সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষ আচরণের প্রত্যাশা ফখরুলের

নিউজ ডেস্ক:: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর কাছে দায়িত্ব পালনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি সেনাবাহিনীকে এ দেশের মানুষ সব সময় অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখেন এবং মনে করেন দেশের যে কোনো সঙ্কটময় মুহূর্তে তারা দায়িত্ব পালন করেন। আজকে নির্বাচনে যখন তাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, আমরা আশা করবো সম্পূর্ণ নির্ভয়ে নিরপেক্ষভাবে তারা দায়িত্ব পালন করবেন। জনগণের আশা আকাঙ্খার যে গণতন্ত্র তারা তা রক্ষা করবেন।’

তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী মোতায়েন হচ্ছে ২৪ তারিখ থেকে। এখন বিজিবি মোতায়েন হয়ে গেছে। প্রশাসনসহ সবার কাছে আমাদের একটি মাত্র আহ্বান, বাংলাদেশ আমাদের সবার দেশ, জনগণ এই দেশের মালিক, মুক্তিযুদ্ধের অনেক ত্যাগ তিতীক্ষার মাধ্যমে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য রাষ্ট্র ও জনগণ আপনাদের যে দায়িত্ব দিয়েছে, সেই দায়িত্ব আপনারা পালন করবেন। আপনারা কোনো দল বা ব্যক্তির নন, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী। সুতরাং আপনারা নিরপেক্ষভাবে নির্ভয়ে দায়িত্ব পালন করবেন –আপনাদের কাছে এটাই জনগণের প্রত্যাশা। আশা করি সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণের যে আস্থা আছে, নূন্যতম যে আস্থা বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের ওপরে আছে, তা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেবেন না।’

বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ এনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে মাত্র নির্বাচনের ৬/৭দিন বাকি । আমরা আশা করি শেষ মুহূর্তে হলেও এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশন ও সরকার তার সম্বিৎ ফিরে পাবে। সবার মধ্যে দেশপ্রেম, দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ এবং তাদের চার্টারে যা বলা আছে সেইভাবে দায়িত্ব পালন করবে।’

বিএনপির ১৫ জন প্রার্থী কারাবন্দি আছেন জানিয়ে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘ইতোমধ্যে ৭ জনের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে, আরও ২৫ জনের বিরুদ্ধে কোর্টে ঝুলছে। আমরা ইসির কাছে গিয়ে বলেছি, যেসব আসনে আমাদের প্রার্থীদের বেআইনিভাবে শূন্য ঘোষণা করা হচ্ছে, অথবা বাতিল করা হচ্ছে, সেগুলোতে আবার প্রার্থী দেয়ার সুযোগ দেয়া হোক। অথবা সেই আসনে নির্বাচন স্থগিত রাখা হোক। পরে সিডিউল ঘোষণা করে আবার নির্বাচন দেয়া হোক।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কার সঙ্গে লড়াই করছি বুঝতে পারছি না। আমাদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশ। কিন্তু কেন? কারণ কি? মিটিং ভেঙে দেয়া, অ্যারেস্ট করা নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন নতুন খেলা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের রোকজন নিজেরাই তাদের অফিস ভাঙচুর করছে, একটা পরিত্যক্ত ঘরে আগুন দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করছে।’

ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা যখন সংলাপে যাই, সেখানে দীর্ঘ আলোচনার পরে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তফসিল ঘোষণার পরে আর কোনো রাজনৈতিক গ্রেফতার হবে না। অথচ এখনও একজনের পর একজনকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, এমনকি আমাদের প্রার্থীরাও পর্যন্ত বাদ পড়ছেন না। ’

তিনি বলেন, ‘দেশে যেন এখন অন্য কোনো ক্রাইম নেই, দেশে একমাত্র ক্রাইম হচ্ছে বিএনপির ইলেকশনে নামা। তারপরেও মানুষ বেরিয়ে আসছে, মানুষ পরিবর্তন চায়, মানুষ এই দানবীয় সরকার থেকে মুক্তি চায়।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ, নির্বাচন কমিশন ভূয়া ব্যালট পেপার ছাপানো শুরু করেছে বলে শুনতে পাচ্ছি এবং আগের রাতেই ব্যালট বাক্সে বোঝাই করে রাখা হবে এই পরিকল্পনার কথা আমরা শুনতে পাচ্ছি না, অথেনটিক সোর্স থেকে জানতে পারছি। এগুলো করার জন্য আমরা শুনতে পাচ্ছি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকটা জোন তৈরি করা হয়েছে। সেই জোনে বিশেষ বিশেষ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা ছক করছে, এই ছকে কোনো লাভ হবে না। মানুষ এতো বেশি জেগে উঠেছে, জাগরণ ঘটেছে যে সব ছককে তারা নস্যাৎ করে দেবে। ’

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসির প্রতি দাবি জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপির টাকা নিন, নৌকায় ভোট দিন, বিএনপির টাকা কোথায়? আমরা তো নিজেরা যারা নির্বাচন করছি, আমাদের কর্মীরা যারা নির্বাচন করছেন আমরা আমাদের নিজেদের জমি জমা বাড়ি ঘর বিক্রি করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী একথা কি করে বলতে পারেন এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক। এর চেয়ে অনৈতিক আর কি হতে পারে? এর আগে শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা ভুয়া ব্যালট পেপার ছাপাচ্ছি, গুজন ছড়াচ্ছেন উনি। অনৈতিক পরামর্শ দেয়ার জন্য ইসির উচিত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। আমি দাবি করবো, ইসি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘লন্ডন থেকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পুলিশ অফিসারকে হত্যা করে নির্বাচনের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হবে। এটা মারাত্বক ভয়াবহ একটা মিথ্যা অপবাদ। এটার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া উচিত। বিএনপি নাকি মুজিক কোর্ট বানাচ্ছে, ওনারা পুলিশের ইউনিফরম বানাতে দিয়েছেন আমরা শুনেছি, পত্র পত্রিকায় এসেছে সেটার কাউন্টার করার জন্য উনি এটা বললেন কিনা জানি না।’

ফখরুল আরও বলেন, ‘ইসির কাছে আমরা বহু অভিযোগ দিয়েছি। প্রত্যেক নির্বাচন কমিশনের কাছে এখনও পর্যন্ত একটা অভিযোগের কোনো সুরাহা হয়নি। আমরা নির্বাচন করতে চাই বলেই নির্বাচনে এসেছি। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক করার জন্যই আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আমরা উচ্চ আদালতের কাছে আপিল করছি, দয়া করে আপনারা ন্যায় বিচার করুন, একটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের বেআইনিভাবে বাতিল করা যায় না। আমরা ইসিকে আবারও বলতে চাই আপনারা নিরদের দায়িত্বটা নির্ভয়ে পালন করুন। এই রাষ্ট্র, সংবিধান আপনাদেরকে যে অধিকার দিয়েছে সে অধিকার প্রয়োগ করুন। ’

সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ফখরুল বলেন, ‘সেটা আপনারা জানতে পারবেন, ওইটা হবে কিনা জানি না। তবে ২৫/২৬ তারিখে পরবর্তীতে জানানো হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল খান, নির্বাহী সদস্য তাবিথ আউয়াল, প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবীর খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *