সৌন্দর্যের লীলাভুমি চুনারুঘাটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যোন

আজিজুল ইসলাম সজীব:: সৌন্দর্যের লীলাভুমি চুনারুঘাটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যোন। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ/সংশোধন আইনের বলে ২৪৩ হেক্টর এলাকা নিয়ে ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে ‘সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই উদ্যানে সাতটি পাহাড়ি ছড়া আছে, সেই থেকে এর নামকরণ সাতছড়ি। সাতছড়ির আগের নাম ছিলো ‘রঘুনন্দন হিল রিজার্ভ ফরেস্ট’। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন পাহাড়ে অবস্থিত। উদ্যানটিতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতীর পাখি ও উভরচর প্রাণী। যার কারণে দর্শনার্থীদের অনেক পছন্দের স্থান এটি। কিন্তু এই উদ্যানে চলছে নিরব দুর্নীতি। টিকেট বিক্রি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপকর্মে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে ব্যাপক। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি অপকর্মে জড়িত রয়েছেন টিকেট সুপারভাইজার আবুল হোসেন ও টিকেট বিক্রেতা সন্ধ্যা রাণী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে প্রবেশের জন্য ১০ টাকার টিকিট কিনতে হয়। কিন্তু সম্প্রতি ওই টিকেটের মূল্য বৃদ্ধি করে ১০ টাকা থেকে ২৩ টাকা করা হয়। কিন্তু সন্ধ্যা রাণী ও সুভার ভাইজার আবুল হোসেন দর্শনার্থীদের কাছ থেকে ওই টিকেটের দাম রাখছেন ২৫  টাকা। আবার মোটরসাইকেল রাখার জন্য ২০ টাকা রাখছেন দর্শনার্থীদের কাছ থেকে। যদিও উদ্যানে আসা দর্শনার্থীদের কাছ থেকে মোটরসাইকেল পার্কিং ভাড়া রাখার কোন নিয়ম নেই। কেউ কোন প্রশ্ন করলে সন্ধ্যা রাণণি  তাদেরকে বলেন- এটি পুরনো টিকিট, তাই এখানে ২৩ টাকা লিখা। কিন্তু বর্তমানে প্রবেশ মূল্য ২৫ টাকা। অপর দিকে, এক শ্রেণির দর্শনার্থীদের কাছ থেকে কমিশন নিয়ে বিনা টিকেটেই ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। আর এ ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা রাখছেন সুপারভাইজার আবুল হোসেন। গ্রামের সহজ সরল অনেক দর্শনার্থীরা প্রতিদিন সেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে অথবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘুরতে যান। কিন্তু দর্শনার্থীরা গাড়ি থেকে নামার পরপরই আবুল হোসেন তাদেরকে বলেন- কম টাকায় ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দেবেন। অর্থাৎ ৫ জন দর্শনার্থীর ২৫ টাকা করে ১২৫ টাকা টিকিট আসবে। সে ক্ষেত্রে তিনি টিকিট ছাড়া ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দেবেন ১০০ টাকা দিলেই। ২৫ টাকা বাঁচানোর জন্য অনেক দর্শনার্থী টিকিট ছাড়া প্রবেশ করছেন। এভাবে প্রতিদিন ওই দুইজন লোক হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। প্রতিবছর সরকার এখান থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব পায় এর চেয়ে বেশি টাকা ওই দুজন ব্যক্তিই অবৈধভাবে লুটপাট করেন।
এদিকে, টাকার বিনিময়ে সাতছড়িতে যাওয়া যুবক-যুবতীতের বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে সহযোগিতা করার অভিযোগও রয়েছে সন্ধ্যা রাণীর বিরুদ্ধে। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের সামনে নির্মিত বাথরুমটি শুধুমাত্র নারী দর্শনার্থী এবং কর্তৃপক্ষের ব্যবহারের কথা। কিন্তু মাত্র ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার বিনিময়ে সেখানে যুবক-যুবতীদের বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে সহযোগিতা করেন তিনি। প্রায়ই সেখানে গিয়ে এক সাথে যুবক-যুবতীদের বাথরুমের ভেতরে পাওয়া যায়।
গত সোমবার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে গিয়ে উপরে উল্লেখ্যিত সব কয়টি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি অভিযোগের সত্যতা শিকারও করেন সন্ধ্যা রাণী এবং আবুল হোসেন। তাদের দাবি, সবার কাছ থেকে ২৩ টাকা নেয়া হয়। চা-পান খাওয়ার জন্য প্রতিদিন কয়েকজন দর্শনার্থীর কাছ থেকে ২৫ টাকা নেয়া হয়। বাঁকিদের কাছ থেকে নেয়া হয় ২৩ টাকা। আর গাড়ি পার্কিং করার জন্য কোন টাকা নেয়া হয় না বলে দাবি করেন তিনি।
বনের ভেতরে গিয়ে পাওয়া যায় ১০/১৫ জন দর্শনার্থীকে। তাদেরকে টিকিটের কথা জিজ্ঞেস করলে তারা জানায় টিকেট দেয়া হয়নি। তাহলে তারা কিভাবে প্রবেশ করেছে  জানতে চাইলে তারা বলে- আবুল হোসেন ও সন্ধ্যা রানী তাদের কাছ থেকে কম টাকা নেয়ার বিনিময়ে টিকেট দেয়নি।
অপরদিকে, মূল টিকেট না দিয়ে তাদের তৈরীকৃত ভূয়া টিকেট দিয়ে অনেক দর্শনার্থীর সাথে প্রতারণার তথ্যও বেরিয়ে আসে আমাদের অনুসন্ধানে। যে টিকেটে কোন ধরণে সীল বা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোন স্বাক্ষর নেই।
এ ব্যাপারে টিকেট বিক্রেতা সন্ধ্যা রাণী বলেন- ‘আমরা সবার কাছ থেকে ২৩ টাকা নেই। চা-পান খাওয়ার জন্য মাঝে মধ্যে ২৫ টাকা নেয়া হয়। আর গাড়ি পার্কিং করার জন্য কোন টাকা নেয়া হয় না বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন- আমি কোন যুবক-যুবতীকে অসামাজিক কার্যকলাপে সহযোগিতা করি না। মেয়েরা বাথরুমের চাবি চাইলে দেয়া হয়। সেখানে কোন ছেলেকে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না।
অনেকে টিকেট ছাড়া বনের ভেতরে প্রবেশ করেছে কেন ? জানতে চাইলে তিনি বলেন- তারা সাতছড়ি উদ্যানের  কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আত্মিয়। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আমরা তাদেরকে প্রবেশ করতে দিয়েছি। তবে এটি নিয়ম বর্হিভুত বলেও জানান তিনি।
আর সুপারভাইজার আবুল হোসেন বলেন- আমি কোন ধরণের দূর্নীতি করি না। তবে এর বেশি কথা বলতে চাননি তিনি। এ ব্যাপারে বন বিট কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান-এর সাথে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *