মাদ্রাসা শিক্ষকের অমানবিক নির্যাতনের শিকার এক শিশু হাবিবুর রহমান 

নিজস্ব প্রতিবেদক :  সিলেট নগরীতে মাদ্রাসা শিক্ষকের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে হাবিবুর রহমান নামে ১০বছরের এক শিশু। মোগলাবাজার থানার অভিযোগ সূত্রে জানা যায় যে, নগরীর ৪১নং ওয়ার্ডের সারপিং এলাকার তাজ উদ্দিন ও কুলসুমা বেগম এর একমাত্র ছেলে হাবিবুর রহমান কে ৪২নং ওয়ার্ডের পশ্চিম শ্রীরামপুর এলাকায় আল্লামা নুর উদ্দিন সিটি জামেয়া আশরাফিয়া মহিলা মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। বাড়ি থেকে মাদ্রাসার দুরত্ব বেশি হওয়ায় শিশু হাবিবুর রহমান কে ২য় শ্রেণিতে  আবাসিক ছাত্র হিসেবে ভর্তি রাখা হয়। গত সোমবার (১৩ই মে)  বিকাল ৪টার সময় শিশু হাবিবুর রহমান বাড়িতে আসার জন্য মাদ্রাসার শিক্ষক শামসুল ইসলাম শরীফ (শরীফ উদ্দিন)  এর কাছে ছুটি চায় কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষক তাঁকে ছুটি দেননি৷ সোমবার দিবাগত রাতে মাদ্রাসা থেকে শিশু হাবিবুর রহমান অসুস্থতার কথা জানিয়ে ছুটি না পেয়ে পালিয়ে আসার চেষ্টা করে। এ ঘঠনায় মাদ্রাসা শিক্ষক শামসুল ইসলাম শরীফ খুবই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং শিশু হাবিবুর রহমান এর উপর অমানবিক শারিরীক নির্যাতন করেন এবং রাতের খাবারও খেতে দেননি। মঙ্গলবার সকালেও শিশু হাবিবুর রহমানকে আরেক দফা শারিরীক নির্যাতন করেন শিক্ষক শামসুল ইসলাম শরীফ। মঙ্গলবার সকাল ৯টার সময় শিশুটির মাতা কুলসুমা বেগম কে মোবাইল ফোন কল দিযে শিশু হাবিবুর রহমান কে নেওয়া জন্য বলেন৷ মাতা কুলসুমা বেগম সরল বিশ্বসে তার শিশু পুত্র হাবিবুর রহমান কে বাড়িতে এনে শরীরের কাপড় খুলে আঁতকে উঠেন। তার শারিরীক অবস্থা খারাপ হতে থাকলে প্রথমে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা করেন ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
এ ঘটনায় মাদ্রাসা ছাত্র শিশু হাবিবুর রহমান এর মাতা কুলসুমা বেগম মোগলাবাজার থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন। মোগলাবাজার থানা পুলিশ এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক শামসুল ইসলাম শরীফ কে আল্লামা নুর উদ্দিন সিটি জামেয়া আশরাফিয়া মহিলা মাদ্রাসা থেকে মঙ্গলবার রাত ১২টার সময় গ্রেফতার করেছে। বুধবার সকালে শিশুটির মা মোগলাবাজার থানায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় আসামী শামসুল ইসলাম শরীফ কে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার শিশু হাবিবুর রহমান এর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
এ ঘটনায় মাদ্রাসা ছাত্র শিশু হাবিবুর রহমান এর মাতা কুলসুমা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে মাদ্রাসায় শিক্ষা লাভের জন্য পাঠিয়েছিলাম। বাড়িতে আসার জন্য ছুটি চেয়ে আসতে চাওয়া অপরাধ ছিলো।  আমার ছেলেকে অমানবিক শারিরীক নির্যাতন করে  প্রাণে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন মাদ্রাসা শিক্ষক শামসুল ইসলাম শরীফ। আমি এ নিষ্টুর নির্যাতনের জন্য শামসুল ইসলাম শরীফ এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এ ব্যাপারে ৪২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মতিউর রহমান বলেন, মাদ্রাসায় শিশুদের শিক্ষা গ্রহনের জন্য পাঠানো হয়। সেখানে শিশুকে অমানবিক নির্যাতন আইনের চোখে একটি গুরুতর অপরাধ। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। শিশুটির পরিবার যেহেতু আইনের আশ্রয় নিয়েছে সেখানেই ন্যায় বিচার পাবে।
এ ঘটনায় মোগলাবাজার থানার ওসি মোহাম্মদ  মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা এ ঘটনার ব্যাপারে প্রথমে অভিযোগ গ্রহন করেছি ও পরে দ্রুত তদন্ত করে ঘটনার সাথে জড়িত আসামী শামসুল ইসলাম শরীফ কে গ্রেফতার করেছি। বুধবার মামলার এজাহার গ্রহন করে  আসামীকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *