নিস্তব্ধ

Nistobdho নিস্তব্ধ

সোলেমান ইসলাম তাওহীদ:: খুবই গরিব ঘরে জন্ম নেওয়া ছেলে আনন্দ। ছোট বেলা থেকেই অনেক কষ্ট দেখা তার আপন চোখে। জীবন ধারণের তাগিদে এবং বৃদ্ধ মা-বাবার খেয়ালের জন্য একটি কাজ করে সে- খুব ভোর বেলায় বাড়িতে বাড়িতে সাইকেলের হর্ন বাজিয়ে খবরে কাগজ বিলি করে। কোনো মতে কষ্টে চলে যায় তাদের জীবন।
মা বাবার আদরের মেয়ে নিধি। হাই সোসাইটির আভাসে বড় হয়ে ওঠা মিষ্টি মেয়ে নিধি। টাকা-পয়সা, আদর-মমতা সব দিয়েছে ওর মা-বাবা। তার কোন কিছুর আক্ষেপ নেই।

আনন্দ ও নিধি কোন একভাবে ছোট বেলার একে অপরের খুব ভালো বন্ধু। সারাদিন ঘটে যাওয়া সময় গুলো দু’জন এক-অপরকে না বলে চলে না। কোন একদিনও তারা একে অপরে সাথে দেখা করতে মিস দেয় নি। নিধির বাবা-মা আনন্দের সাথে চলাফেরা, কথা বলা মেনে নেন না। কারণ, আনন্দ ওদের মত হাই সোসাইটির না।

যাই হোক, বড় হবার পর আনন্দের ভালো লাগতে লাগলো নিধিকে হয়তো ছোটবেলা থেকে ভালোবাসতো কিন্তু নিজের কষ্টের জীবনের সাথে কখনো জড়াতে চাইতো না আনন্দ আর বলতেও চাইতো না। নিধি কখনো আনন্দ এর কষ্ট দেখতে পারতো না তেমনটা আনন্দও। নিধি সবসময় আনন্দকে ওর সাথে মিলিয়ে রাখার চেষ্টা করত। তবে তাদের এই মিষ্টি না বলা ভালোবাসার বন্ধুত্বের মধ্যে একদিন নজর লেগে গেল।

নিধি-আনন্দকে নিয়ে একটি পার্টিতে যাবে বলে ঠিক করলো। ও আনন্দকে সকাল-সকাল বের হয়ে শপিং মলে গিয়ে আনন্দের জন্য ভালো কাপড় চোপড় কিনলো আর শপিং করে একে বলে দিলো সন্ধ্যায় পার্টিতে চল আসতে। নিধির কথা মত সন্ধ্যায় ভালো কাপড় পড়ে পার্টিতে যাবার জন্য রওয়ানা হলো।

ঠিক এ সময় আগন্তুক একটি গাড়ি এসে তুলে নিয়ে যায় আনন্দকে। ওকে নিয়ে যাওয়া হয় পরিত্যক্ত একটি গুদাম ঘরে। দিকে আনন্দের লেইট দেখে নিধি রাস্তা দিয়ে তাকিয়ে থাকে। এভাবে অপেক্ষা করার পর নিধি রাগ করে বাসায় চলে যায়। রাত তখন অনেকটা। নিধি আনন্দকে ফোন দেয়, কিন্তু আনন্দ ফোন ধরতাছে না।

রাত, আনন্দের সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো মনে করতে লাগলো। ঠিক মাঝ রাতে, নিধির কাছে অপরিচিত একটি নাম্ববারে ফোন আসে। ফোন ধরে জানতে পারলো ফোনটা অপহরণকারীরা দিয়েছে। সে আনন্দের অপহরণের কথা জানতে পারলো। প্রথমে বিশ্বাস না করলেও পরে আস্তে আস্তে ওদের কথা বিশ্বাস করতে লাগলো। নিধিকে অপহরণকারীরা বলে দিলো কোথায়? কবে? কত টাকা? নিয়ে আসতে হবে। আর এ ও বলে দিল যে, কোন রকম চালাকি করা যাবে না। নিধি ফোন রেখে চিন্তা করেতে লাগলো অপহরণকারীরা তার বাবার কাছে ফোন না দিয়ে ওর কাছে কেন ফোন দিলো। যাই হোক, ও কিছু না ভেবেই অপহরণকারীদের কথা মেনে নিলো।

পরে দিন বিকাল বেলা, নিধি-আনন্দকে মুক্ত করার জন্য অপহরণকারীদের কথায় আনন্দকে আটকে রাখা সেই পরিত্যক্ত গুদাম ঘরে যায়। সেখানে কয়েকজন অপহরণকারী ও কলেজে নিধিকে উত্যক্তকারী সেই ছেলে রাফসানকে দেখতে পেল। কোনায় হাত-পা বাধা অবস্থায় আনন্দকে দেখতে পেলো। রাফসান তার সঙ্গীদের ইশারা করে, নিধির হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে- গুদাম ঘরের দরজা বন্ধ করে দিতে বলল।

রাফসান কথা বলতে বলতে নিধির দিকে খারাপ চিন্তায় এগিয়ে যেতে থাকে। তার বাকী সঙ্গীরাও রাফসানকে অনুসরণ করতে থাকে, রাফসান নিধিকে টান দিয়ে কাছে টানার চেষ্টা করে। নিধি প্রাণ-পণে ওদেরকে সরানোর চেষ্টা করে। এদিকে, আনন্দ হাত-পা খুলার জন্য চিৎকার করতে থাকে। অন্যদিকে, মানুষরুপী হায়নারা নিধিকে আস্তে আস্তে ঘ্রাস করতে থাকে। নিধি তার শেষ শক্তিটুকু দিয়ে ওদের আটকাবার চেষ্টা করে কিন্তু শেষ পর্যস্ত সে বিফল হয়। নিধি মাটিতে পড়ে যায়।
এ দিকে আনন্দের চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষকে হারাতে দেখে এক চিৎকার সেখানেই সে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। চোখ দিয়ে অবিরাম জল পড়তে থাকে তখন, আর কিছু করার ছিল না। সে ও নিঃস্ব চুপ চিত্রে মাটিতে লুটিয়ে যায়।

এই ঘটনার আনন্দের মানসিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। মাস খানিক পর। নদীর পারে আনন্দ পাগল বেশে দাঁড়িয়ে থাকে। বাবা-মা আনন্দকে সেখান থেকে নেওয়ার জন্য আসে কিন্তু সে পাগলামী করে। আনন্দ বলে উঠল- আরে যাও তোমরা! নিধি আসবে। তার সাথে আমার অনেক কথা… যাও! যাও! তোমরা যাও!

‘আমাদের চারপাশে ঘুরাঘুরি করিস তোরা
দেখই না দেখার ভান করি আমারা
মরে শুধু চামচিকারা’

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *