সিলেটে জমজমাট ঈদের কেনাকাটা

নিউজ ডেস্ক:: টানা ক’দিন অসহনীয় গরম ছিলো সিলেটে। গরমে যখন হি পিত্যশ করছিলেন সবাই তখন বাতাস শীতল করে সোমবার সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি নামে সিলেটে। রাতভর চলে বৃষ্টি। তবে এই বৃষ্টি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি ঈদের কেনাকাটায়। বৃষ্টি উপেক্ষ করেই শেষ মূহূর্তের কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা।

ঈদুল ফিতরের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। ঈদকে সামনে রেখে এখন জমে ওঠেছে সিলেটের ঈদের বাজার। রমজানের শুরুতে ঈদের কেনাবেচা কম হলেও শেষসময়ে এসে জমজমাটভাবে চলছে ঈদের কেনাকাটা। সিলেট নগরীর বিপণি বিতান, ফ্যাশন হাউজ, শপিং মলগুলোতে তিল ধারণের ঠাই নেই এখন। সর্বত্রই লোকে লোকারণ্য।

সরেজমিনে নগরীর বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, নয়াসড়ক ও কুমারপাড়ার শপিং মল ও ফ্যাশন হাউজগুলোর সর্বত্র ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। রোজার প্রথম দিকে শপিং মলগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা তেমন না থাকলে এখন দোকানগুলোতে তিল ধারণের ঠাই নেই। ঈদকে সামনে রেখে মার্কেটগুলো বর্ণিল আলোকসজ্জায় সজ্জিত করায় সর্বত্রই উৎসবের আমেজ।

সকাল ১০টা থেকে মার্কেট খোলা থাকায় অনেকে ভিড় এড়াতে সকাল সকালই বেরিয়ে পড়েন বাজার করতে। অনেকে মনে করেন ইফতারের আগে ভিড় কম থাকে, তাই তারা বিকাল বেলাতেই বাজার করেন। অনেকে সারাদিন রোজা রেখে বাজারের ঝাক্কি পোহাতে চান না। তাই ইফতারের পর রাতের বেলায় শপিং করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। অধিকাংশ মানুষই এই সময়টাতেই মধ্যরাত পর্যন্ত বাজার করেন।

বিক্রেতারা জানান, রমজানের শুরুতে আমাদের ব্যবসা আশানুরুপ না হলেও এখন যে ক্রেতা সমাগম হচ্ছে তাতে আমরা অনেক খুশি। ক্রেতাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে আমরা আধুনিক ও ভালো মানের কাপড়ের কালেকশন রেখেছি। আশা করি ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এভাবে বা এর থেকেও ভালো বিক্রি আমরা দিতে পারবো।

ক্রেতারা পছন্দ অনুযায়ী ড্রেস, শাড়ি, বাচ্চাদের পোশাক, শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, জুতা, কসমেটিক্স, জুয়েলারি বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে ঘুরে যাচাই করে কিনছেন। অনেকের পছন্দ ব্র্যান্ডের পোশাক, তাই তারা যাচ্ছেন ব্র্যান্ড শপগুলোতে, আবার অনেকের পছন্দ ভারতীয় কাপড়ের দিকে তাই তারা ছুটছেন নন ব্র্যান্ডেড শপগুলোতে।

ঈদের বাজার করতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা জাকারিয়া আহমদ বলেন, বছর ঘুরে আবার সামনে আসছে ঈদুল ফিতর। ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ভাগাভাগি করে নিতে আগেভাগেই পরিবারের সবার জন্য নতুন কাপড় কিনে নিয়েছি। এখন নিজের জন্য কিনছি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে এবারের ঈদ করার ইচ্ছে তাঁর।

আর্ন্তজাতিক মানের ফ্যাশন হাউজ মাহার স্বত্বাধিকারী মাহি উদ্দিন চৌধুরী সেলিম বলেন, আমাদের মাহায় বেচাকেনা ভালোই চলছে। গতবারের থেকে বেশি ক্রেতা সমাগম হচ্ছে। বিক্রিও বেড়েছে। বৃষ্টির মধ্যে ক্রেতারা ভিড় করছেন।ঈদের আগের রাত পর্যন্ত কেনাবেচা আরও ভালো চলবে বলে তাঁর প্রত্যাশা।

কমলা ভান্ডার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নীহার কুমার রায় বলেন ১৮৮৫ সাল থেকে সিলেটে কমলা ভাণ্ডারের ব্যবসা শুরু করে জুয়েলারিতে আমাদের কালেকশন এক্সক্লুসিভ। আমরা আমদের পণ্যের মান সবসময় সমুন্নত রাখার চেষ্টা করি। তাছাড়া পুরাতন ক্রেতাদের আমরা ডিসকাউন্ট দিচ্ছি। বেশি দাম রাখার ব্যাপারে তিনি বলেন আমরা দাম বাড়াইনি। এমনকি অনেক আইটেমের দাম গতবারের থেকেও কম রাখার চেষ্টা করছি।

বিক্রেতারা এবার বেশি দাম রাখছেন বলে অভিযোগ করে সুবিদবাজার নিবাসী পলি বেগম বলেন, অন্যবারের তুলনায় এবার একটু বেশি দাম মনে হচ্ছে কাপড়গুলো। আবার দাম অনুযায়ী সেরকম মানেরও মনে হচ্ছে না। উচ্চবিত্তদের এতে সমস্যা না হলেও আমাদের মত নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য একটু হিমশিম খেতে হয়।

এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিক্রেতাদের ভাষ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে। এর ফলে জীবনযাত্রা ও ব্যবসার ব্যয় বাড়ছে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই দাম একটু বেশি রাখতে হচ্ছে তবে তা সবার নাগালের মধ্যেই আছে।

আল হামরা শপিং সিটির বধূয়া শাড়ির স্বত্বাধিকারী রেজাউল করিম সুমন জানান, উদ্বোধনের পর থেকে আমাদের ব্যবসা ভালোই চলছে। আর ঈদকে সামনে রেখে আরও বেশি ভালো চলছে। বিকাল ৩টা থেকে ৫টা ও রাত ৮টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকে। আমাদের দোকানে লেহেঙ্গা পাওয়া যাচ্ছে ৮ হাজার থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর শাড়ির মধ্যে বেশি চলছে চিনন সিল্ক ও কাতান। এগুলোও ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার নাগালের মধ্যে রাখা হয়েছে।

টিলাগড় নিবাসী মাইশা মালিহা বলেন, এবারের ঈদে কালেকশন অনেক বেশি সমৃদ্ধ। তাই কনফিউজ হয়ে পড়ি কোনটা কিনবো কোনটা কিনবো না। এটা করতে করতেই আগেভাগে কেনাকাটা আর করা হয়নি। এখন শেষের দিকে এসে পছন্দের কাপড় সাইজ অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না। পড়ে কেনাকাটা করতে আসায় বিপদেই পড়তে হচ্ছে। যেটা পছন্দ ওইটার সাইজ নেই। আর যে সকল সাইজ আছে তা পছন্দ হচ্ছে না। তবে আজ (রোববার) সব কেনাকাটা শেষ করবেন বলেই প্রতিজ্ঞা করে বাসা থেকে বেড়িয়েছেন বলে জানান তিনি।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *