেও ভাংচুর করেছে। এছাড়া ফিরোজ খানের মৃত্যুর পর তার মা এশাবানুর কাছ থেকে শুয়েবুন নবী জাল দলিল দিয়ে একটা হেবা পত্রও নিয়েছিলেন যা বিনা দখলীয় এবং হেবা আইনের শর্ত পরিপন্থী। পরে শুয়েবুন নবী তার ভাগনে প্রবাসী সৈয়দ আশরাফকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেন। আশরাফ ভয় ভীতি ও হুমকি দিতে শুরু করেন। তিনি খাসদবির এলাকার কুখ্যাত শিবির ক্যাডার আব্দুল ওয়াহিদ ওরফে অপু গুন্ডাকেও আমাদের পিছনে লেলিয়ে দেন। শেষে শেষে তিনি শাহী ঈদগাহের গিয়াস উদ্দিন ও তার ভাই মুহিব উদ্দিনের নেতৃত্বে থাকা একটি ভূমিখেকো চক্রকে হাত করে নেন।

এই চক্রটি ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদকেও ক্ষমতার প্রভাব খাটানোর উদ্দেশ্যে ৮৬০৭ নম্বর দলিলে শরিক করে। রুমি প্রশ্ন রাখেন, একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে আজাদ না বুঝে কিভাবে এই দলিলের সাথে জড়িত হলেন?

সংবাদ সম্মেলনে রুমি বলেন, স্থানীয় সালিশেরা বিষয়টি আদালতের হাওলা করে দিয়েছেন এবং গত ডিসেম্বর থেকে আমরা দোকানকোটাগুলোর ভাড়া তুলছি। তবে এর আগের ৬ মাসের ভাড়া মাশরুফ আহমদ মাশুকের কাছে জমা। আমরা আপনাদের মাধ্যমে আমাদের এই ন্যায্য টাকা ফেরত চাই। আমরা নিরীহ এবং অসহায়। এই সুযোগে আশরাফ মিথ্যা অভিযোগে আমাদের বিরুদ্ধে জিডি করে হয়রানি করছেন। তারা আমাদের ভাড়াটিয়াদেরও হুমকি ধমকি দিয়ে বিভিন্ন কাগজে স্বাক্ষর নিচ্ছে যা আবার চুক্তি কপি হিসাবে উপস্থাপন করছে। আমাদের সন্তানরাও অসহায় অবস্থায় রয়েছে।

হামলার ভয়ে তারা স্কুর কলেজেও যেতে পারছেনা। আশরাফ এত বড় ধোঁকাবাজ যে জনৈক এমদাদুর রহমানের কাছে এই জায়গা নিয়ে দুটি বায়না পত্র করেছে। এ ব্যাপারে এমদাদ তার বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন। রুমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে কাউন্সিলর আজাদসহ অন্যান্যদের কাছে জুলুম না করার আহবান জানান। তিনি বলেন, শুয়েবুন নবীকে আদালত মালিক সাব্যস্ত করলে আদালতই আপনাদের জায়গা বুঝিয়ে দিবেন। আমরা অসহায়। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দিন। অযথা আর হয়রানি করবেন না।

এ ব্যাপারে তিনি ফিরোজ খানের ওয়ারিশদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনসহ সিলেটের প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফিরোজ খানের পরিবারের সদস্য মিলি বেগম, আরাতুন বেগম, নাইম খান, আরমান খান, মোমিন খান, ফারুক খান, আব্দুর রাজ্জাক, আরিফ আহমদ প্রমুখ।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *