সিলেটে চা শ্রমিকদের মধ্যে মৌসুমি ফল বিতরণ

সিলেটের কেওয়াছড়া চা বাগানের শ্রমিকদের মাঝে মৌসুমি ফল বিতরণ করেছেন সমাজকর্মী চৌধুরী জান্নাত রাখি। বুধবার (১৮ জুন) বেলা ১টায় কেওয়াছড়া চা বাগানের স্থানীয় একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের ভিতরে গ্রীষ্মকালীন ফল আম, কাঁঠাল ও জাম বিতরণ করেন।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) আওতাধীন সিলেটের কেওয়াছাড়া চা বাগান। এই চা বাগানের শ্রমিকদের প্রায় তিন মাস যাবত মজুরি বন্ধ। পরিবারের খাবার যোগার করতে অনেক নারী পুরুষ লতা, মুকি কুড়িয়ে এনে সড়কের পাশে বিক্রি করেন। তাই মৌসুমি ফলতো দূরের কথা অনাহারে অর্ধাহারে জীবনযাপন করতে হচ্ছে এই চা বাগানের শ্রমিকদের। তাই এই গ্রীষ্মকালীন ফল পেয়ে খুশি হন চা শ্রমিকরা।

২ বছরের ছেলেকে সাথে নিয়ে ফল নিতে আসেন সুজতা বারাইক। তিনি বলেন, দুই মাস, তিন মাস বন্ধ রাখার পর দুই তিন সপ্তাহ বেতন দেওয়া হয় আমাদের। আমার সন্তানদের মুখে তিনবেলা ভাতই দিতে পারি না। ফল কিভাবে খাওয়াবো। তাই যখন শুনলাম বাগানে কেউ একজন ফল দিবে তখন দৌড়ে গিয়ে বিশ্বজিৎ দাদাকে বললাম আমার নাম লিখতে। বাচ্চারা কিছু ফল খেলে তাদের শরীর মন ভাল থাকবে।

আরেক চা শ্রমিক পুতলা দাশ বলেন, ফলেরতো অনেক দাম। কিনে খাবার সামর্থ্য আমাদের নাই। তাই এই ফলগুলো পেয়ে খুব খুশি হয়েছি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে খাবো।

চা শ্রমিক কিরণ ভূমিজ বলেন, মজুরি বন্ধ প্রায় ৩ মাস। সংসার চালাচ্ছি অনেক কষ্ট করে। বাগান থেকে প্রতিদিন লতা তুলে রাস্তার পাশে বিক্রি করি। লতা বিক্রি করে যে টাকা পাই সেটা দিয়ে এককেজি চাল কিনলে তেল মশলা কিনতে পারি না। ফল কিনে খাওয়াতো আমাদের কাছে বিলাসিতা। তিই আজ ফলগুলো পেয়ে খুব খুশি হয়েছি।

ফল বিতরণকারী সমাজকর্মী চৌধুরী জান্নাত রাখি বলেন, আমি বরাবরই সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের নিয়ে কাজ করি। বিশেষ করে যে মানুষজন ভাল খাবার খাওয়ার সামর্থ্য রাখেন না তাদেরকে খাবার বিতরণ করি। এতদিন আমি সিলেটের বিভিন্ন কলোনি, বস্তি, বিভিন্ন ভবনে কাজ করা দিনমজুরদের খাবার বিতরণ করেছি। এবার চাচ্ছিলাম গ্রীষ্মকালীন ফল বিতরণ করতে। তাই আমার এক সাংবাদিক বান্ধবীর পরামর্শে চা বাগানে ফল বিতরণ করলাম।

তিনি বলেন, এই চা শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম কতটা কষ্টে দিনানিপাত করছেন তারা। প্রতিটি মানুষেরই দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য আছে। সেই দায়িত্ববোধ থেকে সমাজের সব ধরনের সুবিধা বঞ্চিত এই চা শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছি সকল বিত্তশালীদের কাছে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *