নিউজ ডেস্ক:: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে কারা অভ্যন্তরে স্থাপিত আদালতে বিচার চলবে কিনা- সে বিষয়ে আদেশ আজ। খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়েও আজ আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন।
১৩ সেপ্টেম্বর কারাগারের ভেতরে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতের বিচারক (ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ) ড. মো. আখতারুজ্জামান শুনানি শেষে আদেশের এ দিন ধার্য করেন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা সেদিন আদালতকে বলেছিলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) কেন আদালতে আসছেন না, তার শরীরের অবস্থা কি- সব কিছু দেখার জন্য এবং কথা বলার জন্য তার সঙ্গে দেখা করা দরকার।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলে এসে আদালতে তারা শুনানি করবেন বলেও বিচারককে অবহিত করেন। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত দুই আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার বুধবার বিকাল ৪টায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন।
জানতে চাইলে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। তিনি পা নাড়াতে পারছেন না। হাতের আঙুল বাঁকা হয়ে গেছে। পায়ের সমস্যার কারণে গত ৫ সেপ্টেম্বরের পর একদিন বাথরুমে পড়ে যান।
খালেদা জিয়ার বরাত দিয়ে তিনি (সানাউল্লাহ মিয়া) বলেন, ‘আদালতে যাওয়ার ব্যাপারে ওনার (খালেদা জিয়া) কোনো অনাগ্রহ নেই। তিনি আমাদের বলেছেন তিনি সুস্থ হলে আদালতে যাবেন। তার অসুস্থতা নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে ভুল বুঝিয়েছে। অথচ ছেলের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনও তিনি (খালেদা জিয়া) আদালতে গিয়েছেন। কারাগারের ভেতর যে আদালত বসানো হয়েছে, সেটির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। সেখানে বসে থাকার পরিবেশ নেই।’
খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবি জানিয়ে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘তিনি (খালেদা) সুস্থ থাকলে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অবস্থিত আদালতে যেতেও তার সমস্যা নেই।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি হতে চান। তিনি বিএসএমএমইউ হাসপাতালে যাবেন কিনা এ বিষয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার পর সিদ্ধান্ত দেবেন।’
খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, শারীরির অবস্থা কেমন, আদালতে যেতে পারবেন কিনা- তা খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চেয়েছিলাম। তিনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন, আমি আমার রুমের মধ্যে চলাচল করতে পারি না। গত পরশু বাথরুমে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়েছিলাম। দৌড়ে এসে দু’জন আমাকে ধরেন। এতে করে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছি।
আদালতে যেতে অনিচ্ছকু কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, আমি কারা কর্তৃপক্ষকে কখনও বলেনি যে আমি কোর্টে যেতে অনিচ্ছুক। আমি সব সময় আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এ শ্রদ্ধাবোধ আগেও ছিল, এখনও আছে। তবে আমার শরীর যেহেতু অসুস্থ, এ মুহূর্তে আমার চিকিৎসা সবচেয়ে জরুরি। আমি চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হলে আদালতে যাব। আমি বিচার মোকাবেলা করতে চাই। আদালতের প্রতি আমার অনাস্থা নেই। কারা কর্তৃপক্ষ আমার সম্পর্কে লিখেছে যে, আমি নাকি আদালতে যেতে অনিচ্ছুক, কথাটি ঠিক নয়। কারণ আমি নিজে কোর্টে উপস্থিত হয়ে বলেছি, আমার শরীর খুবই অসুস্থ। আমার পক্ষে কোর্টে বসে থাকা সম্ভব নয়। সে কারণেই আমি আদালতে যেতে পারেনি। আমার সম্পর্কে অসত্য বক্তব্য দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। আমি সুস্থ হলেই আদালতে যাব।
খালেদা জিয়া আরও বলেছেন, আমি পা ঝুলিয়ে বসতে পারি না। আমি যেখানে বসি, তার বরাবর পা তুলে বসতে হয়। আমার বাম পা ও বাম হাত প্রায় অবশ। আমি নিজ হাতে খেতে পর্যন্ত পারি না। এতটাই অসুস্থ আমি।
এদিকে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তির প্রস্তুতি চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। যে কোনো দিন তাকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে নেয়া হতে পারে। বিষয়টি খালেদা জিয়াকেও জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
তবে বিএসএমএমইউতে ভর্তির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি খালেদা জিয়া। এ বিষয়ে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি সিদ্ধান্ত দেবেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী এবং কারা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে ভর্তির জন্য রোববার সুপারিশ করে তার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে বিএসএমএমইউতে যান আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন। খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করলে কোথায় রাখা হবে, কিভাবে তার চিকিৎসা চলবে এসব বিষয়ে বিএসএমএমইউর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির চৌধুরী বলেন, বিষয়টি খুবই সেনসেটিভ (স্পর্শকাতর)। তাই এ নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না।
জেলার মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠন করা মেডিকেল বোর্ড যে ধরনের পরামর্শ দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ সে অনুযায়ী কাজ করছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রস্তুতি চলছে। তবে কখন হাসপাতালে নেয়া হবে সে বিষয়ে এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না।
দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল ১৩ সেপ্টেম্বর মৌখিকভাবে আদালতে আবেদন করে বলেন, খালেদা জিয়া আদালতে আসতে চাচ্ছেন না। আর তিনি না আসার কারণে অপর দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছেন না তাদের আইনজীবী। এভাবে যুক্তিতর্ক শুরু না করলে আপনি (বিচারক) এ মামলার যুক্তিতর্ক সমাপ্ত করে রায়ের দিন ধার্য করে দিন। খালেদা জিয়া আদালতে না এলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতের বিচার কাজ পরিচালনার কথা বলেন দুদকের এ আইনজীবী।
তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেছেন, আদালতের প্রতি অনাস্থা নয়, অসুস্থতার কারণেই আদালতে আসতে পারেননি খালেদা জিয়া। তার দাবি, কারা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টিকে আদালতে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর ৮ ফেব্র“য়ারি থেকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া।