সাংবাদিকদের সাথে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মতবিনিময় রাজাকার স্বজনদের নির্বাচনে মনোনয়ন না দেয়ার আহবান

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা কমান্ড আগামী নির্বাচনে রাজাকার ও দালালদের স্বজনদেরকে মনোনয়ন না দেয়ার জন্য সরকারি দল ও বিরোধী দলের প্রতি আহবান জানিয়েছে। গত শনিবার দুপুরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এ আহবান জানানো হয়।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ড সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান, মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে এ দেশের আপামর জনসাধারনকে মুক্ত করতে জাতির ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা এবং আমাদের জীবনের সর্বশ্রেষ্ট গৌরব মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলাম। এ দেশের মুক্তিকামী আপামর জনসাধারণের সহযোগীতায় এবং বিশ্ববিবেকের মনস্তাত্বিক ও অর্থকরী সাহায্যে আমরা এ দেশকে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে শত্রু মুক্ত করে স্বাধীনতা এনেছিলাম। মুষ্টিমেয় কিছু সংখ্যক দেশদ্রোহী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে সহযোগীতা করেছিল। তা’রা সকল পর্যায়ে শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনী, আল বদর, আল শামস্ গঠন করে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে পাকিস্তানিজান্তাকে সাহায্য করেছিল। পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম, নারকীয় এবং নির্মমতম রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ডের মাধ্যমে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের কালোরাতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নিহত করে এবং একই সাথে মন্ত্রী পরিষদের বিশিষ্ট সদস্যদের হত্যা করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা ভেবেছিল এ দেশটিকে পাকিস্তানি ধারায় পাকিস্তানের করদ রাজ্যে পরিণত করতে। কিন্তু এ দেশের আপামর দেশপ্রেমিক জনগণ তা হতে দেয় নি। ২১ বছর পর স্বাধীনতার তথা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তিকে নিয়ে আওয়ামী লীগ আবারো নির্বাচিত হয়েছে। ২০০১ সালে আবারও জামাত-শিবির ও স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির বলয়ের পুনরুত্থান, ১/১১ এর সামরিক জান্তার মদদের সরকার এবং শেষ পর্যন্ত ২০০৯ এর ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের ঐক্যমতের সরকার জাতি আমাদেরকে উপহার দিয়েছে।’’

আমরা মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল আপামর দেশপ্রেমিক জনসাধারণকে আহবান জানাচ্ছি এদেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী সকল অপশক্তিকে নির্মূল করার জন্য। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে সিলেটের মাদ্রাসা মাঠে ৩, ৪ ও ৫ নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে ঐ সময়ে জীবিত সকল যুদ্ধকালীন সেক্টর কমান্ডারদের উপস্থিতিতে আমরাই আবার নতুন করে ’৭১ এর ঘাতক দালালদের তৎকালীন মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার দাবী করেছিলাম। এবং পরবর্তীকালে নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ সরকার এ দুঃসাহসী কাজটুকু করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করায় আমরা কৃতজ্ঞ। শুধু তাই নয় এ দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং উন্নয়নের রোল মডেলে রূপান্তরিত করেছেন বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ও বেঁচে থাকার ন্যূনতম ব্যবস্থা করে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের গবেষনার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সমাগত। এ নির্বাচন হোক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অভিযাত্রা। এ জাতীয় নির্বাচনে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। আমরা এখানে দুটি ঘটনা উল্লেখ করতে চাই। একটি হলো-কিছুদিন পূর্বে ছাতকের উপজেলা আওয়ামীলীগের নাম করে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী বিশিষ্ট দালালকে মুক্তিযুদ্ধের সহায়ক হিসেবে চিহিৃত করে তার স্বজনদের সরকারি দলের মনোনয়ন দেওয়ার আহবান জানানো হয়েছে।

একই ভাবে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামীলীগ একজন রাজাকার তনয়কে মনোনয়ন না দেয়ার জন্য সরকারি দলের প্রতি আহবান জানিয়েছে। এ সমস্ত ঘটনায় নির্বাচনের প্রাক্কালে সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলের কাছে আমাদের দাবী হচ্ছে- এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ ব্যক্তির রয়েছে। এ দেশে রাজনীতি করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হতে হবে এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোন পরিবারের সন্তান হওয়া চলবে না। সরকারী বা বিরোধীদল কোথাও ’৭১ এর রাজাকার, আলবদর, আল শামস বা বর্তমান জামাত-শিবির পরিবারের কোন সদস্যের রাজনীতি করার অধিকার থাকতে পারেনা। সকল রাজনৈতিক দলের কাছে আহবান জানাচ্ছি তারা যেন কোন স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান তথা মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজাকার, আলবদর, আল শামস, শান্তি কমিটির সদস্যের সন্তানদের মনোনয়ন না দেন। জামাত শিবির ও স্বাধীনতা বিরোধী যারা সরকারী চাকুরীতে বহাল আছে তাদের তালিকা করে সরকারী চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হোক এবং সরকারী চাকুরীতে নতুন করে তাদের নিয়োগ বন্ধ করা হোক। যুদ্ধাপরাধীদের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি ও জামাত-শিবির তথা স্বাধীনতা বিরোধীদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানসমূহ রাষ্ট্রের অনুকুলে বাজেয়াপ্ত করা হোক। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানক্ষুন্নকারী, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ এবং বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষকারীদের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের “ হলোকাস্ট এ্যাক্ট বা জেনোসাইড ডিনায়েল ল’ ” এর আদলে আইন করে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে বিচার করা হোক। একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করা হোক। বিচার কার্যকর করা হোক। যুদ্ধাপরাধীর দোসরদেরও বিচারের আওতায় আনা হোক।

সর্ব্বোপরি দেশবাসী সহ আপামর জনসাধারণের কাছে আমাদের আহবান থাকবে, আসুন, এদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ একটি উন্নত জাতি রাষ্ট্রে পরিণত করি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সহ সকল রাজনৈতিক দল থেকে সৎ, নিষ্ঠাবান, দেশপ্রেমিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে মনোনয়ন ও নির্বাচিত করি।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সকল নির্বাচিত কমান্ডারবৃন্দ।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *