নিউজ ডেস্ক:: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় স্কুলছাত্র আবদুল্লাহ হাসান হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনিভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন।
তিনি জানান, বড়লেখা মোহাম্মদনগর গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী আব্দুর রহিমের ছেলে আব্দুল্লাহ হাসানের (১৪) সঙ্গে তাদের পারিবারিক প্রাইভেটকার চালক এরশাদ মিয়ার গাড়ি পার্কিং নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়। এতে হাসান ক্ষুব্ধ হয়ে গাড়িচালককে চড়থাপ্পড় মারে। সেই প্রতিশোধ নিতে ঘটনার প্রায় তিন মাস পর সুযোগ বুঝে এরশাদ হাসানকে ডেকে নিয়ে দা দিয়ে গলা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে হত্যা করে।
শাহাদাত হোসেন আরও জানান, গতকাল বুধবার (২৩মে) বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়েল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসান জামানের আদালতে এ হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তি দিয়েছেন এরশাদ। এর আগে গত ১৯ মে মৌলভীবাজার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন একটি হোটেল থেকে তাকে আটক করা হয়। পরদিন আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডের তিন দিনের মাথায় তিনি স্কুলছাত্র আবদুল্লাহ হাসান হত্যাকাণ্ডের রোম হর্ষক স্বীকারোক্তি রদন। এরশাদ মিয়া ভোলা জেলার শশীভূষণ থানার চরমায়া গ্রামের কবির মিয়ার ছেলে। তিনি বড়লেখায় নিহত আবদুল্লাহ হাসানের বাবার প্রাইভেটকারের ড্রাইভার ছিলেন।
তিনি জানান, গাড়িচালক এরশাদ মিয়া খুব ঠাণ্ডা মাথায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটালেও সে থেকেছে সন্দেহের ঊর্ধ্বে। এই ঘটনার পর সে তাদের বাড়িতে যাওয়া আসা করতো। কিছুদিন গাড়িও চালিয়েছিল। এর পর হঠাৎ করে চাকরি ছেড়ে দেয়। তার তিনটি কর্মকাণ্ডকে প্রাধান্য দিয়ে পিবিআই তাকে আটক করে। ঘটনার রাতে গাড়িচালক এরশাদ সচরাচর যেখানে ঘুমায় সেখানে না ঘুমিয়ে অন্যস্থানে ঘুমিয়েছে। ঘটনার কয়েক দিন আগেই স্ত্রী-সন্তানদের অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়া, ঘটনার পর চাকরি ছেড়ে দেয়া, মুখে দাড়ি রাখা এবং আত্মগোপন করা। এসব সন্দেহজনক কারণে তাকে আটকের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
জানা গেছে, গত ১৮ জানুয়ারি রাতে আবদুল্লাহ হাসান বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়। ছেলে নিখোঁজের সংবাদ পেয়ে ২৩ জানুয়ারি দেশে ফিরেন তার সৌদি আরব প্রবাসী আবদুর রহিম। নিখোঁজের ১০ দিন পর ২৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মোহাম্মদনগর এলাকার একটি নির্জন টিলার ঢালু স্থানে আবদুল্লাহ হাসানের খণ্ডিত পচা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় ৩০ জানুয়ারি নিহত আবদুল্লাহ হাসানের বাবা তিনজনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন। পরদিন পুলিশ আব্দুর নূর বলাই (৫০), তার ভাই বদরুল ইসলাম এবং বাদীর ভাতিজা তারেক আহমদকে (২২) গ্রেফতার করে। পরে একই মামলায় আব্দুর নুর বলাইয়ের ছেলে অলিউর রহমান পারভেজকে (২৮) গ্রেফতার করে পুলিশ। হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশ আসামিদের তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায়। পরবর্তীতে মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়।