জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা শায়খ জিয়া উদ্দীন বলেছেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের জমানো আবর্জনা সাফ করে বৈষম্যহীন ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অন্তরবর্তীকালীন সরকারকে আরো দায়িত্বশীলতা ও সতর্কতার সাথে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, যারা দীর্ঘ ১৬ বছর দেশের মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছে, খুম, গুম ও গণহত্যার সংস্কৃতি যারা চালু করেছে, এদেশের মাটিতে অবশ্যই তাদের বিচার করতে হবে। অন্তরবর্তীকালীন সরকার এক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখালে জনগণের আস্থা ও সমর্থন হারাবে। বিপ্লবের চেতনা সমুন্নত রেখে বিপ্লবের অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ সিলেট জেলা উত্তর,দক্ষিণ ও মহানগর শাখার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাওলানা জিয়া উদ্দীন এসব কথা বলেন।
সিলেট জেলা দক্ষিণ জমিয়তের সভাপতি মুফতি মুজিবুর রহমান, সিলেট জেলা উত্তরের সভাপতি মাওলানা আতাউর রহমান কোম্পানীগঞ্জী ও সিলেট মহানগর জমিয়তের সভাপতি মাওলানা খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং মাওলানা মুশতাক আহমদ চৌধুরী, মাওলানা এবাদুর রহমান ও মাওলানা সিরাজুল ইসলামের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জমিয়তের সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন– হাজার হাজার ছাত্রজনতার রক্তে অর্জিত এই মহাবিপ্লব ব্যর্থ হতে পারে না। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দেওয়ার জন্য সরকারে প্রতি আহবান জানান তিনি। তিনি বর্তমান সরকারের প্রতি উদার্থ আহ্বান জানান। অনতি বিলম্ভে সকল পাথর কোয়ারী খুলেদেন এবং সিলেটে সকল উপজেলায় গ্যাস চালু করেদেন।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে জমিয়ত মহাসচিব মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন– ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্রকায়েমের জন্য মদীনাসনদের আদলে সংবিধান তৈরি করতে হবে এবং প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে হবে। বিচার বিভাগকে পরিপূর্ণভাবে স্বাধীন করা ছাড়া ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় বলে জমিয়ত মহাসচিব মন্তব্য করেন। গণসমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন– সিলেট জেলা উত্তর জমিয়তের সভাপতি মাওলানা আতাউর রহমান।
সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন– প্রখ্যাত আলেম মাওলানা শায়খ আলিম উদ্দীন দুর্লভপুরী, জমিয়তের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মাওলানা নুরুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস তালুকদার, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস কাসেমী, মাওলানা আব্দুল বছির, সিলেট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মুশতাক আহমদ খান, জমিয়তের কেন্দ্রীয় যুগ্মমহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, মাওলানা মুনির হোসাইন কাসেমী, মাওলানা তাফাজ্জল হক আজিজ, জমিয়তে উলামা বাংলাদেশের সহসভাপতি মাওলানা হিলাল আহমদ, মহাসচিব মাওলানা নজরুল ইসলাম তোয়াকুলী, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মুহাম্মদ আলী, জমিয়তের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি নাসির উদ্দিন খান, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবেদীন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা জাবের কাসেমী, কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক মাওলানা আব্দুল মালিক কাসিমী, কেন্দ্রীয় আমেলার সদস্য মাওলানা বদরুল ইসলাম, মাওলানা নজরুল ইসলাম, আলহাজ শামসুদ্দিন, ছাত্র জমিয়তের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী, সিলেট মহানগর ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা হাবিব আহমদ শিহাব, মাওলানা আব্দুল জব্বার, আমেরিকা প্রবাসী মাওলানা আজিজুর রহমান , ইউকে জমিয়তে সহ সাঙ্গঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুদ্দীন, মাওলানা নেজামুদ্দীন, শায়খ মাওলানা আব্দুশ শহীদ, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা গোলাম আম্বিয়া কয়েস, মাওলানা কবির আহমদ, মাওলানা খলিলুর রহমান মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন, মাওলানা আলতাফ হোসাইন, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাওসার আহমদ প্রমুখ।
গণসমাবেশে ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট প্রতিষ্ঠা, জুলাই গণহত্যা ও শাপলা চত্তরের গণহত্যার বিচার, সিলেটের পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া, গ্যাস সংযোগ চালু করা, সিলেট-আখাউড়া ডাবল রেললাইন চালু করা, ঢাকা-সিলেট ৬ লেনে সড়ক নির্মাণ, ওসামানী বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর, কওমি সনদের স্বীকৃতি কার্যকর, মাজারে অনৈসলামিক কার্যক্রম বন্ধ করাসহ ১৭ দফা দাবি পেশ করা হয়।
গণসমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত আলেম মাওলানা শফিকুল হক সুরইঘাটি, রেঙ্গা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মুহিউল ইসলাম বুরহান, মাওলানা শায়খ আব্দুল মতিন নাদিয়া, নয়াসড়ক মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা সাইফুল্লাহ, মাওলানা শায়খ আতিকুর রহমান, মাওলানা আব্দুল গফফার ছয়ঘরী, মাওলনা নুর আহমদ কাসিমী প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহমুদুল হাসান , মাওলানা মনজুর আহমদ সালিম, মাওলানা মাহফুজ আহমদ, মাওলানা আলী আহমদ, মাওলানা কাজি আমিন উদ্দীন, মাওলানা আব্দুস সালাম বালাগঞ্জি, মাওলানা হাসান আহমদ, এম বেলাল আহমদ চৌধুরী, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ, মাওলানা কবির আহমদ, মাওলানা আখতারুজ্জামান, মাওলানা এমাদ উদ্দীন সালিম, মাওলানা ফয়সল আহমদ, মাওলানা শামিম আহমদ, মাওলানা লুতফুর রহমান, মাওলানা ফরহাদ আহমাদ, মাওলানা লুকমান হাকীম, কাওসার আহমদ, জাকির হোসাইন, আবু খয়ের প্রমুখ।
সমাবেশের শেষলগ্নে সিলেট জেলা জমিয়তে সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ. মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন সম্মেলনের সভাপতি মুফতি মুজিবুর রহমান সাহেব এবং প্রখ্যাত বুযুর্গ আল্লামা মুহাম্মদ বিন ইদ্রিস লক্ষীপুরীর দোয়ার মাধ্যমে গণসমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ সিলেট জেলা উত্তর,দক্ষিণ ও মহানগর এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত গণসমাবেশ গণসমাবেশে ১৭ দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপিত হয়।
ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে সিলেটের ঐতিহাসিক রেজিস্টারি মাঠে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সিলেট জেলা দক্ষিণ, উত্তর ও মহানগর শাখার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত গণসমাবেশে উপস্থাপিত প্রস্তাবনা হচ্ছে:
১। জুলাই-আগস্ট ২০২৪ বিপ্লবের চেতনা সমুন্নত রেখে বিপ্লবের স্টেকহোল্ডার ও অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে।
২। ইনসাফ নিশ্চিত করতে শাসন বিভাগে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিবাদের সহযোগীদের বরখাস্ত করতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে।
৩। ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের ধ্বংসপ্রাপ্ত বিচার বিভাগকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করে স্বাধীন বিচারব্যবস্থা কায়েম করতে হবে।
৪। সংবিধান সংশোধনে দেশের সিংহভাগ মানুষের চিন্তা-চেতনা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে হবে এবং ফ্যাসিবাদ কায়েমের সকল পথ রুদ্ধ করতে হবে।
৫। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।
৬। নতুন শিক্ষাসিলেবাসে ধর্ম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৭। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে আনতে হবে।
৮। অতিদ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৯। জুলাই গণহত্যায় জড়িত ব্যক্তি, দল ও প্রতিষ্ঠানকে অনতিবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং শহীদদের পরিবারকে সম্মানজনক সহায়তা দিয়ে আহতদের পরিপূর্ণ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
১০। ২০১৩ সালে শাপলা চত্ত্বরে হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকান্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
১১। কওমি মাদরাসা সনদের সরকারি স্বীকৃতি বাস্তবায়নে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে।
১২। সিলেট আখাউড়া ডাবল রেললাইন চালু করতে হবে এবং দ্রুততম সময়ে ঢাকা-সিলেট ৬ লেনের সড়ক নির্মাণ সম্পন্ন করতে হবে।
১৩। প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে ওসমানী বিমানবন্দরকে পূর্নাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপ দিতে হবে এবং দ্রুততম সময়ে টার্মিনাল নির্মাণ সম্পন্ন করে সকল আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের সরাসরি ফ্লাইট নিশ্চিত করতে হবে।
১৪। ভারতের স্বার্থে আওয়ামীলীগ আমলে বন্ধ হওয়া সিলেটের সকল পাথর কোয়ারি খুলে দিতে হবে এবং নব্য সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজদের হাত থেকে সিলেটের বালুমহালগুলো উদ্ধার করতে হবে।
১৫। সিলেটের প্রতিটি উপজেলায় গ্যাস সংযোগ চালু করতে হবে।
১৬। ৩৬০ আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত সিলেটের মাজারসমূহে গান বাজনা ও অনৈসলামিক কর্মকান্ড বন্ধে প্রশাসনকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।
১৭। সিলেট বিভাগে বন্যা সমস্যা নিরসনকল্পে প্রধান নদীগুলো খনন করতে হবে এবং বন্যা প্রতিরোধক বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।