নিউজ ডেস্ক:: মৌলভীবাজারে প্লাবিত এলাকা থেকে নেমে গেছে পানি। একই সাথে দৃশ্যমান হচ্ছে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি। সরকারিভাবে ক্ষতির পরিমাণ হিসেব করতে আরও ৪/৫ দিন লাগলেও স্থানীয়রা বলছেন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গেছে।
সরজমিনে দেখা যায়, অনেক বাড়ি মাটির সাথে সম্পূর্ণ মিশে গেছে। ভিটের মাটি সরে গিয়ে গর্ত তৈরি হয়েছে। বুঝার উপায় নেই এখানে কোনো বসতি ছিল।
রাজনগর উপজলার ভোলানগরে ফুল মিয়া জানান, ‘আমার বাড়ির অস্তিত্ব নেই, উঠোন এখন পুকুর হয়ে গেছে। পাকা ল্যাট্রিনের ট্যাঙ্কির নিচ পর্যন্ত পানির স্রোতে ওঠে গেছে।’
জেলাব্যাপী মনু ও ধলাই নদীর ২৫টি ভাঙনের আশেপাশে যাদের বসত ভিটে ছিল তাদের সবার একই অবস্থা। কারো ঘরের দেওয়াল পরে গেছে, কারো বাউন্ডারি দেওয়াল মাটির সাথে মিশে গেছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমদুল হক বলেন, শুধু কমলগঞ্জ উপজেলায় ১ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক এবং পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।
এলজিডি ও সওজ সূত্র জানিয়েছে, পানির তীব্র স্রোতে অন্তত ৫শ’ কিলোমিটার সড়ক সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু মৌলভীবাজার পৌরসভার অধিনের রাস্তার ২শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পৌর মেয়র ফজলুর রহমান।
বন্যায় জেলায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর আউশ ধানসহ বিভিন্ন সবজি এবং ফলজ বাগান নষ্ট হয়েছে। যদিও জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, কৃষকদের নতুন করে চাষে সাহায্য করা হবে। তবে কৃষকরা বলছেন, এখন আর নতুন করে আউশ চাষের মৌসুম নেই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মো. শাহাজান জানিয়েছেন, এখনও পুরোপুরি হিসেব করা যায়নি, তবে কৃষির জমির ক্ষয়ক্ষতি ৫০ কোটির টাকার উপরে হবে।
এছাড়া বন্যায় প্রায় কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মাছ চাষীরা। রাজনগরের কামারচাক ইউনিয়নের মাছচাষী সোহেল আহমদ জানান, তিনি ৫ লাখ টাকার মাছ চাষ করেছিলেন। কিন্তু বন্যা তা ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এখন তিনি জানেন না কিভাবে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, বন্যার কারণে এ উপজেলার দেড় সহস্রাধিক খামারির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে সরকারি ও বেসরকারি প্রদর্শনী খামারসহ মোট ১ হাজার ৫৫০টি পুকুর প্লাবিত হয়।
বিপর্যয় নেমে এসেছে পোল্ট্রি খাতেও, জেলাব্যাপী কয়েক কোটি টাকার পোল্ট্রি খামার নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া মৌলভীবাজারের ৪টি খাদ্য গুদামে পানি ঢুকে অন্তত ২ কোটি টাকার চাল-গম নষ্ট হয়েছে।
মৌলভীবাজার চেম্বার্স অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ডা. এম.এ আহাদ জানিয়েছেন, শুধু বিক্রি বাবদ ব্যবসায়ীদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মালামাল যা ভিজে নষ্ট হয়েছে সে হিসেব এখনো করা সম্ভব হয়নি।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম বলেন, বন্যায় ৫৪ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে অনুপাতে ধারণা করা হচ্ছে, জেলার ৫ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষেত্র বিশেষে আংশিক বা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। তবে এখনো সঠিক হিসেব করা যায়নি। আরও ৪/৫ দিন সময় লাগবে।