এ নির্বাচনের আগে পাকিস্তানের আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরবেন বলে তার দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। ১৫ অক্টোবর তিনি দেশে ফিরতে পারেন, এমন সম্ভাবনা ধরে তার দল মুসলিম লিগ ওইদিন বিমানবন্দরে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নওয়াজ শরিফের ছোটভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ গত মাসে বলেছিলেন, সাধারণ নির্বাচনের আগে অক্টোবরে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সর্বোচ্চ নেতা দেশে ফিরবেন। আর নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের দল ক্ষমতায় এলে নওয়াজ শরিফই হবেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।
পিএমএল-এন নেতা সাইফ-উল-মুলুক খোখার বলেছেন, নওয়াজ শরিফ আগামী ১৫ অক্টোবর যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন থেকে পাকিস্তানের লাহোরে পৌঁছাবেন। বিমানবন্দরে তাকে লাখো মানুষ স্বাগত জানাবেন।
স্বেচ্ছানির্বাসন শেষে দেশে ফিরে নওয়াজ শরিফ কী ভূমিকা নেবেন, সে সম্পর্কে ধারণা দিতে শুরু করেছেন তার দলের নেতারা।
সবশেষ গত রোববার পিএমএল-এনের পাঞ্জাব প্রদেশের মুখপাত্র আজমা বুখারি বলেছেন, দেশে ফিরে নওয়াজ শরিফ ‘প্রতিষ্ঠানবিরোধী’ (অ্যান্টি-এস্টাবলিশমেন্ট) অবস্থান গ্রহণ করবেন না।
পাকিস্তানের ‘এস্টাবলিশমেন্ট’ শব্দ দিয়ে সাধারণত দেশটির ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীকে বোঝানো হয়।
আজমা বুখারি বলেছেন, নওয়াজ শরিফ কারও বিরুদ্ধে বলবেন না। তার বক্তব্য দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে না, যিনি ক্রমাগত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করে আসছেন।
আজমা বুখারির ভাষ্য, পিএমএল-এনের সর্বোচ্চ নেতার লক্ষ্য হবে জনগণকে দেশের বর্তমান বাস্তবতা সম্পর্কে তালিম দেওয়া। বিদ্যমান সংকট থেকে জাতিকে বের করে আনা। নওয়াজ শরিফ দেশের অনেক গোপন বিষয় জানেন। কিন্তু তিনি সব কিছুর ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।
দুর্নীতির একটি মামলায় সাত বছরের সাজা ভোগ করছিলেন নওয়াজ শরিফ। এ অবস্থায় তিনি বিরলভাবে আদালতের অনুমতি নিয়ে প্রায় চার বছর আগে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান। সেই সময় ক্ষমতায় ছিল ইমরানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।
নওয়াজ শরিফ ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডন গিয়েছিলেন। তার পর তিনি আর দেশে ফিরে আসেননি। কারণ দেশে ফিরলে তাকে গ্রেফতার করে আবার কারাগারে পাঠানো হতো।
গত বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের আনা অনাস্থা ভোটে হেরে ইমরানের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হয়। পরে শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে বিরোধীরা জোট সরকার গঠন করে।
সাধারণ নির্বাচনের লক্ষ্যে গত ৯ আগস্ট জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়। জাতীয় পরিষদ বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের অবসান ঘটে। জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পরে গঠিত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
পিএমএল-এন নেতা আজমা বুখারি বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে। নওয়াজ শরিফ অক্টোবরে দেশে ফিরে দলের নির্বাচনি প্রচারে নেতৃত্ব দেবেন।
পাকিস্তানে সময়মতো জাতীয় নির্বাচন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় পিএমএল-এনের একটি অংশ মনে করছে, নওয়াজের পাকিস্তানে ফেরার এখনই আদর্শ সময়।
তবে এ বিষয়ে দলটিতে ভিন্নমতও রয়েছে। এই ঘরানার নেতারা চান না নওয়াজ শরিফ এখনই দেশে ফিরুন।
পিএমএল-এনের সাবেক এক জাতীয় পরিষদ সদস্য (এমএনএ) বলেছেন, দলকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য নওয়াজ শরিফের দেশে ফিরে আসার দরকার রয়েছে, তবে দেশের পরিস্থিতি বদলে গেছে। এখন তিনি দেশে ফিরলে হিতে বিপরীত হতে পারে। পাকিস্তানের জনগণ এখন সব রাজনৈতিক দলের প্রতিই হতাশ। সব রাজনৈতিক দল জনগণকে হতাশ করেছে।
এমনকি জনগণ ইমরান খানের সমালোচনা শুনতেও রাজি নন। নওয়াজ শরিফের প্রত্যাবর্তনে দলের নেতাকর্মীরা নতুন করে উজ্জীবিত বোধ করতে পারেন। কিন্তু বিষয়টি সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরক্তি তৈরি করতে পারে। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট না কমা পর্যন্ত নওয়াজ শরিফের দেশে ফেরার পরিকল্পনা দলের স্থগিত করা উচিত।
পিএমএল-এনের এই নেতা আরও বলেছেন, এখন যদি নওয়াজ শরিফ দেশে ফিরে আসেন আর তার জামিন মঞ্জুর হয়, তা হলে জনগণ এই বিষয়কে পাকিস্তানের নতুন প্রধান বিচারপতি ও পিএমএল-এনের মধ্যে একটি পাতানো খেলা (ফিক্সড ম্যাচ) হিসেবে দেখতে পারেন। আবার যদি তাকে জামিন না দেওয়া হয়, তা হলে দল একটি আক্রমণাত্মক অবস্থান নিতে বাধ্য হবে। শত্রু হওয়া এড়াতে এই সময় দলের এমন অবস্থান নেওয়াটাও (আক্রমণাত্মক) ঠিক হবে না।
সূত্র: এক্সপ্রেস ট্রিবিউন