সিলেট সিটি করপোরেশনের কাজ করে ১৩ বছরেও বিল পাননি ঠিকাদার

সিলেট নিউজ টাইমস্ ডেস্ক:: সিলেট সিটি করপোরেশনের কাজ করে সাড়ে ৪১ লাখ টাকা বকেয়া বিল আদায়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রথম শ্রেণির একজন ঠিকাদার। গত ১৩বছরেও পাননি তার পাওনা টাকা। ঋণের বোঝা বইতে না পারায় নিজের প্রতিষ্ঠানটিও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বয়সের ভারে নুব্জ নিঃস হয়ে এক পর্যায়ে ব্রেনস্টোক করেন।

বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন মেসার্স খাজা ট্রেডিং কোম্পানীর স্বত্তাধিকারী, গোয়াইনঘাট উপজেলার রাধানগর গ্রামের হাজী জয়নাল আবেদীন মজুমদার। তিনি বলেন, আমার এই পরিণতির জন্য দায়ী সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজ, ইঞ্জিনিয়ার মালেক, সাইফুল ইসলাম, শামছুল হক।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০০৫ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাছে আমার ঠিকাদারী কাজের বিল বাবদ আমার পাওনা ছিল ৫৮ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের নির্দেশে নগরীর মেন্দিবাগ কবরস্থানের বাউন্ডারি ওয়াল ও দু’টি গেইট, মেন্দিবাগস্থ শামীমের বাড়ির রাস্তার ড্রেন ও স্লাব নির্মাণ, মেন্দিবাগ পাঠাগার নির্মাণ ও মিতালী হতে টিবি গেইট পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণ করি। এইসব কাজ-বাবদ আমার পাওনা ছিল যথাক্রমে ১২লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, ৬ লক্ষ ২০ হাজার, ১২ লক্ষ ৫০ হাজার এবং ২৭ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, আমার পাওনা টাকা আদায়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের দ্বারস্থ হলে চেকের মাধ্যমে তিন কিস্তিতে আমাকে ১৩ লক্ষ ৭৩ হাজার ৩৯৬ টাকা পরিশোধ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে দুই কিস্তিতে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা আমাকে প্রদান করেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। কিন্তু, অবশিষ্ট ৪১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৬০৪ টাকা আমি আর পাইনি।
বয়োবৃদ্ধ জয়নাল আবেদিন বলেন, কাজের জন্য যে টাকা খরচ হয়েছে তা ব্যাংক ঋণসহ বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলাম। কিন্তু সময়মতো সিসিকের বিল না পাওয়ায় ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হই। ফলে ব্যাংকের সুদ বাড়ার পাশাপাশি ব্যাংক আমার উপর একটি মামলা দায়ের করে। এক পর্যায়ে মামলা চালানো, কিস্তি পরিশোধ, সংসার চালানো আমার পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, অনেকটা নিরুপায় হয়ে আমি বসতভিটা বিক্রি করে সেই সকল ঋণ পরিশোধেরও চেষ্টা করেছি। এখন আমি নিঃস্ব, আমার বিক্রি করার মতো আর কিছু অবশিষ্ট নাই। ছেলেদের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গেছে। নিজে অক্ষম হয়ে পড়ায় এখন তারা শ্রমিকের কাজ করছে।
তিনি বলেন, দুঃশ্চিন্তা আর ঋণের চাপে আমার ব্রেনস্ট্রোক হয়েছে। আমি আরো বেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়েছি। একদিন অন্য সবার মতো আমিও চলে যাবো আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে। সাবেক মেয়র কামরান যদি সময়মতো কাজের বিল পরিশোধ করতেন তাহলে আমাকে আজ এই অসহায় অবস্থায় দাঁড়াতে হতো না। বিলুপ্ত হত না আমার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স খাজা ট্রেডিং কোম্পানীর ৯টি দোকান।

এ অবস্থায় মাথাগোজার ঠাঁই, চিকিৎসা, সন্তানদের পড়ালেখা, দুমোঠো ভাতের নিশ্চয়তা ফিরে পেতে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *