বেতন পাচ্ছেন ৭৫ হাজার পাটকল শ্রমিক

নিউজ ডেস্ক::জাতীয় নির্বাচনের আগেই বকেয়া বেতন-ভাতা পাচ্ছেন ৭৫ হাজার পাটকল শ্রমিক-কর্মচারী। নির্বাচনের আগে পাওনাজনিত অসন্তোষের আশঙ্কায় এ উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।

বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।

প্রস্তাবটি অনুমোদন সাপেক্ষে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হবে।

এ জন্য একশ’ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে পাওনা পরিশোধের জন্য অর্থ দেয়া হবে অনুন্নয়ন ঋণের মাধ্যমে।

আর অনুন্নয়ন ঋণের টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে চলতি বাজেটের অপ্রত্যাশিত খাত থেকে। কারণ উল্লিখিত বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য বাজেটে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

জানতে চাইলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান যুগান্তরকে বলেন, সরকারপ্রধান সব সময় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেশি বিবেচনা করে থাকেন। বকেয়া পাওনা পরিশোধের যৌক্তিকতা থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আশা করি এতে শ্রমিকদের মধ্যে বকেয়া নিয়ে কোনো অসন্তোষ থাকবে না।

জানা গেছে, বিজেএমসির আওতায় কর্মরত আছেন ৭৫ হাজার ৫০০ জন শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা। এর মধ্যে শ্রমিকের সংখ্যা হচ্ছে ৭০ হাজার এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী ৫ হাজার ৫শ’ জন।

আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তার বকেয়া বেতনের পরিমাণ দাঁড়াবে ৩৮০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে শ্রমিকদের মজুরি ৩০৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ৭১ কোটি ৪ লাখ টাকা।

মূলত পাটপণ্য নির্ধারিত সময়ে বিক্রি ও রফতানি করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে বকেয়া পড়ে বেতন-ভাতা।

সূত্র মতে, বিজেএমসির বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে অর্থ বিভাগ থেকে একটি সার সংক্ষেপ সম্প্রতি পাঠানো হয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে।

প্রস্তাবে বলা হয়, বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিজেএমসিকে জমি হস্তান্তর মূল্য বাবদ ২শ’ কোটি টাকা এবং শ্রমিকদের মজুরি ও বেতন বাবদ আরও ২শ’ কোটি টাকাসহ মোট ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।

এছাড়া গত কোরবানির ঈদ উপলক্ষে শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য আরও একশ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়, পাট খাতের বিষয়ে ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকটি অনুশাসন দিয়েছেন। এর মধ্যে ‘পাট খাতের সার্বিক উন্নয়নে কী করা যায় এবং শ্রমিকদের মজুরি যেন কোনো মতে বন্ধ না হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে’- এ অনুশাসনও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার ওই প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর এ অনুশাসন উল্লেখ করে বলেন, আপৎকালীন মজুরি বিবেচনায় বিজেএমসির মিলগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়াসহ মজুরি ও বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য অনুন্নয়ন ঋণ খাতে একশ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া যেতে পারে। এ বরাদ্দ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের অপ্রত্যাশিত খাত থেকে প্রদান করা যেতে পারে।

জানা গেছে, শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার অর্থ চেয়ে এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বিজেএমসি। সেখানে বলা হয়, বিজেএমসি নিয়ন্ত্রণাধীন পাট দ্রব্যের বিক্রয়যোগ্য মজুদ পাট পণ্যের পরিমাণ ৬৫ হাজার ৭৯১ মেট্রিক টন। এর বাজারমূল্য ৫৫১ কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে পাটজাত পণ্যের মৌসুম না। ফলে বহির্বিশ্ব থেকে পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশ না পাওয়ায় বাংলাদেশের বিক্রি অনেক কমেছে। আর্থিক সংকটের ফলে শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মজুরি পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

এতে মিলগুলোতে শ্রমিকদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৩৮১ কোটি টাকা বকেয়া বেতন-ভাতার পরিমাণ দাঁড়াবে।

বিজেএমসির আবেদনে শ্রমিকদের মধ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে ও আর্থিক দুরবস্থা বিবেচনা করে উল্লিখিত অর্থ প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, বিজেএমসিকে এর আগেও অনেক অর্থ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময় এ মন্ত্রণালয়ে অর্থ গেছে বেশি। এটি একধরনের নেতিবাচক দিক হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ শ্রমিকদের মজুরি দেয়ার দায়িত্ব বিজেএমসির। তারা লোকসান করছে যে কারণে এখন বাজেটের বাইরে এ মজুরি অর্থ দিতে হচ্ছে সরকারকে।

জানা গেছে, বিজেএমসির আওতায় ৩টি নন জুট প্রতিষ্ঠানসহ মোট ২৬টি মিল রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে ৭টি, চট্টগ্রামে ১০টি, খুলনায় ৯টি রয়েছে। পাট উৎপাদিত অঞ্চলের ১৮২টি কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে পাট কেনা হয়েছে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *