ট্রাফিক আইন চলে পুলিশ টোকেনে:বন্ধ হচ্ছে না টোকেন ব্যবসা

সাহাদত ইসলাম সুমন :: সিলেট মহাসড়কে বন্ধ হচ্ছে না পুলিশের টোকেন ব্যবসা। বন্ধ হচ্ছে না অথৈ যানবাহন ও সড়ক দূর্ঘটনা। রোডপারমিট ছাড়া ছোট যানবাহন চলাচলের ফলে অহরহ ঘটছে প্রাণহানী।

আইন সবার জন্য সমান! এই শ্লোগান সামনে রেখে গত ৬ আগষ্ট থেকে ট্রাফিক সপ্তাহ। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের দাবী পূরণ করতে নতুন আইন তৈরী হচ্ছে। ইতিমধ্যেই মন্ত্রী সভায় প্রস্তাব পাস করা হবে। যে আইন নিয়ে ছাত্র আন্দোলন করা হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম ড্রাইভিং লাইসেন্স,গাড়ির ফিটনেস, রোড পারমিট।

এগুলো দেখার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের। কিন্ত এই ড্রাইভিং লাইসেন্স,ফিটনেস, রোড পারমিট পরিবর্তে প্রতি মাসে ৫ শত ১২ শত টাকার ‘‘স্টিকার’’ (পুলিশ টোকেন) বিক্রি করাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। তাদের নির্দিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে স্টিকার গাড়ির সামনের গ্লাসে লাগানো হলে ট্রাফিক সার্জেন্ট সিগন্যাল করবেনা। এই স্টিকার ক্রয় করলে গাড়ির কাগজপত্র ও চালকের লাইসেন্স না হলে চলবে। রেজিস্টেশন হউক বা নাইবা ইউক স্টিকার থাকতে হবে। যদি কোন চালক এই স্টিকার না ক্রয় করেন তাহলে যতই বৈধ কাগজপত্র হউক,তাকে হয়রানির স্বীকার হতেই হবে। এই স্টিকার এর জন্য একেক লাইনে এক একজন দায়িত্ব পালন করছেন। ট্রাফিক পুলিশ যেকোন গাড়ি দাড় করিয়ে ১০ টাকা থেকে হাজার টাকা আদায় করতে দেখা যায়।

অনুসন্ধান দেখা যায়, সিলেট জেলার বিভিন্ন রোডে প্রতিটি অটোরিকশা সিএনজি গাড়ির সামনের গ্লাসের বিভিন্ন নামে স্টিকার রয়েছে। যেমন-দৈনিক আজকের জনবানী, ইউনিটি ফর ইউনির্ভাস হিউম্যান রাইটস অফ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, দক্ষিন সুরমা ভূইয়ার পাম্প ভার্থখলা, দক্ষিন সুরমা সিলেট, ‘‘ঞ’’ ঝ অ-১০ ইত্যাদি। একেক লাইনের জন্য এবেংক ধরনের স্টিকার করা-হয়েছে। সিলেট আম্বরখনা ষ্ট্যান্ড, শিবগঞ্জ সাদিপুর ষ্ট্যান্ড, হরিপুর ষ্ট্যান্ড, পীরের বাজার ষ্ট্যান্ড,তামাবিল দাসপাড়া বাইপাস ষ্ট্যান্ডে এ ধরনের স্টিকার লক্ষ্য করা যায়। প্রতি মাসে এই স্টিকারের রং এবং মার্কা বদলি-করা হয়। অনেক স্টিকার তারিখ ও মাসের নাম উল্লেখ করা থাকে। আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন-একি নামের স্টিকারের মধ্যে কখনো বিশ্বকাপ, কখনো আপেল, কখনো কবুতর প্রতিক দেখা যায়। এসব স্টিকার (পুলিশ টোকেন) লাগানো গাড়ি ট্রাফিক সার্জেন্ট সিগন্যাল করবে না। কারন এই স্টিকারের মালিক প্রতি মাসে ট্রাফিক সার্জেন্ট ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা কে বড় অংকের টাকা দিয়ে আসছে। ওদের সাথে অনেক সাংবাদিক ও রাজনীতিক নেতা জড়িত রয়েছেন। যার কারনে-তাদের দেওয়া স্টিকার ওয়ালা গাড়ি ধরতে পারবেন না। বিশ্বরোড সহ তাদের দেওয়া নির্দিষ্ট সীমানায় গাড়ি চালাতে পারবে। অটোরিকশা মালিক ও চালকের মধ্যে অনেকে জানান, এই সব স্টিকার না হলে বিশ্ব রোড ও শহরে গাড়ি চালানো যায় না। তাই প্রতি মাসে ৫ শত টাকা থেকে ১২শত টাকা দিয়ে দালালদের মধ্যে স্টিকার কিনে নিতে হয়। তাহলে নিশ্চিন্তে গাড়ি চালানো যায়। আমাদের সিলেট জেলায় প্রায় ৪০ হাজার অটোরিকশা আছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বি আর টি এ) সিলেট অফিস থেকে জানা যায় ২১ হাজার ২৩২টি অনটেষ্ট গাড়ি রয়েছে তালিকা ভূক্ত ছাড়াও আরো অনেক রয়েছে। যদি গড়ে ২৫ হাজার অটোরিকশা ১ হাজার টাকা করে একটি স্টিকার ক্রয় করে,তাহলে প্রতি মাসে আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ট্রাফিক সার্জেন্টের কর্মকর্তারা ও তাদের সহচাররা। এদিকে অটোরিকশা যদি রেজিষ্টেশন করার সুযোগ থাকতো, তাহলে সিলেট জেলায় ২১ হাজার ২৩২টি গাড়ি থেকে সরকার রাজস্ব পেতো প্রতি গাড়ি থেকে ১৫-১৮ হাজার টাকা করে। সাথে প্রতি বৎসরে রোড পারমিট বাবদ ৭-৯ হাজার টাকা করে।

অতএব সরকার কয়েক শত কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার একদিকে রোড পারমিট ফিটনেস, ড্রাইভিং লাইসেন্সের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কয়েক হাজার কোটি টাকা। সরকার এই সব গাড়ি রেজিষ্টেশন বন্ধ করায় যেমন অটোরিকশা গাড়ির মালিকরা চরমভাবে ভোগান্তি করছেন। মধ্যভাগে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। তার কোন খবর নাই।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *