রোহিঙ্গা ইস্যুতে আইসিসির রুলিং চায় বাংলাদেশ

নিউজ ডেস্ক:: মিয়ানমারের রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের মাধ্যমে সীমান্তে যে সঙ্কট তৈরি করা হয়েছে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ‘রুলিং’ প্রত্যাশা করে বলে জানিয়েছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

রোম সংবিধি গ্রহণের বিংশতম বার্ষিকী উপলক্ষে নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আয়োজিত একটি সিম্পোজিয়ামে বাংলাদেশের স্পিকার এ কথা বলেন।

মঙ্গলবার সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুতদের শান্তিপূর্ণ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত কার্যকর ভূমিকা চেয়েছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। “তিনি সিম্পোজিয়ামে বলেন, “সক্রিয় সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ আইসিসির কাছে রোহিঙ্গাদের বলপূর্বক অনুপ্রবেশ করানোর বিষয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রুলিং প্রত্যাশা করে।”

রোহিঙ্গা বিতাড়নের অভিযোগে মিয়ামমারের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা প্রশ্নে বাংলাদেশের মতামত জানতে চেয়ে গত মে মাসে চিঠি দিয়েছিল হেগের আন্তর্জাতিক আদালত। জুনের শুরুতে বাংলাদেশ সরকার ওই চিঠির জবাব দিয়েছে বলে সে সময় জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। কিন্তু সেখানে মিয়ানমারের বিচারের পক্ষে মত দেওয়া হয়েছে কি না- ত তিনি স্পষ্ট করেননি তখন।

এখন হেগের আদালতে অনুষ্ঠিত সিম্পোজিয়ামে বাংলাদেশের স্পিকারের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে তা অনেকটা স্পষ্ট হল। সিম্পোজিয়ামে স্পিকার বলেন, “সম্প্রতি বিশ্ববাসী মিয়ানমার কর্তৃক একটি সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার মত হৃদয় বিদারক ঘটনা প্রত্যক্ষ করল।

“জাতিসংঘ ও জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন এ ঘটনাটিকে জাতিগত নিধন ও গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। এখন বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত ও কার্যকর ভূমিকা।”

রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওই দমন-পীড়নের মুখে গত অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। মিয়ানমারের বাহিনীর ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা রাখাইনে তাদের গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ দিলেও মিয়ানমার বরাবরই সেসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। মিয়ানমার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য না হওয়ায় সেখানে সংঘটিত অপরাধের বিচার করার সরাসরি কোনো এখতিয়ার এ আদালতের নেই।

কিন্তু লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বিতাড়িত করে যেভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করা হয়েছে, তার বিচার করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আছে কি না- তা জানতে রুল চেয়ে হেগের ওই আদালতের কৌঁসুলি ফাতোও বেনসুদা গত এপ্রিলে একটি আবেদন করেন। রোহিঙ্গাদের এভাবে বিতাড়নের বিষয়টি যেহেতু আন্তঃসীমান্ত অপরাধের পর্যায়ে পড়ে এবং বাংলাদেশ যেহেতু আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য, সেহেতু আইসিসি বিষয়টি বিচারের এখতিয়ার রাখে বলে রুল পাওয়া গেলে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করার পথ তৈরি হবে বলে আশা করছেন ফাতোও বেনসুদার।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের মতামত পাওয়ার পর মিয়ানমারের বক্তব্য জানতে চেয়ে সময় বেঁধে দিয়েছে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। আগামী ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে মিয়ানমারকে এর জবাব দিতে হবে।

হেগের সিম্পোজিয়ামে স্পিকার বলেন, মিয়ানমার আইসিসির সদস্য না হলেও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক তথ্যা আইসিসির প্রি- ট্রায়াল চেম্বার -১ এ উপস্থাপন করেছে। “বাংলাদেশ সার্বজনীন রোম সংবিধির গুরুত্বকে স্বীকার করে এবং আদালতের সকল লক্ষ্য অর্জনে অব্যাহতভাবে সমর্থন করে যাচ্ছে। অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যহীন বিশ্ব গড়তে বাংলাদেশ দৃঢ় প্রত্যয়ী। অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে বিশ্ববাসীর সাথে বাংলাদেশ সহযাত্রী হবে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *