আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: পাকিস্তান রিপ্যাট্রিয়েশন কাউন্সিল (পিআরসি) বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। সৌদি আরবের জেদ্দায় অবস্থিত মেহরান রেস্তোরাঁয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এমন জোরালো আহ্বান জানানো হয়।
অনলাইন সৌদি গেজেট এ তথ্য দিয়ে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নিয়ে পুনর্বাসনের দাবি জানাতে ওই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সৌদি আরবের সুপরিচিত কলামিস্ট ও সাবেক কূটনীতিক ড. আলি আল ঘামদি। তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফের নির্বাহী সদস্য ফারুখ রশিদ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেদ্দায় পিটিআইয়ের সভাপতি আহমেদ বশির ও ইঞ্জিনিয়ারস ওয়েলফেয়ার ফোরামের সভাপতি ড. আবদুল আলিম খান।
আল ঘামদি সভাপতির ভাষণে এমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য পিআরসি’কে ধন্যবাদ জানান। তিনি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইমরান খানের বক্তব্য তিনি শুনেছেন। সাধারণ মানুষ যেসব সমস্যার মুখোমুখি তা সমধানে তিনি যে দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেছেন তার জন্য তিনি সন্তুষ্ঠ। দরিদ্রদের কাজের বিষয়ে ইমরান খান যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাকেও স্বাগত জানিয়েছেন আল ঘামদি। একই সঙ্গে দেশে যেসব নাগরিকদের দিকে অবহেলার চোখে তাকানো হয় তাদের বিষয়ে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইমরান খান তারও প্রশংসা করেন তিনি।
আল ঘামদি বলেন, এটাই ইসলামের শিক্ষা। এটাই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর বার্তা। তিনি বলেন, একটি জাতির বিশ্বাসযোগ্যতাকে নির্ধারণ করা হয় কিভাবে তারা দরিদ্র মানুষ ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আচরণ করে তা দিয়ে। এর প্রেক্ষিতে আমরা ইমরান খানের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো প্রায় আড়াই লাখ দেশপ্রেমিক পাকিস্তানির বিষয়ে। তারা ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশে আটকা পড়ে আছেন ।
আল ঘামদি আরো বলেন, এসব মানুষ ১৯৪৭ সালে ভারত থেকে তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশ) চলে গিয়েছিলেন। তারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষ নিয়েছিলেন। পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের পর তারা নব সৃষ্ট বাংলাদেশে আটকা পড়ে যান। এরপর তারা নানা লাঞ্ছনা, গঞ্জনার শিকার হয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, তাদেরকে মেনে নেয়া পাকিস্তানের নৈতিক ও আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পাকিস্তানের শীর্ষ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত তাদেরকে পাসপোর্ট ইস্যু করে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে পুনর্বাসন করা। পাকিস্তানের প্রতি অনুগত এমন প্রায় আড়াই লাখ নাগরিককে ফিরিয়ে নিয়ে তাদেরকে মেনে নেয়া ২০ কোটি মানুষের একটি দেশের জন্য কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এ সমস্যা সমাধানে ওআইসি, এমডব্লিউএল, ইউএনএইচসিআর ও পিআরসির আর্থিক প্রস্তাব সহায়ক হতে পারে।
প্রধান অতিথির ভাষণে ফারুক রশিদ বলেন, বিদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানিদের অধিকার সুরক্ষিত রাখার জন্য জোরালো অবস্থান নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এসব পাকিস্তানি এখনও বিভিন্ন দেশের জেলে বন্দি আছেন। এ সময় আটকে পড়া পাকিস্তানিদের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দৃষ্টিতে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ফারুক রশিদ, যাতে তিনি বিষয়টি পর্যালোচনা করে একটি সমাধানের দিকে এগুতে পারেন। এ সময় তিনি পিআরসিকে আহ্বান জানান ‘নিজস্ব অর্থায়নের ভিত্তিতে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের দেশে ফেরত ও তাদের পুনর্বাসন’ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পেশ করতে। অনুষ্ঠানে ড. আবদুল আলিম খান ইমরান খানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফেরত নেয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া উচিত এবং এ বিষয়ে একটি সমাধানে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।