মুসলিমদের জন্য বহু তাৎপর্যপূর্ণ দিন ‘আশুরা’

ধর্ম ও দর্শন ডেস্ক:: মহররম মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। আরবি ‘আশারা’ অর্থ দশ। সেই সুবাদে ওই তারিখ আশুরা বলে উল্লেখিত হয়ে আসছে। ১৩৭৯ বছর আগে ৬১ হিজরির এই দিনে সংঘটিত হয়েছিল বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে বিয়োগান্তক ঘটনা বা ট্র্যাজেডি। শুধু তাই নয় এই ১০ মহররমে সৃষ্টির শুরু লগ্ন থেকেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত করেছেন।

এই আশুরার দিনে হযরত আদম (আ:) কে সৃষ্টি করা হয়। আবার এই দিনে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেন। এই তারিখেই জান্নাত হতে পৃথিবীতে প্রেরিত হন ও বহু বছর পর এই তারিখেই আরাফাতের ময়দানে জাবালে রহমতে তিনি এবং বিবি হাওয়া (আ:)-এর পুনরায় সাক্ষাৎ লাভ হয় ও তাঁদেরকে মার্জনা করা হয়।

এছাড়াও আকাশ, বাতাস, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, জান্নাত-জাহান্নাম, লাউহু মাহফুজ ও যাবতীয় সৃষ্টিজীবের আত্মা সৃষ্টি করেছেন। আবার এ দিনেরই কোনো এক জুমাবারে হযরত ইসরাফিল (আ.) এর ফুঁৎকারে নেমে আসবে মহা প্রলয়। পবিত্র কোরআনের ভাষায় যাকে বলা হয় কেয়ামত। এছাড়াও ইসলামের আরো অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে এ আশুরাতেই।

এমনিভাবে এ দিনে জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম আ. জন্মগ্রহণ করেন, আবার এদিনেই নমরুদের বিশাল অগ্নিকুণ্ড হতে মুক্তিলাভ করেন। এই আশুরাতেই তুর পাহাড়ে আল্লাহর সাথে হযরত মুসা আ. কথোপকথন ও আসমানী কিতাব ‘তাওরাত’ লাভ করেন, আবার এই ১০ই মুহাররমেই জালেম ফেরাউনের দলবলসহ নীল দরিয়ায় সলিল সমাধি হয়। (দ্রষ্টব্য, বুখারি-৩৩৯৭, মুসলিম-১১৩৯)।

পবিত্র আশুরায় সর্বশেষ যেটা ঘটেছে তা হচ্ছে রাসূল (সা) এর নয়নমণি, ‘রায়হানাতাই রাসূলিল্লাহি’ অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সা.) এর দুই ফুল’র শেষ ফুল ইমাম হুসাইন (রা) এর শাহাদাত। যা মুসলিম জাতির হৃদয়ের রক্তক্ষরণ ও বেদনাদায়ক ঘটনা।

এই মাসের পবিত্রতা ও আশুরার বিশেষত্ব সম্পর্কে আল-কুরআনুল-কারীম এবং হাদীস শরীফের কয়েকটি উদ্ধৃতি :

ইসলামের হারাম ৪টি মাসের একটি হল মহররম। বর্ষ গণনার রীতি এবং মাস সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন যে, ‘নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করার দিনে মাসসমূহের গণনা আল্লাহর নিকট বারো মাস, তন্মধ্যে ৪টি হারাম মাস। তোমরা নিজেদের মধ্যে এসবের যুল্ম করো না। আর তোমরা মুশরিকদের সাথে ব্যাপকভাবে যুদ্ধ করো যেমনিভাবে তারা তোমাদের সাথে ব্যাপকভাবে যুদ্ধ করে, আর জেনে রাখো আল্লাহ মুত্তাকীদের সঙ্গেই রয়েছেন’ (সূরা আত-তাওবা, আয়াত ৩৬)।

মহাররম মাসে যুদ্ধ হারাম। তবে যদি প্রতিপক্ষ কাফির-মুশরিক চড়াও হয় ও আক্রমণ করে তাহলে যুদ্ধ করে তাদেরকে ঘায়েল করা বৈধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মুকাতিল ইব্ন হায়্যান ও ইব্ন জুরাইজ (রা:) হতে বর্ণিত রয়েছে, ‘সাহাবীগণের একদল মহররম মাসে মুশরিকদের একদল লোকের সাক্ষাৎ লাভ করেন। তখন মুসলিম পক্ষ প্রতিপক্ষকে নিবৃত্ত রাখতে চাইলেন, যাতে তারা হারাম মাসে যুদ্ধ না করে। তারপর মুশরিক পক্ষ অস্বীকৃতি জানিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হতে প্রতিজ্ঞ হলো ও অকস্মাৎ তাদের ওপর চড়াও হলো। তখন মুসলিমগণ তদের প্রতিহত করলেন ও যুদ্ধে লিপ্ত হলেন। এরপর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁদেরকে বিজয় দান করেন (ইবন কাছীর, তাফসীরে ইবন কাছীর, ৫ম খন্ড, ৪৪৯)।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *