থানায় বেধড়ক মারধরের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩টি হল শাখা ছাত্রলীগ বিচার চেয়ে বিবৃতি

সিলেট নিউজ টাইমস্ ডেস্ক:  ছাত্রলীগের তিন নেতাকে থানায় বেধড়ক মারধরের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩টি হল শাখা ছাত্রলীগ বিচার চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে; কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ কোনো বিবৃতি দেয়নি।

একই ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ছাত্রদল ও ছাত্র ইউনিয়ন। তবে চুপ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তারা সোমবার দুপুর পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি। অবশ্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঘটনার বিচার দাবি করেন।

আজও ছাত্রলীগের নেতারা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কার্যালয়ে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

অবশ্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভূমিকায় সন্তুষ্ট হতে পারছেন না নেতাকর্মীদের একটি অংশ। মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী ওই অংশটি তিন নেতাকে পেটানোর ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিতে কেন্দ্রের দুই শীর্ষ নেতার আন্তরিকতার ঘাটতি দেখতে পাচ্ছেন।

ছাত্রলীগ নেতাদের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে কটাক্ষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করছেন। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ছাত্রলীগ বিষয়টি নিয়ে এগোচ্ছে। এটা পরিণত আচরণ।

ব্যক্তিগত বিষয়কে কেন্দ্র করে গত শনিবার রাতে ছাত্রলীগের দুজন কেন্দ্রীয় নেতাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে বেদম পেটান ডিএমপি রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ।

ভুক্তভোগী নেতাদের অভিযোগ- রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হকের সঙ্গে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ঘটনার জেরে এডিসি হারুন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। ছাত্রলীগ নেতাদের ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন আজিজুল।

এ ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে রোববার দুপুরে এডিসি হারুনকে রমনা জোন থেকে প্রত্যাহারের কথা জানানো হয়। পরে বিকালে তাকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়।

অবশ্য এডিসি হারুনের বদলিতে সন্তুষ্ট নন ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতা-কর্মীদের বড় অংশ। তাদের দাবি, এডিসি হারুন ছাত্রলীগের তিন নেতাকে যেভাবে পিটিয়েছেন, সেটা ফৌজদারি অপরাধ। তাকে বরখাস্ত করতে হবে এবং তার বিরুদ্ধে মামলা হতে হবে।

ভুক্তভোগীদের কেউ আজ বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মামলা করেননি।

পুলিশের মারধরের শিকার ছাত্রলীগের তিন নেতা হলেন- কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান।

গুরুতর আহত আনোয়ার হোসেন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। অন্যরা চিকিৎসা নিয়ে শনিবারই হলে ফিরে গেছেন।

যেহেতু তিনজন তিনটি হলের শীর্ষস্থানীয় নেতা, সেহেতু মারধরের ঘটনাটি নিয়ে সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কিছু অনুসারী ফেসবুকে কেন্দ্রীয় দুই শীর্ষ নেতার সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। তাদের পোস্টগুলোর বক্তব্য প্রায় একই ধরনের। অবশ্য দুই নেতাকে মারধরের ঘটনায় তারা ঠিক কী ধরনের ব্যবস্থা দেখতে চান, সে বিষয়টি কারও বক্তব্যেই স্পষ্ট নয়।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে রোববার ফেসবুকে প্রথম পোস্টটি দেন মাস্টারদা সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুন্সি রাকিব হাসান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

রাকিব ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে লিখেছেন- ‘হারুন-টারুন কিছুই না। যেদিন থেকে ফুল, পাখি, গান, জারুল হওয়া শুরু করেছে, সেদিন থেকে ছাত্রলীগ লাল সুতায় ঝুলে গেছে। আর এর সঙ্গে নতুন সুর যোগ হইছে আবার আহ্হা, উহ্হু।’

রাকিব আরও লিখেছেন- ‘আমরা সেই ছাত্রলীগ ফিরে পেতে চাই, যে ছাত্রলীগের একজন কর্মীর জয় বাংলা স্লোগানে প্রকম্পিত হতো রাজপথ। আমরা এই ফুল, ফল, জারুল অভিশাপ থেকে মুক্তি চাই।’

একই ধরনের পোস্ট দিতে দেখা গেছে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফরিদ, সূর্যসেন হল শাখার সদস্য মিনহাজুল ইসলামসহ কয়েকজনকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর কোনো বিবৃতি দেননি। তবে তারা পুলিশি নির্যাতনে আহত কেন্দ্রীয় নেতা আনোয়ারকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ১ নম্বর সহ-সভাপতি রাকিবুল হাসান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দায়িত্বশীল জায়গা থেকে ছাত্রলীগ লাগামহীন হতে পারে না, হবেও না৷ ছাত্রলীগ নিয়মতান্ত্রিক পথেই হাঁটবে।’ তিনি আরও লেখেন- বিক্ষিপ্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পথকে কোনোভাবেই অমসৃণ হতে দেবে না ছাত্রলীগ।

একই ধরনের পোস্ট দিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আবদুর রহিম, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আকিব মোহাম্মদ ফুয়াদ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান। আমিরুজ্জামান লিখেছেন- ছাত্রলীগ পরিণত আচরণ করেছে।

কেন্দ্রের ভূমিকার পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা নিয়ে বক্তব্য জানতে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ওয়ালী আসিফের মুঠোফোনে একাধিক কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। রোববার থেকে তারা ফোন ধরছেন না।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *