‘নিশিরাতের লম্বা ভুত’

             (-দেলোয়ার হোসেন দিলু-)

আক্তার সাহেব তার মেয়ে মিতুকে খুঁজে পাচ্ছেন না, সারা বাড়ি খুজেঁ হয়রান হয়ে গেলেন কোথাও খুজেঁ পেলেন না। কাজের মেয়ে জরিনা ঝারু দিতে গিয়ে দেখে মিতু খাটের নীচে শুয়ে আছে । মিতু বলল,বাবা আমার খুব ভয় করছে, খাটের উপরে আমার বিছনায় কে যেন ঘুমিয়ে আছে। আক্তার সাহেব মুচকি হাসি হাসলেন,তিনি খাটের উপরে কাউকে দেখতে পেলেন না।

মেয়ের এ রকম আচরন মনে খটকা লাগল । তিনি মেয়েকে নিয়ে এ বাড়িতে একা থাকেন, বাড়িটি কেনার সময় কে একজন বলেছিল, বাড়িটি দোষী, বিক্রি দেবার আগে বাড়িটি ভাড়া দেওয়া হত কোন ভাড়াটে এক মাসের বেশি ঠিকতো না । ভুতের উপদ্রব, সারা বাড়িতে ভুতের নৃত্য চলে, মালিক বিরক্ত হয়ে বাড়ি বেচবার সিন্ধান্ত নেন,আর আক্তার সাহেব বাড়ির খোঁজ খবর না নিয়ে সস্তা দামে পেয়ে কিনে নিলেন । আজকাল এরকম দামে বাড়ি কিনতে পাওয়া যায় না ।
আক্তার সাহেব আবার মেয়ের দিকে তাকালেন, ওমা মেয়ে খাটের নিচে নেই তিনি দেখতে পেলেন খাটের উপরে মেয়ে আরাম করে ঘুমাচ্ছে । মাথায় হাত বুলাতে গিয়ে দেখেন তার চোখ দুটো রক্তের মত লাল, বাবা এ ঘরে আমার ভয় করে, আমি এ ঘরে থাকব না । আমি তোমার ঘরে থাকবো, আচ্ছা ঠিক আছে মা , মেয়েকে নিজের বিছানায় নিয়ে গেলেন, গিয়ে দেখলেন বিছানা এলোমেলো কে যেন এই মাত্র বিছানা থেকে উঠে গেল। আক্তার সাহেব বিভ্রান্তিতে পড়ে গেলেন, কিছুই বুঝে আসছে না । তিনি বিছানা ঠিক করে মেয়েকে ঘুমাতে বললেন, নিজে মেয়ের মাথার কাছে গিয়ে বসলেন ।
মনে মনে চিন্তা করেন বাড়ি কিনে কি আমি ভুল করলাম ? যদি মেয়ের মা বেচেঁ থাকতো হয় তো মুসকিলে আছান হয়ে যেত । তিন খাটের নিচে চেয়ে দেখলেন অবিকল তার মেয়ের মত একটি মেয়ে বসে আছে, তিনি দৌড় দিয়ে নিজের রুমে গেলেন , দেখলেন তার মেয়েটি তো নিঃচিন্তে খাটে ঘুমিয়ে আছে । তাহলে ঐ মেয়েটি কে খাটের নীচে শুয়ে আছে। আক্তার সাহেব বিভ্রান্তিতে পড়ে গেলেন, এখন কি করবেন কিছুই মাথায় আসছে না, তিনি লক্ষ্য করলেন ঘরের বিড়ালটা লেজ নাড়িয়ে নাড়িয়ে পায়ের সাথে শরীর লাগিয়ে মেউ মেউ করছে, ঠিকই কিন্তু বিড়ালটি অদ্ভুতভাবে খাটির নীচে তাকিয়ে আছে, চোখে তার ভয়ংকর বিভ্রান্তি ।
আক্তার সাহেব আবার দেখতে পেলেন খাটের নীচে একটা লাশ পড়ে আছে ,সাদা কাপড় দিয়ে চকলেটের মত পেচানো লাশটি । তিনি ভয় পেয়ে গেলেন, সারা শরীর ঘামে ভিজে গেল , মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়তে লাগলেন ,লা ইলাহা ইল্লা আনতা সোবাহানাকা ইন্নিকুমতুম মিনাজ্জয়ালিমিন ।

তিনি নিজের রুমে মেয়ের কাছে গেলেন
অনুভব করলেন কে যেন বিছানা থেকে উঠে অন্য রুমে চলে গেল , কিন্তু তিনি দেখতে পাচ্ছেন না, মেয়েটিও বেঘোরে ঘুমাচ্ছে । এখন মাঝরাত। পুরো বাড়ি নিরব, কোনখানে কোন শব্দ নেই, দেয়াল ঘড়িটা টিকটক টিকটক শব্দ করছে , কাজের মেয়ে আমার বুড়ো মা, মেয়ে এবং আমি ছাড়া এ বাড়িতে আর কেউ নেই । হঠাৎ একটি ছোট বাচ্চার কান্নার শব্দ হলো, থেমে থেমে, কিন্তু আমার বাড়িতে তো কোনো ছোট বাচ্চা নেই, এই কান্নার আওয়াজ এলো কোত্থেকে ! আর ঘরের ভেতর আর কারো সারা শব্দ ও নেই, তাহলে কি,আমি একাই শুনছি বাচ্চার কান্না । দরজা খোলার শব্দ, আমি এগিয়ে গেলাম দেখার জন্য যে কে এতো রাতে দরজা খুলছে । আমি যেতেই কে একজন আমার সামনে দিয়ে সেই রুমে চলে গেল কিন্তু কে , আমি জোরেই বললাম কে ওখানে কোন শব্দ নেই, যেন কিছুই হয়নি । আক্তার সাহেব বিভ্রান্তিতে পড়ে গেলেন কি করবেন । কাউকে ডাকবেন, নাকি ঘুমিয়ে যাবেন,
এতো ভয়-ডরের মাঝে কেউ কি ঘুমাতে পারে, আক্তার সাহেব মনে মনে চিন্তা করলেন,ভয় যখন পাইছি অঞ্জান না হওয়া পর্যন্ত ওদের আস্তানা খুজঁতেই থাকবো । তিনি সাহস করে জানালাটা খুলে ফেললেন, দেখলেন আট দশজন মহিলা গোল হয়ে মিটিং করছে, সারা উঠোন আবছায়া আলোয় ভরে গেছে একটা অজানা সুগন্ধ নাকে এসে লাগল । একজন আরেক জনের সাথে কথা বলছে মিনমিন করে কিছু বুঝা যায় অনেকটাই বুঝা যায় না । দেখলাম ছয় সাতফুট লম্বা একটি মেয়েটি কি যেন পরিবেশন করছে সম্ভবত সেই জিনিসটার গন্ধ নাকে আসতেছে,
মেয়েটির মুখ ভয়ংকর রকম বিশ্রী চারটি দাঁত লম্বা লম্বা সুচাঁলে নাকটিও লম্বা তবে চুল গুলি জটা বাধা হাতের নখ ধারালো ও কালো , আমি জানালা খোলার সাথে সাথেই তারা চমকিয়ে গেল
আমি বললাম কে কে ওখানে কোন জবাব এলো না কিন্তু একজন আরেক জনের মুখ চাওয়া চাওয়ী করল, আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম,একজন আরেক জনকে ধাক্কা দিচ্ছে ,, এইসব দেখে
আমি ভয় পেয়ে গেলাম, আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, বুকের ধুক ধুক শব্দটা বেড়ে গেছে, জানালার বাহিরে যে মাথা বের করে দেখবো সেই সাহসটুকু যেন নেই, তবুও আমি কোরানের আয়াত পড়ে বুকে ফু দিয়ে সাহস নিয়ে জানালার বাহিরে মাথা বের করে আশ পাশ দেখলাম ওমা সারা বাড়ি জুরেই তাদের বিচরণ, আমি জানালা বন্ধ করতে যাবো, ঠিক তখনি ডাক শুনলাম, আঙ্কেল আঙ্কেল , ১২ /১৩ বছরের একটি ফুটফুটে মেয়ে কাছে এসে বলল
আমরা এ বাড়িতে যারাই আছি সবাই মেয়ে ভুত, অনেক দিন থেকে বাস করে আসছি,কোন প্রবলেম নেই, আমরা সবাই ভুত্নী , আমি এর আগে আপনাদের শ্বশান ঘাটে ছিলাম ঐ যে লম্বা মেয়েটাকে দেখছেন ওনি আমাদের সর্দারনি, ওনি আমাদের নিয়ে এসেছেন আপনার বাড়ি নিরাপদ বলে,ঐ শিমুল গাছটাই আমাদের মুল আস্তানা ।

আমি আপনাদের গায়ের যতীন বাবুর মেয়ে আমার অপঘাতে মৃত্যু হওয়ার পর থেকেই আমি ভুত হয়ে গেছি,তবে আমি কাউকে ভয় দেখাই না, আমি এখনো সেই ট্রেনিং নেইনি, । লম্বা ভুতটি মেয়েটির কাছে এসে কি যেন বলল মিনমিন করে আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না, আমি জিঞ্জেস করলাম ওনি কি বলছেন তোমাকে , ছোট মেয়েটি বলল, আপনি খুব ভাল মানুষ, সম্মানি মানুষ, আপনার ব্যবহারে তিনি খুবই সম্মানীত বোধ করছেন, তাই বলছেন এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন, তবে শর্ত হলো দুটি, আপনি যদি মানেন তাহলে শর্ত পুরন হবার সাথে সাথেই এই বাড়ি ছেড়ে শ্বশানে চলে যাবো । শর্ত দুটি হলো বাড়ির পিছনে শিমুল গাছটি জঙ্গল সহ কাটতে হবে আর সেই গাছের ডাল পালার আগুন দিয়ে একটি গরু জবাই করে মেজবানি রান্না করে খাওয়াতে হবে, চল্লিশ কেজি মাংস দিয়ে আখনি পোলাউ বানিয়ে রাত ১টার সময় হাওরের ঐ যে বড় বট গাছটি আছে তার নীচে রেখে আসতে হবে। আর শুনন

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *