প্রত্যাগত অভিবাসী, ফিরে এলেও পাশে আছি: সিলেটে প্রতিমন্ত্রী শফিক চৌধুরী

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি বলেছেন, তাঁর মন্ত্রণালয় অভিবাসীদের জন্য ব্যাপক কাজ করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা এবং প্রত্যাগত অভিবাসীদের জন্য এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা। বাস্তবায়ন করছে বিভিন্ন প্রকল্প। এসব প্রকল্পের অধীনে বিদেশে কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবারকে করা হচ্ছে আর্থিক সহায়তা। প্রবাসীর প্রতিবন্ধী সন্তান থাকলে তাদেরকেও করা হচ্ছে আর্থিক সহযোগিতা। বিদেশ থেকে যারা একেবারে ফিরে আসেন তাদেরকে প্রকল্পের আওতায় একত্রীকরণ করে কাউন্সিলিং করা হয় এবং তাদের দক্ষতা অনুযায়ী কাজে লাগানো হয়। এছাড়াও প্রদান করা হয় আর্থিক সহযোগিতা। এসব কাজ প্রচার করে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। মানুষকে জানাতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে অভিবাসীদের পাশে রয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
শনিবার (৯ মার্চ) বেলা ২টায় সিলেটের খাদিমনগর এলাকার একটি রিসোর্টে ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড’র উদ্যোগে আয়োজিত ‘অভিবাসী/প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীর কল্যাণে বহুমুখী কর্মসূচি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সেমিনার’ ও ‘Recovery and Advancement of Informal Sector Employment (RAISE): Reintegration of Returning Migrants’ শীর্ষক প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নে অংশীজনের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন- দেশের মানুষকে বিদেশে নেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে দেশের কোটি কোটি মানুষ প্রবাসে রয়েছেন। প্রবাসীরা মহান মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে দেশকে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে সহযোগিতা করেছেন। তদের মূল্যায়ন করতে বঙ্গবন্ধুর মতো তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রবাসীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। শুধু প্রবাসীদের জন্য নয়, শেখ হাসিনা দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পাওয়ার পর বুঝলাম- এখাে  মানুষের জন্য কাজ কররে অনেক সুযোগ রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব দেওয়ার সময় আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন- এ প্রবাসী, প্রবাসীদের জন্য কাজ করার জন্য তোমাকে দায়িত্ব দিচ্ছি। যাও, তাদের জন্য কাজ করো। তাঁর পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন- প্রবাসীরা আমার ভাই। কারণ- তারা দেশের দুর্দিনে এগিয়ে আসেন।
তিনি বলেন- দেশের ৮টি বিভাগে আটটি ভবন নির্মাণ করা হবে। এসব ভবনে অভিবাসীদের প্রবাসবিষয়ক সকল প্রকার সেবা প্রদানের কার্যালয় থাকবে।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী (এনডিসি)-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খায়রুল আলম, আইওএম’র চিফ অব মিশন (বাংলাদেশ) আবু সাত্তার এসোয়েভ, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমান (বিপিএম-বার, পিপিএম), সিলেট রেঞ্জ সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার মো. জাকির হোসেন খান (পিপিএম) এবং সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সভাপতি তাহমিন আহমেদ।
আরও বক্তব্য রাখেন বক্তব্য ‘রেইজ’র পরিচালক সৌরেন্দ্র নাথ সাহা, আইওএম’র সিনিয়র স্পেশালিস্ট নাসরীন জাহান।
মতবিনিময় সভায় সিলেট বিভাগ ও জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কমকর্তা, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং  প্রবাসী পরিবারের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। সেবাপ্রাপ্ত ও অংশী সুধীজনের মতামত গ্রহণ করা হয় অনুষ্ঠানে।
এছাড়া মধ্যপ্রাচ্েযর বিভিন্ন দেশে মৃত ৬ প্রবাসীর পরিবারকে ৩ লক্ষ টাকা ও ৬ প্রবাসী পরিবারের প্রতিবন্ধী সন্তানের হাতে ১২ হাজার টাকার চেক প্রদান করেন প্রধান অতিথি।
উল্লেখ্য, প্রবাসফেরত কর্মীদের পুন:একত্রীকরণে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে  প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। এ প্রকল্পের আওতায় প্রবাসফেরত  কর্মীদের পুন:একত্রীকরণ তথা কর্মসংস্থানের সাথে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে দেশের ৩০ জেলায় ৩০টি ওয়েলফেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এ ৩০টি সেন্টারের মাধ্যমে দেশে ৬৪টি জেলায়ই প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ২ লাখ কর্মীর নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন), ওরিয়েন্টেশান ও কাউন্সিলিং প্রদানের পর প্রতি কর্মীকে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে প্রণোদনা দেওয়া হবে।
এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত কারিগরি প্রশিক্ষণ, উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং আর্থিক কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে তাঁদেরকে সাবলম্বী অথবা আত্মকর্মসংস্থানে সহযোগিতা করা হবে। এছাড়া যারা বিদেশে গিয়ে দক্ষতা অর্জন করেছেন কিন্তু তাঁদের প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও সনদ নেই- তাদের দক্ষতা-সনদের ব্যবস্থা করা হবে। এ সনদ দিয়ে দেশ-বিদেশে কাজ পাওয়া সহায় কহবে।
এ প্রকল্পের কাজ গত বছরের ৩০ জুলাই থেকে মাঠ পর্যায়ে শুরু হয়েছে। চলবে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। এ প্রকল্পের স্লোগান- ‘প্রত্যাগত অভিবাসী, ফিরে এলেও পাশে আছি।’

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *