সংঘর্ষে নিহত ইসমাইল মন্ডল কোন পক্ষের?

নিউজ ডেস্ক:: টঙ্গী ইজতেমার তাবলিগ জামাতের দিল্লির মাওলানা সাদের অনুসারীদের সঙ্গে মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীদের সংঘর্ষে মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা ইসমাইল মন্ডল (৬৫) নামের এক মুসল্লি নিহত হয়েছেন। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় আরও পাঁচ শতাধিক মুসল্লি আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে দুটি পক্ষ।

এই ঘটনায় ২ ডিসেম্বর, রবিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে সংবাদ সম্মেলন করেছে মাওলানা জুবায়েরপন্থি মুসল্লিরা। সংবাদ সম্মেলনে তারা সংঘর্ষের সময় পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একইসঙ্গে সাদপন্থি ওয়াসিফুল ইসলাম ও শাহাবুদ্দিন নাসিমকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়।

সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের শতাধিক মুসল্লি আহত হলেও মুন্সীগঞ্জের ইসমাইল মন্ডল আসলে কোন পক্ষের হামলায় নিহত হয়েছেন সেটা এখনো সুস্পষ্ট হয়নি। কারণ মাওলানা সাদের অনুসারীদের দাবি নিহত ইসমাইল মন্ডল সাদপন্থি ছিলেন। সাদ বিরোধীদের হামলায় তিনি নিহত হয়েছেন।

অপরদিকে তাবলিগ জামাতের সাদবিরোধী ও হেফাজত ইসলামপন্থি কওমি আলেমদের দাবি নিহত ইসমাইল মন্ডল ছিলেন তাদের অনুসারী। সাদপন্থিদের হামলাতেই তিনি নিহত হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে যা জানালেন সাদবিরোধীরা

পুরানা পল্টনের একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মাওলানা সাদবিরোধীদের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভিক্টোরিয়া পার্ক মসজিদের ইমাম ও তাবলিগের মুরব্বি মাওলানা আমানুল হক।

মাওলানা আমানুল বলেন, ‘গতকাল টঙ্গী ইজতেমা মাঠে তাবলিগি সাথী ও মাদরাসার ছাত্রদের ওপর অত্যন্ত নির্মম ও বর্বরোচিতভাবে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। আগামী ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। ইজতেমাকে কামিয়াব করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে মাঠে প্রস্তুতিমূলক কাজ করতে হয়। এ কাজ বিভিন্ন কারণে বিলম্ব হয়েছে। ফলে তাবলিগের সাথী ও ঢাকার বিভিন্ন মাদরাসার ছাত্ররা তিনদিনের জামায়াত করে মাঠের কাজে নিয়োজিত ছিল। এমতাবস্থায় নিজামুদ্দীনের মাওলানা সাদপন্থি বাংলাদেশের ওয়াসিফুল ইসলাম ও নাসিমগং-এর অনুসারীরা নিরস্ত্র-নিরীহ তাবলিগের সাথী ও মাদরাসার ছাত্র, ওলামায়ে কেরামের ওপর লাঠি-সোটা ও ধারাল অস্ত্র, ইট-পাটকেল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, এ অবস্থায় প্রশাসনের ভূমিকা ছিল নীরব ও রহস্যজনক। পুলিশ দাঁড়িয়ে দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। শুধু তাই নয় বরং গেট ভেঙে তাদেরকে ভেতরে প্রবেশ করতে সহায়তা করেছে। কিন্তু ইতিপূর্বে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেছিল আপনারা ভেতরে অবস্থান করেন, আমরা আছি। বাহির থেকে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। কিন্তু বাস্তব চিত্রে দেখা গেল ভিন্ন। হামলাকারীরা ভেতরে প্রবেশ করে যাকেই সামনে পেয়েছে তার ওপরই তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শত শত ছাত্র ও সাথীকে রক্তাক্ত করেছে।’

হামলায় আহত ও নিহত ব্যক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ হামলায় নিহত হয়েছেন মুন্সীগঞ্জের ইসমাইল মন্ডল ও আহত হয়েছেন প্রায় পাঁচ শতাধিক; যারা টঙ্গীর আশপাশের হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বেশকিছু মাদরাসার শিশু ছাত্রদের চিত্র দেখানো হয়েছে। তারা টঙ্গী মাঠের ভেতরে অবস্থিত মাদরাসার ছাত্র। তারা সার্বক্ষণিক সেখানে থেকে পড়াশোনা করে। বাহির থেকে কেউ প্রবেশ করেনি। হামলাকারীরা সেখানের মাদরাসা ভবনের মুরুব্বীদের আসবাবপত্র ভেঙে তছনছ করে অগ্নিসংযোগ করেছে।’

সাদঅনুসারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ওয়াসিফুল ইসলাম ও সাহাবুদ্দিন নাসিমের নেতৃত্বে মাওলানা সা’দ সাহেবের অনুসারীরা তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা ওলামায়ে কেরাম ও আলেমদের সাথী তাবলিগের সাথে বিভিন্ন জায়গায় মারমুখি আচরণ করছিল। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল (শনিবার) টঙ্গী ময়দানে নির্মমভাবে হামলা; যা নজিরবিহীন তাণ্ডব চালায়। তার নিন্দা ও ধিক্কার জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। এ হামলাতে গোটা আলেম সমাজ তথা সারা মুসলিম উম্মাহ হতবাক ও চরমভাবে মর্মাহত।’

সংবাদ সমেলনে তারা আরও কিছু দাবি তুলেছেন। সেই দাবিগুলো হচ্ছে, হামলায় আহত-নিহত মুসল্লিদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। টঙ্গী ময়দান শুরাভিত্তিক পরিচালিত তাবলিগে সাথী ও আলেমদের কাছে হস্তান্তর করা। কাকরাইলের সব কার্যকলাপ থেকে ওয়াসিফ ও নাসিমকে বহিষ্কার করা। সারা দেশে তাবলিগের সাথীদের ওপর হামলা-মামলা বন্ধ করা এবং আগামী ১৮, ১৯, ২০ জানুয়ারি ইজতেমা করার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ ছাড়াও সোমবার সারা দেশে জেলা প্রশাসক বরাবর তারা স্মারকলিপি দেবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।

সংঘর্ষে নিহত ইসমাইল মন্ডল কোন পক্ষের?

দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ইসমাইল মন্ডল আসলে মাওলানা সাদপন্থি ছিলেন নাকি সাদবিরোধী ছিলেন—সেটা নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন উঠেছে। দুই পক্ষই দাবি করেছে, নিহত ইসমাইল মন্ডল তাদের অনুসারী ছিলেন।

এই ব্যাপারে জানতে চাইলে সাদবিরোধী ও হেফাজত ইসলামপন্থি কওমি আলেম পক্ষের মুফতি জহির ইবনে মুসলিম মুহাদ্দিস প্রিয়.কমকে বলেন, ‘আমাদের তথ্য অনুযায়ী আমরা অনুসন্ধান করে পেয়েছি যে উনি দুই/ তিন ধরে মাঠে ছিলেন। সাদপন্থিরা তো গতকাল মাঠে গিয়েছে। তাহলে উনি সাদপন্থি কীভাবে হলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘উনি আমাদেরই। কারণ সাদপন্থি যারা ছিলেন তারা তো কেউ আগে থেকে মাঠে ঢুকে নাই। তিনি আমাদের পক্ষেই ছিলেন বলে ধরে নিতে পারি আমরা।’

অপরদিকে নিহত ইসমাইল মন্ডল সাদপন্থি ছিলেন বলে দাবি করেছেন মাওলানা সাদের বাংলাদেশের গণমাধ্যম শাখার সদস্য মো. মুরসালিন।

তিনি প্রিয়.কমকে বলেন, ‘মারা যাওয়া ইসমাইল মন্ডল আমাদের। তিনি মুন্সীগঞ্জ থেকে এসেছেন। তিনি নিজেও তিন চিল্লার সাথী এবং তার ছেলেও তিন চিল্লার সাথী। তারা দুজনে একসাথেই এসেছেন। উনি মাওলানা সাদের অনুসারী।’

এদিকে সংঘর্ষে নিহত হওয়ার পরপরই ইসমাইল মন্ডলের ছেলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, তার বাবা নিহত ইসমাইল মন্ডল সাদপন্থি ছিলেন।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *