হবিগঞ্জে কামাররা ব্যস্ত, বেড়েছে ছুরি-চাকু’র দাম

আজিজুল ইসলাম সজীব:: পবিত্র ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু’র মাংস কাটার উপকরণ তৈরি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন হবিগঞ্জের কামাররা। তবে কয়লা, লোহার দাম বেড়ে যাওয়ায় অন্যান্য বছরের চেয়ে এবারে দা-বটি, ছুরি ও চাপাতির দাম কিছুটা বেশি নিচ্ছেন তারা।

অপরদিকে ঈদুল আযহার আরো দেড় সপ্তাহ বাকি থাকায় দা, বটি ও ছুরিসহ অন্যান্য মাংস কাটার উপকরণ পুরোদমে বিক্রি শুরু হয়নি। দিন-রাত টুং-টাং শব্দে জিনিস তৈরির কাজ করছেন কর্মকাররা। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে কামারদের ব্যস্ততা। কোরবানি দাতারা কোরবানির পশু কাটাছেঁড়া করার জন্যে পরিবারের ব্যবহৃত-অব্যবহৃত দা-বটি ও ছুরি শান দেওয়ার জন্যও কামারদের কাছে নিয়ে আসছেন। আবার অনেকেই আগে থেকে দা-বটি, ছুরি, কুড়াল চাকু ক্রয় করে নিচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কামাররা কোরবানীর মাংস কাটার জিনিস তৈরি করছেন।

কামারদের দোকানগুলোতেও অন্য সময়ের চেয়ে মৌসুমী কর্মচারীর সংখ্যাও বেড়েছে। কর্মচারীর সংখ্যা বাড়ায় কামাররা চাহিদামত দা, চুরি, বটি, চাকু, কুড়াল তৈরি করতে পারছেন। গত শনিবার বেলা ২টার দিকে হবিগঞ্জ শহরের কামারপট্টিতে গিয়ে দেখা গেছে, কামাররা দা, বঁটি, ছুরি, চাকু, কুড়ালসহ কোরবাণীর মাংস কাটার জিনিস তৈরির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

অনেক ক্রেতা পুরাতন দা, বঁটি, ছুরি, কুড়াল ধার বা শান দিয়ে নিচ্ছেন। আবার অনেকেই নতুন, দা, ছুরি বঁটি, কুড়াল ক্রয় করছেন। তবে ক্রেতারা বলছেন অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার দা, বঁটি, ছুরির দাম অনেকটা বেশি। কামারেরাও জানিয়েছেন কয়লা, লোহার দাম বেশি হওয়ার কারণে কোরবানীর গরুর মাংস কাটার দা, বঁটি, ছুরি, কুড়ালসহ অন্যান্য উপকরণ তৈরির কয়লা ও লোহা জাতীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

দোকানে সাজিয়ে রাখা সরঞ্জামাদির দাম জানতে চাইলে কর্মকাররা জানান, নতুন ছোট দা, ১শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ ও ৪শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারী দা সাড়ে ৪শ’ থেকে টাকা থেকে সাড়ে ৬শ’, ৭শ’, ৮শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কুড়াল ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় সাইজের চুরি সাড়ে ৩শ’ টাকা থেকে ৫শ’ টাকা, বিভিন্ন সাইজের চাকু একশ টাকা থেকে ৩শ’ টাকা, বটি ৫শ’ টাকা থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম আরো বাড়বে বলে জানান কর্মকাররা। হবিগঞ্জ শহরের কামারপট্টিতে কোরবানীর উপকরণ ক্রয় করতে আসা ব্যাংকার বোরহান উদ্দিন জানান, এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে কোরবানীর মাংস কাটার যন্ত্রপাতির দাম অনেকটা বেশি।

তিনি বলেন- গত বছরের বড় সাইজের যে দা ৪শ’ টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন এবার কর্মকার সেই দা’র দাম সাড়ে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা চাচ্ছেন কর্মকাররা। এছাড়াও কুড়াল, ছুরিসহ অন্যান্য উপকরণের দাম অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে।একাধিক ক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈদুল আযহা তথা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বটি, দা, বড় ছুরি ও কুড়াল, টাক্কালসহ গরুর মাংস কাটার উপকরণের দাম বেড়ে গেছে। এতে করে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দাম নেন কামাররা। বিষয়টি প্রশাসনের খতিয়ে দেখা দরকার। কামারপট্টির কর্মকার জানু মিয়া জানান, এ পেশায় এখন আগের মতো চাহিদা নেই।

সারা বছরই আমাদের অলস সময় কাটাতে হয়। তবে ঈদুল আযহা এলে এ পেশার মানুষদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে নতুন বটি, দা, বড় ছুরি ও ধামা তৈরি এবং পুরাতনগুলোতে শান দিতে নিয়ে আসেন আমাদের দোকানে। কর্মকাররা এ সময় দা, বঁটি, কুড়াল, ছুকি, চাকু তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। তিনি বলেন- এখনও পুরোদমে বিক্রি শুরু হয়নি। কয়েকদিন পর পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে। তিনি বলেন- সাধারণত স্প্রিং লোহা ও কাঁচা লোহা ব্যবহার করে দা-বঁটি ও ছুরি তৈরি করা হয়। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি উপকরণের মান ভালো হয়।

এবার কয়লাসহ লোহার দাম বেশি হওয়ার কারণে দা, বঁটি, ছুরি, চাকু, কুড়ালসহ অন্যান্য কোরবানীর মাংস কাটার উপকরণের দাম বেড়েছে। তাছাড়া সারা বছরের মধ্যে একটা সময়ই কামারের কিছু টাকা উপার্জন করার সময় পান। এ হিসেবে একটু দাম বেশি নেন। নারদ দেব কর্মকার জানান, গত চার-পাঁচ বছরে লোহার দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। শুধু লোহাই নয়, কয়লার দাম বেড়েছে। যে কারণে আমাদের দা, ছুরি, কুড়াল, চাকুসহ অন্যান্য কোরবানীর মাংস কাটার জিনিসের দাম বাড়তি নিতে হচ্ছে। এসব জিনিস তৈরির মালামালের দাম কমলে আমরা কম দাম নিতে পারবো।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *