আজিজুল ইসলাম সজীব:: হবিগঞ্জের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলো পারিবারিক দর্শনার্থীদের পদ-চারনায় মুখরিত হয়ে উঠলেও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ছিল না চোখে পড়ার মতো কোন পারিবারিক দর্শনার্থীদের।
উদ্যানের ভেতরে যুবক-যুবতীতের প্রকাশ্য অশ্লীলতা, নিরাপত্তাহীনতা আর অনুন্নত অবকাঠামোর কারণ মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সেই সাথে উদ্যানের ভেতর থেকে গত ৩ মাসে ৪টি লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে যুবতী-মহিলার লাশই ছিল। আর এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন অনেক দর্শনার্থী। তবে পর্যটন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন উদ্যানের সার্বিক অবকাঠামোর উন্নয়নসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করলে পুণরায় এখানে দর্শনার্থী ফেরানো যাবে।
এর মধ্যে সেখানে বিভিন্ন দিবসে সব সময় দর্শনার্থীদের পদচারণা মূখরিত হয়ে উদ্যানটি। কিন্তু, যুবক-যুবতীতের প্রকাশ্যে অশ্লীলতা, এমনকি গণ ধর্ষণের ঘটনাও ঘটছে। অনুন্নত অবকাঠামোর কারণে দিন দিন কমতে শুরু করেছে দর্শনার্থীর সংখ্যা।
গত ১০ বছরের একটি ওয়াচ টাওয়ার ও একটি ট্রি এনডভেঞ্জার ব্যথিত আর কোন অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়নি উদ্যানটিতে।
এদিকে, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না থাকায় এর ভেতরেই যুবক-যুবতীদের রাশলীলা চলার কারণে পরিবারের নারীদের নিয়ে সাতছড়িতে যাওয়া থেকে বিরত রয়েছেন দর্শনার্থীরা। সেই সাথে গত ৪ মাসে উদ্যানের ভেতর থেকে ৩টি নারীর লাশ উদ্ধার করার কারণে আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন পর্যটকরা।
এ ব্যাপারে উদ্যানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা বলেন- ‘একটা সময় ছিল যখন পরিবারের সবাইকে নিয়ে এখানে ঘুরতে আসতাম। কিন্তু বর্তমানে এটির অবস্থা খুব নাজুক। উদ্যানের ভেতরে ঘুরতে গেলে বিভিন্ন অশ্লিল দৃশ্য চোখে পড়ে। যার কারণে এখন আর নারী-শিশুদের নিয়ে এখানে ঘুরতে আসার পরিবেশ নেই।’
হবিগঞ্জ জেলার বিশিষ্ট জনের বলেন- জাতীয়করণের পরও এর ভিতরের অবস্থা খুবই নাজুক। তাছাড়া যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন- ‘আমি কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরুধ করব। এখানের পরিবশে যেন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। তাহলে আমরা যারা দর্শনার্থী আছি তাদেও ঘুরতে অনেক ভালো লাগবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা চায়ের দোকানের মালিক বলেন- একটা সময় ছিল যখন এখানে প্রচুর দর্শনার্থী আসত। আর দুটি ঈদসহ বিভিন্ন ছুটির দিনে এখানে দর্শনার্থীর ভিড়ে হাঠা যেত না। কিন্তু এখন আর এখানে দর্শনার্থী আগের মতো আসেন না। কারণে এখানে পরিবেশ আগের মতো নেই। নেই কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পর্যটকদের জন্য থাকার সুবিধা। এমন কি পানি খাওয়ার ব্যবস্থা পর্যন্ত এখানে নেই।
তিনি বলেন- ‘নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকার কারণে উদ্যানের ভেতরে বাড়ছে অপরাধ ও অশ্লিলতা। গত কয়েক মাসে এখান থেকে ৪টি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আর এর জন্য সবাই দায়ী মনে করা হচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
তবে স্টাফ সংকট ও সরকারি অর্থ বরাদ্ধ না থাকার কারণে পর্যটকদের জন্য সুযোগ সুবিদা তৈরী করতে পারছেন না বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
বন বিট কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামান বলেন- এখানে স্টাফ সংকট রয়েছে। যার কারণে এখানের পরিবশে একটু ময়লা আবর্জনাময়। তবে নিরাপত্তা কর্মী না থাকার কারণে আমরা দর্শনার্থীদের গভীর জঙ্গলে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করি।’
তিনি বলেন- ‘পর্যটকদের খাবার ব্যবস্থাতো আর আমাদের করার কথা না। তবে খাবার পানির জন্য একটি পাম্প বসানো হচ্ছে। তবে ইতি মধ্যেই এর কাজ শুরু হয়ে গেছে।
লাশ উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- ‘লাশগুলো গভীর জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে বিভিন্ন টিপরারা বসবাস করেন। তাই এ ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নাই। উদ্যানের সার্বিক অবস্থার উন্নয়ন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করলে আবারও এখানে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে বলে দাবি বিনোদন প্রেমিদের।
উল্লেখ্য, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যওে লীলাভুমি এ উদ্যানে রয়েছে নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণি। ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ/সংশোধন আইনের বলে ২৪৩ হেক্টর এলাকা নিয়ে ২০০৫ ‘সাতছডি জাতীয় উদ্যান’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।