সিলেটে যে ভিডিও ভাইরাল

নিউজ ডেস্ক:: ষাট বছর বয়সী এক মহিলার আর্তনাদের ভিডিও ফেসবুক থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাল হওয়া এ ভিডিওতে তাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ করেছেন ওই মহিলা। আর ভিডিওটি নিয়ে তোলপাড় চলছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকায়। ভিডিওর অভিযোগের সত্যতা খুঁজতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঘটনাকালীন সময়ে উপস্থিত লোকজনকে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি হচ্ছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কুচাই ইউনিয়নের পশ্চিমভাগ গ্রামের বাসিন্দা আবদুল জব্বারের স্ত্রী সুরেনা খাতুনের।

ভিডিওতে সুরেনা খাতুন অভিযোগ করেন- কুচাই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার আহমদ আলীর নির্দেশে ১৯শে আগস্ট তিনি তার ছেলে মো. বকুল মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে যান কুচাই ইউনিয়ন পরিষদে। সেখানে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা মিলে ঈদ পূর্ববর্তী ভিজিএফ’র চাল বিতরণ করছিলেন। প্রচুর লোকজনের সমাগমও ছিল ইউনিয়ন পরিষদের চত্বরে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর সুরেনা খাতুন চাল আনতে চেয়ারম্যানের কাছে যান।

এ সময় চেয়ারম্যান আবুল কালাম তাকে বলেন- ‘তোমার নাম তালিকায় নেই। সুতরাং তোমাকে এখনই চাল দেয়া হবে না। পরে আসো।’ এ সময় সুরেনা বেগম চেয়ারম্যানকে চাল দেয়ার জন্য চাপাচাপি করলে তাকে থাপ্পড় দিয়ে ফেলে দেয়া হয়। এ দৃশ্য দেখে তার ছেলে এগিয়ে এলে কয়েকজন লোকজন ছেলে বকুল মিয়াকেও মারধর করে। একপর্যায়ে তারা মা ও ছেলেকে মারধর করে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে নিয়ে আসে।

ঘটনার পর বাড়ি ফিরে স্থানীয় লোকজনকে ঘটনাটি জানালে কয়েকজন যুবক ওই মহিলা ও তার স্বামীর বক্তব্য মোবাইল ফোনে ধারণ করে ফেসবুকে আপলোড করে দেয়। এরপর ওই দিন থেকে ভিডিওটি ছড়াতে থাকে। এক পর্যায়ে ভাইরাল হয়ে যায়। ঘটনার বক্তব্য শুনে অনেকেই ফেসবুকে এ ঘটনার বিচার দাবি করেও মন্তব্য করেছেন। এদিকে- ঘটনার দিন রাতে কুচাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালামের বিরুদ্ধে স্থানীয় মোগলাবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সুরেনা খাতুন। এজাহারে তিনি দাবি করেছেন- চেয়ারম্যান আবুল কালাম ও তার লোকজন তাকে ও তার ছেলেকে ভিজিএফ’র চাল না দিয়ে মারধর করেছে। মোগলাবাজার থানার ওসি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী গতকাল বিকালে জানিয়েছেন- ভিডিওটি ভাইরালের খবর তিনিও শুনেছেন। এছাড়া সুরেনা খাতুন থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে একজন সাবইন্সপেক্টরকে তিনি তদন্তের দায়িত্বে দিয়েছেন। তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। সুরেনা খাতুন পশ্চিমভাগ গ্রামের প্রয়াত চেয়ারম্যান আবুল হোসেন ইজ্জাদ মিয়ার বাড়িতে প্রায় ১৫ বছর ধরে বসবাস করছেন। তার স্বামী আবদুল জব্বার একজন কৃষক।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আহমদ আলীর নির্দেশে চাল আনতে ইউনিয়ন অফিসে গিয়েছিলেন বলে জানান সুরেনা খাতুন। ফলে তার নাম তালিকায় আছে কী নেই সেটি তার জানারও কথা নয়। যা বুঝার মেম্বারই বুঝবেন। কিন্তু তাকে ও তার ছেলেকে প্রকাশ্যে মারধর করলেও কেউ ভয়ে এগিয়ে এসে তাদের পাশে দাঁড়াননি। ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার আহমদ আলী জানিয়েছেন- ওই মহিলা দরিদ্র হওয়ার কারণে তিনি নিজেই তাকে ইউনিয়ন অফিসে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। মেম্বারের দেয়া টোকেন নিয়ে মহিলা গিয়েছিলেনও। কিন্তু তালিকায় নাম না থাকায় তাকে পরে আসার কথা বলা হয়। তবে- তালিকায় নাম থাকলেও অনেক দরিদ্র মানুষকে ইউনিয়ন থেকে চাল দেয়া হয়।

এদিকে- কুচাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম ঘটনাটি অস্বীকার করে বলেছেন- যারা ওই মহিলার মিথ্যা বক্তব্য ভাইরাল করেছে তারাই অপরাধ করেছে। তিনি উল্টো ওই ভাইরালের বিচার দাবি করেন। বলেন- তার প্রতিপক্ষ মহিলাকে তার কলোনির ভেতরে একটি চেয়ারে বসিয়ে যা বলতে বলেছে মহিলা তাই বলেছে। ওটা ষড়যন্ত্রকারীদের শিখিয়ে দেয়া বুলি। এতে তার মান সম্মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তিনি বলেন- যে দিনের কথা বলা হচ্ছে সেই দিন ইউনিয়ন কার্যালয়ে প্রায় ১৪শ’ মানুষ ছিলেন। এছাড়া তার পরিষদের সবাই উপস্থিত ছিলেন। এ ধরনের ঘটনা তো কেউ দেখেননি। সুতরাং মহিলা ও তার স্বামীর বক্তব্য গভীর চক্রান্তের অংশ বলে দাবি করেন চেয়ারম্যান আবুল কালাম।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *