পাকিস্তানে জঙ্গি হামলায় নিহত ১৬০০

সিলেট নিউজ টাইমস্ ডেস্ক : ২০২৪ সালে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী বোমা হামলা ও বন্দুক হামলায় ১৬০০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিক ও নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়েছেন। এছাড়া বর্তমানে দেশটির আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশে ভয়াবহ সহিংসতা চলছে।

সোমবার ইসলামাবাদ-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (সিআরএসএস) তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।

পন্য সমূহের বিস্তারিত জানতে ক্লিক

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালে মোট হতাহতের ৬০ শতাংশই বেসামরিক নাগরিক। এতে বলা হয়, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ‘এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক সন্ত্রাসী হামলা ও প্রাণহানির শিকার হয়েছে। ’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৬৮৫ নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়েছেন। এ সংখ্যা ২০১৪ সালে জঙ্গি হামলা ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে পাকিস্তানে প্রায় ৮০০ নিরাপত্তা কর্মী হারানোর পর সবচেয়ে বেশি।

অবশ্য পাকিস্তান প্রথম থেকেই জোর দিয়ে বলছে, নিষিদ্ধ আন্তঃদেশীয় গোষ্ঠীগুলো আফগান অভয়ারণ্য থেকে সহিংসতা সংগঠিত করছে। তালেবান ২০২১ সালের আগস্টে প্রতিবেশী দেশটিতে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম তীব্রতর হয়েছে।

জঙ্গি তৎপরতার পুনরুত্থানের জন্য দুটি গোষ্ঠীকে দায়ী করা হয় ‘তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) এবং বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)’।

জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত উভয় সংগঠনই নিয়মিতভাবে নিরাপত্তা বাহিনী ও অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে হামলার দায় স্বীকার করে আসছে।

টিটিপি মূলত খাইবার পাখতুনখাওয়ায় সক্রিয়, অন্যদিকে বিএলএ এবং এর মিত্র জাতিগত বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো বেলুচিস্তানে সশস্ত্র হামলা চালায়।

পাকিস্তান সরকার তাৎক্ষণিকভাবে এই প্রতিবেদনের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র শুক্রবার সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করেছেন, ২০২৪ সালে পাকিস্তানজুড়ে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে ৩৮৩ জন সাহসী কর্মকর্তা ও সেনা শহিদ হয়েছেন। তবে এ বিষয়ে তিনি আর বিস্তারিত কিছু জানাননি।

সিআরএসএস জানায়, শুধু বেলুচিস্তানেই সেনাসহ পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় ২৫০ জনের প্রাণহানির ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। বাকি হতাহতের সংখ্যা পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশের পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চলে ঘটেছে।

এই অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে, তাদের প্রতিবেদন গণমাধ্যমের পরিসংখ্যান এবং সরকারী বিবৃতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। তারা পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

তাদের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এই সংগঠন নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ এবং গবেষণা উৎসাহিত করতে কাজ করে।

আফগান ভূমি ব্যবহার করে পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশকে হুমকি দেওয়ার জন্য কোনো ব্যক্তিকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তালেবান সরকার সেটা অস্বীকার করেছে।

গত সপ্তাহে তালেবান কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে, পাকিস্তানি জঙ্গি বিমান পূর্ব আফগানিস্তানের পাকটিকা অঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় আক্রমণ করেছে। তারা দাবি করে যে বিমান হামলায় প্রায় ৫০ জন নিহত হয়েছে। বিবৃতিতে নিহতদের পাকিস্তান থেকে আসা ‘শরণার্থী’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।

ভয়েচ অব আমেরিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসলামাবাদ জনসমক্ষে বিমান হামলা নিয়ে কোনো জবাব না দিলেও পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করে তাৎক্ষণিক এই আন্তঃসীমান্ত বোমাবর্ষণের খবর নিশ্চিত করে। তারা বলেন, হামলাগুলো টিটিপি’র ঘাঁটি লক্ষ্য করে চালানো হয়, যার ফলে দুই ডজনের বেশি জঙ্গি নিহত এবং প্রশিক্ষণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়।

তালেবান সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী পাল্টা জবাব হিসেবে পাকিস্তানের ভেতরে কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতুতে হামলা চালায়। পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের দাবি স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *