ভূয়া বাবা-মা সেজে তিন সন্তানের পাসপোর্টের আবেদন, অত:পর..

ভূয়া বাবা-মা সেজে তিন সন্তানের পাসপোর্টের আবেদন করতে গিয়ে অবশেষে শ্রীঘরে গেলেন এক মা।

বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, সিলেট হতে আশরাফ আহমদ (১২), সুহেল আহমদ (১৪) এবং রেদওয়ান আহমদ ১০) , নামে মেশিন রেডিবল পাসপোর্ট (এমআরপি) করার জন্য আবেদন করা হয়।

আবেদনকারীদের নাম-ঠিকানাসহ অন্যান্য বিষয়াবলি পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য জেলা বিশেষ শাখা, সিলেটে প্রেরণ করা হয়। অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে দেখা যায় যে, উক্ত তিন আবেদনকারীর সবাই শিশু এবং তারা কেউই বর্ণিত পিতা-মাতা ফয়ছল আহমদ এবং ফাতিহা বেগম ফাহিমা-দের সন্তান নয়।

আরো জানা যায় যে, পাসপোর্ট করার নিমিত্ত উক্ত তিন শিশুর নামে তথ্য গোপন করে স্থানীয় উইপি সদস্যের সুপারিশে কথিত পিতা ফয়সল আহমদ ১০ নং মুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ হতে জন্মনিবন্ধন সনদ গ্রহণ করে। সেই জন্মনিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট হতেও তিন শিশুর নাগরিকত্ব সনদ গ্রহণ করে।

পাসপোর্টের আবেদনে সনাক্তকারী হিসাবে যে ব্যক্তির নাম, স্বাক্ষর, এবং সীল ব্যবহার করা হয়েছে সেই ব্যক্তির কোন অস্তিত্বই নাই অর্থাৎ, অন্যের নামে সীলটি জালিয়াতি করে তৈরি করা হয়েছে এবং ভূয়া স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে। অনুসন্ধানকারী অফিসার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে পুলিশ সুপার, জেলা বিশেষ শাখা জনাব মোঃ মনিরুজ্জামান বিষয়টি নিয়ে আরো গভীরভাবে অনুসন্ধান করার নির্দেশ প্রদান করেন।

বর্ধিত অনুসন্ধানে প্রকাশ পায় যে, গত ১৬-১০-২০১৬ তারিখে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্রাজিল প্রবাসী ফয়সল আহমদ এর সাথে ফাতেহা বেগম ফাহিমা এর বিবাহ হয় এবং নিকাহনামা সম্পন্ন হয়। ফাতিহা জানান যে, তার স্বামী ফয়সল আহমদ ব্রাজিল হতে দেশে ফেরৎ আসার পর ২২-০২-২০১৭ তারিখে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরে তুলে নেয়। ফয়সল আহমদ ছুটি শেষ করে ব্রাজিল ফেরত যায়। তাদের ঘরে ৮/১০ মাসের একটি পুত্র সন্তান হয়ে মারা যায়। এছাড়া তাদের আর কোন সন্তান নেই। উক্ত তিন শিশুকে তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে নিজেদের সন্তান হিসাবে পরিচয় দিয়ে বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনার অংশ হিসাবে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। আরো জানা যায় যে, শিশু তিনটিই ফয়সলের নিকটাত্মীয়। অনুসন্ধানের শেষ দিকে শিশু তিনটির আসল পরিচয় নিশ্চিত করা গেছে। তাদের প্রকৃত পরিচয়- (১) আশরাফ আহমদ, পিতা-মাহতাব উদ্দিন, মাতা-হামিদা বেগম, সাং-মাথিউরা দুধবকসী, থানা-বিয়ানীবাজার, জেলা-সিলেট, (২) সুহেল আহমদ(১৪), পিতা-আজিজ উদ্দিন (দুবাই প্রবাসী), মাতা-নাছিমা বেগম সাং-শেওলা দিগলবাগ, থানা-বিয়ানীবাজার, জেলা-সিলেট এবং (৩) রেদওয়ান আহমদ(১০), পিতা-ময়জ উদ্দিন (সৌদি প্রবাসী), মাতা-খালেদা আক্তার সাং-গল্লাসাঙ্গন, নিজবাহাদুরপুর, থানা-বড়লেখা, জেলা-মৌলভীবাজার বলে প্রকাশ পায়।

উল্লেখিত ফয়সল আহমদ, স্ত্রী ফাতেহা বেগম ফাহিমা, ইউপি সদস্য মো: নাজিম উদ্দিন এবং অজ্ঞাতদের পরষ্পর যোগসাজসে জেনেশুনে, স্বজ্ঞানে এবং সুকৌশলে অন্যের সন্তানদেরকে নিজেদের সন্তান পরিচয়ে পাসপোর্ট তৈরী করে বিদেশে নেয়ার/পাচারের জন্য ইউপি সদস্য এর সুপারিশক্রমে মিথ্যা জন্মনিবন্ধন সনদ, নাগরিকত্ব সনদ সৃজন, নকল সীল তৈরীসহ অস্তিত্বহীন ব্যক্তির দস্তখত দিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ৪৬৫/৪১৭/৪৬৮/৪১৯/১০৯ পেনাল কোড এর অপরাধ করেছেন মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বিয়ানীবাজার থানায় নিয়মিত মামলা নং- ১০, তারিখ ১৫/০৫/২০১৮ দায়ের করা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেলা বিশেষ শাখা (মিডিয়া) মোঃ মাহ্বুবুল আলম জানান,
ফাতেহা বেগম ফাহিমা-কে উক্ত মামলায় গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *