প্রসঙ্গ:”জন্মাষ্টমী ও শ্রীকৃষ্ণ “

-নিলয় গোস্বামী।

———————******——————–

শ্রীকৃষ্ণকে- হিন্দুরা ভগবান হিসেবে বিশ্বাস করে।
ভক্তি ভরে পূজা করে। শ্রীকৃষ্ণ – ছিলেন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বলা যায়-একে বারে প্রথমদিককার সফল,শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তিঁনি।মেধাবী পুরুষ। রাখাল বালক থেকে শ্রম, মেধা,আর মননে প্রতাপশালী, সর্বজন শ্রদ্ধেও, শ্রেষ্ঠ রাজা হয়েছিলেন।
.
ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ যাঁ’রা আছেন :রোলান্ড রেগান,ফ্রাঙ্কলিন রুসভেল্ট,নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, উইনস্টন চার্চিল,আব্রাহাম লিঙ্কন তাঁদের রাজনৈতিক চর্চা আর প্রায়োগিক কৌশল শ্রীকৃষ্ণ অনেক আগেই ব্যবহার করে গেছেন।
.
ঐতিহাসিক প্রমাণ এবং শাস্ত্রীয় বিবরণ অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল ৩২২৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ১৮-ই আগস্ট।অষ্টমী তিথিতে। ভগবানের ভূমিষ্ঠ হওয়ার এই দিনকেই জন্মাষ্টমী হিসেবে পালন করা হয়।
হিন্দুদের বিশ্বাস, ঐতিহাসিক সাক্ষ্য, পৌরাণিক তত্ত্ব অনুযায়ী দ্বাপরযুগে ভগবানের আবির্ভাব হয়েছিল শ্রীকৃষ্ণ অবতার রুপে।ধর্মের জয় আর পাপীদের ধ্বংসের নিমিত্তেই তার পৃথিবীতে আগমন।তিনি দ্বারকার রাজা ছিলেন(বর্তমান গুজরাট)।দ্বাপর যুগের ধার্মিক, সৎ, অাদর্শ মানুষের প্রাণপুরুষ।পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব।
.
বিশ্বের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ কূটনীতিবিদ যাঁ’রা :বিসমার্ক, অ্যাড্রিক ইভো, হেরাল্ড নিকোলসন, তাঁদের যে সকল কূটনৈতিক পারদর্শিতার কথা শুনেছি -সব গুলো মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ ব্যবহার করে গিয়েছেন।
মহাভারত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহাকাব্যের মধ্যে একটি- আর এটি অধ্যয়ন করে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে বেশিরভাগ সময় শ্রীকৃষ্ণকে শ্রেষ্ঠ কূটনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখা যায় বললে-
শ্লাঘার অতিরঞ্জন করা হবেনা।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধটা যেন না হয় – সে জন্য কুরু ও পাণ্ডবগণের সাথে ইনটেনশিভ নেগোশিয়েশন করেছেন ছয় মাস।
দুই পক্ষকে মুখোমুখি বসিয়ে অনেকবার চেষ্টা করেছেন সমঝোতার।
পাপীরা যুদ্ধ ছাড়া কিছুই মেনে নেয়নি।
.
শুধু রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন তিনি -প্রেমের অনেক বড় দূত।বোন সুভদ্রাকে মহাভারতের সবচেয়ে বড় বীর অর্জুনের সাথে প্রেম করিয়ে দেন।বিয়েতে ঝামেলা হলে-দুজনের বিয়ে দিয়ে দেন।
জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার শুদ্ধ,পবিত্র প্রেমের নিদর্শন
রাখেন রাধার সাথে মেলবন্ধন করে।
.
কৌরব সভায় দ্রৌপদীর সম্মান বাঁচিয়েছেন।স্বামীরা যখন চুপ ছিলেন – তখন শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীর সম্মান রক্ষা করে প্রমাণ করেছিলেন,শাস্ত্র নয়,ভীরুতা নয়,রাজবিধি নয় আত্নার সাড়া আর বিবেক-ই ধর্ম।

.
এই দিনটি প্রভুর জন্মদিন।পৃথিবী ধন্য হয়েছিল স্রষ্টাকে পেয়ে।
ছোট বেলা থেকেই শুনে এসেছি ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে নজরুল ইসলামের কিছু কালজয়ী গান।
জন্মাষ্টমীতে কাজী নজরুল ইসলামের গানে শ্রীকৃষ্ণের দর্শন ও ব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি।

“তিমির-বিদারী অলখ-বিহারী
কৃষ্ণ মুরারী আগত -ঐ”

“মোর মাধব শূন্য মাধবী কুঞ্জে”

“বিশ্ব ভাবি ওঠে স্তব নমো নমঃ
আবির পুরী -মাঝে এল অরিন্দম ”

“হে পার্থ সারথি! বাজাও বাজাও পাঞ্চজন্য শঙ্খ ”
.

শ্রীকৃষ্ণের জীবনী পাঠ ও কাজ মানব সমাজে সৌভ্রাতৃত্ব
ও সম্প্রীতির বন্ধনে বিশ্ব সমাজকে আবদ্ধ করার শিক্ষা দেয়। শান্তিময় বিশ্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন তথা জন্মাষ্টমী জাতি,ধর্ম,নির্বিশেষে আমাদের মাঝে প্রতিবছর নিয়ে আসুক এক শুভ আনন্দময় বার্তা।
“শুভ জন্মদিন শ্রীকৃষ্ণ “

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *