স্পোর্টস ডেস্ক: সময়টা ২০১৯, মাত্র ৯ বছর বয়সে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে লুইস এনরিকের ‘হৃদয়ের টুকরা’ কন্যা জানা। এইতো কিছু দিন আগে, ২০১৫ সালে বার্সেলোনার হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের রাতেও বাবার সঙ্গে কতই না আনন্দ করেছিল ছোট্ট সেই মেয়েটি। পুরো মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছিল বাবার সঙ্গে, হেসেছিল-খেলেছিল নিশ্চিন্ত মনে।
এরপর পেরিয়ে গেছে ছয়টি বছর। উনিশের সেই ধাক্কা পুরোপুরিভাবে বদলে দেয় এনরিকে জীবন-দর্শন। বার্সা থেকে পিএসজিতে পাড়ি জমায় এনরিকে। মেয়ে জানার এভাবে হারিয়ে যাওয়া, তার সময়টা থমকে দিলেও থামাতে পারেনি এনরিকের ঊর্ধ্বমুখী কোচিং ক্যারিয়ার। জয়ের তৃষ্ণা হারাননি তিনি, যেন আরও বেশি তৃষ্ণার্ত ছিলেন।
সেটিই যেন প্রমাণ করলেন গতরাতের ম্যাচে। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে যে সাফল্যের জন্য পিএসজি মরিয়া হয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছিল, সেই কীর্তি এসেছে এনরিকের হাত ধরেই। দলে ছিল না নেইমার-লিওনেল মেসি-কিলিয়ান এমবাপ্পের মতো তারকরা! এমন এক দলকে নিয়েই ইন্টার মিলানকে গুণে গুণে ৫ গোল দিয়ে চলতি আসরের শিরোপা জিতে নিয়েছে ফরাসি ক্লাব পিএসজি।
গত রাতে অনুষ্ঠিত হওয়া চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের আগে এক ব্রিফিংয়ে এনরিকে বলেছিলেন, জানার সঙ্গে আমার অসাধারণ কিছু স্মৃতি আছে; কারণ, আমার মেয়ে পার্টি করতে খুব ভালোবাসত। আমি নিশ্চিত, সে যেখানেই থাকুক, এখনও উদ্যাপন করে চলেছে। এখনও মনে পড়ে বার্লিনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের পর তার সঙ্গে তোলা এক দুর্দান্ত ছবির কথা—জয়ের পর সে মাঠে বার্সেলোনার পতাকা রাখছিল।
এরপর গলাভেজা কণ্ঠে এনরিকে বলেন, এবার আমি আশা করি, পিএসজির হয়েও জানা একই কাজ করতে পারবে। মেয়েটা শারীরিকভাবে সেখানে থাকবে না, কিন্তু মানসিকভাবে থাকবে—আর আমার জন্য সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এনরিকের এমন বক্তব্যে বেশ ভালোভাবেই বোঝা যায়, আনন্দের মুহূর্তগুলোতে এনরিকে নিজেকে তার মেয়ের আরও কাছাকাছি অনুভব করেন। সেটিও খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারে পিএসজি সমর্থকরা।
জানার অনুপস্থিতি যেন এনরিককে না ছুঁতে পারে সেজন্য গ্রাফিতির মাধ্যমে গ্যালারিতে নিয়ে আসে জানাকে। তাদের কোচের আবেগের গুরুত্ব দিতেই গ্যালারিতে ছিল জানার পতাকা ওড়ানোর দৃশ্য। গায়ে ছিল পিএসজির জার্সি। বাবার হাতে ছিল পিএসজির পতাকা।
২০১৫ সালের পর আবারও মনে হচ্ছিল জানা ফিরে এসেছে আলিয়াঞ্জ অ্যারিনায়। পিএসজি সমর্থকদের সঙ্গে গতরাতেও যেন তাদের সঙ্গেই মাঠে ছিল ছোট্ট সেই মেয়েটি।
সবাই যখন আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত তখন এমন দৃশ্য দেখে ভেজে ওঠে এনরিকের চোখ। ক্যামেরার চোকে দেখা যায় এনরিকের চোখ ভরা কৃতজ্ঞতা। এরপর সংবাদ সম্মেলনেও মেয়েকে নিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন এনরিকে।
সমর্থকদের ধন্যবাদ দিয়ে তিনি বলেন, এটা খুবই আবেগের। সমর্থকেরা আমার ও আমার পরিবারের কথা ভেবেছেন- এটা ভাবতেই ভালো লাগছে। আমার মেয়ের কথা মনে রাখতে কোনো চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার প্রয়োজন নেই। আমি প্রতিদিন তার কথা ভাবি। সে এখনো আমাদের পরিবারের অংশ। আমরা যখন হেরে যাই, তখনও তার উপস্থিতি অনুভব করি।
তিনি আরও বলেন, এটা আমাদের পরিবারের যৌথ ভাবনার ফসল, আমরা সকল নেতিবাচক ও ইতিবাচক বিষয়গুলো নিয়ে একইসাথে ভাবি। জানা সবসময় আমাদের সঙ্গে থাকে। আমরা সবসময় তার কথা ভাবি। তাকে ভালোবাসি। চিরকাল তাকে আমরা হৃদয়ে বহন করব। আমি মনে করি, সে এখানে এসে আমাদের সঙ্গে দৌড়াবে। আমি পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে সেই মুহূর্তটিও ভাগ করে নিতে চাই।