সিলেট শহর-শহরতলীর জন্য ফিৎরা সর্বনিম্ন ৫৫ ও সর্বোচ্চ ১১৫৫ টাকা

প্রতিবারে ন্যায় এবারও সিলেট শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি সিলেট মহানগর শাখা দরিদ্র বিমোচনে যাকাত-ফিৎরার ভূমিকা ও স্থানীয়ভাবে ফিৎরার পরিমাণ নির্ধারণ শীর্ষক সেমিনার ১১ রমজান, (২৮ মে) সোমবার দুপুর ২টায় মধুবনস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সিলেটের সর্বজন শ্রদ্ধেয় মুফতীয়ানে কেরাম, উলামা মাশায়েখ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের ও ইমাম-খতিবগণের উপস্থিতিতে গতকাল শহরের বিভিন্ন খুচরাবাজার যাচাই করে আটা ১৬৫০ গ্রাম ও খেজুর, কিসমিস ৩৩০০ গ্রামের মধ্যম কোয়ালিটির মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে ফিৎরার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়।

সিলেট মহানগর ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা হাবীব আহমদ শিহাবের সভাপতিত্বে সেমিনারের প্রধান সিদ্ধান্তদানকারী দরগাহে হযরত শাহজালাল রহ: মাদরাসার শায়খুল হাদীস আল্লামা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি বলেন, ফিৎরা ধনীদের পক্ষ থেকে দেয়া হয় গরীব অসহায়দেরকে। এটা কোনো দয়া বা অনুকম্পা নয়, ধনীদের সম্পদের গরীবদের প্রাপ্য অধিকার। গরীবদের যেভাবে উপকার হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। তাই প্রাচীন যুগে পরিমাপের পাত্র একটু ছোট বড় ছিল বিভিন্ন বাজার ও এলাকাভেদে। আমাদের দেশে এসব বাটখারা বা পাত্রের প্রচলন না হলেও ওজনের মাধ্যমে তা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ইসলামী স্কলারগণ এসব বাটখারার হিসেব করে ১০০/১৫০ গ্রামের কম-বেশি পাওয়া যায়। সেমিনারে ফিৎরায় ওজনের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় কিসমিস ও খেজুর ৩৩০০ গ্রাম যা শরীয়তে ১ সা’, আটা, যব যা নির্ধারণ করা হয় ১৬৫০ গ্রাম, যা শরীয়তে অর্ধসা। আগামী দিনগুলোতে এ পরিমাপে সকল ফিৎরাদাতাগণ ফিৎরা দেয়ার জন্য সেমিনারের অতিথিগণ সকল মুসলমানকে আহবান জানান।

দরগাহ মাদরাসার মুহতামিম মুফতী আবুল কালাম জাকারিয়া বলেন, বর্তমান সময়ে ইসলামের নামে কিছু বিপথগামী লোক লা মাযহাবী আমার বিভিন্ন বক্তব্যেকে পালটিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা ছড়াচ্ছেন। আমার বক্তব্য হলো সিলেট শহরে কয়েকটি মসজিদ বন্ধ না করে অন্যান্য মসজিদের আদলে এসব মসজিদে নিয়মতান্ত্রিক ইবাদ-বন্দেগী পালন করা।
বক্তাগণ বলেন, ফিৎরায় মুদ্রামূল্য নিজ নিজ এলাকার বাজারের দ্রব্যমূল্য অনুসারে দিতে হয়। কিসমিস, খেজুর, যব, আটার মাধ্যমে ফিৎরা দেয়া উত্তম, তবে কেউ যদি এর পরিবর্তে নগদ টাকা বা অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী বা পরিধেয়ের বস্ত্র কিনে দেন তবুও দেয়া যায়।

ইমাম সমিতির এ সিদ্ধান্তকে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সমর্থন করে বলেন, ইসলামের এ সুমহান আদর্শের মাধ্যমে যথাযথ ভাবে যাকাত-ফিৎরা প্রদান করলে আমাদের দেশে গরীব থাকার কথা নয়। দারিদ্র বিমোচনে যাকাত ফিৎরার গুরুত্ব অপরিসীম। মেয়র বলেন, ফিৎরা দেয়ার জন্য ইসলামে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ পরিমাণ রয়েছে। আসুন আমাদের অবস্থা ভেদে গরীব অসহায়দেরকে যথাযথ ভাবে ফিৎরা প্রদান করে দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়ি।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে মেহমান হিসেবে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর পরিচালক মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সিরাজী, কুদরত উল্লাহ মার্কেটের ব্যবসায়ী মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসার মুফতী মাওলানা আব্দুল মুছাব্বির, দরগাহ মাদরাসার সহকারী শিক্ষা সচিব মুফতী আতাউল হক জালালবাদী, হযরত শাহজালার ডিওয়াই কামিল মাদরাসার মুফতী উপাধ্যক্ষ আবুল সারেহ কুতবুল আলম, জামেয়াতুল খায়ের আল ইসলামী সিলেটের মুফতী মাওলানা জমির উদ্দিন, মুফতী রশিদ আহমদ, দারুসসালাম খাসদবির মাদরাসার মুফতী মুহাম্মদ যাকারিয়া, ইমাম সমিতির জেলা সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ এহসান উদ্দিন, শিবগঞ্জ মাদরাসার মাওলানা আসরারুল হক, কুদতর উল্লাহ মাদরাসার প্রিন্সিপাল হাফিজ মাওলানা মিফতাহ উদ্দিন, জেলা সেক্রেটারী মাওলানা জালাল উদ্দিন ভুইয়া, ইমাম সমিতির সহ সভাপতি কারী মাওলানা শহীদ আহমদ, মুফতি মাওলানা বুরহান উদ্দিন, মাওলানা নূর উদ্দিন আহমদ, মাওলানা আহমদ হোসেইন, মাওলানা নূর আহমদ কাসেমী, মাওলানা আব্দুস সালাম, মাওলানা হিফজুর রহমান, মুফতী মাওলানা আব্দুর রহমান প্রমুখ। এছাড়াও আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন মাওলানা আব্দুর রহিম, মাওলানা এখলাছুর রহমান, মাওলানা হিফজুর রহমান, হাফিজ মাওলানা শরফ উদ্দিন, মাওলানা মাহবুব আহমদ নাঈমী, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা শুয়াইবুর রহমান, মাওলানা মিছবাহ উদ্দিন, মাওলানা হারিছ আহমদ, মাওলানা সিদ্দিক আহমদ, মাওলানা সালেহ আহমদ শাহবাগী প্রমুখ।

বাজার মনিটরিং করেন ইমাম সমিতির সহ সভাপতি মাওলানা নূর আহমদ কাসেমী, সহ সাধারণ সম্পাদক হাফিজ মাওলানা ছুহাইব আহমদ ও দপ্তর সম্পাদক হাফিজ মাওলানা আব্দুর রহমান।

ইমাম সমিতির উপদেষ্টা দরগাহ মাদরাসার শায়খুল হাদীস মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী সিলেট শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য ফিৎরার পরিমাণ ঘোষণা করেন সর্বনিম্ন ৫৫ টাকা, মধ্যম ৪৯৫ টাকা ও সর্বোচ্চ ১১৫৫ টাকা। পাশাপাশি আগামী শুক্রবার জুম্মার বয়ানে যাকাত ফিৎরা বিষয়ে আলোচনা করার জন্য নগরীর ইমাম খতিবদের প্রতি আহবান জানান। বিজ্ঞপ্তি

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *