রিপন আহমদ ফরিদী একজন ছড়াকার একজন সংগঠক:জয়নাল আবেদীন জুয়েল

রিপন আহমদ ফরিদী। আমার স্নেহভাজন। আজ ফরিদীর জন্মদিন।
আজ থেকে ছাব্বিশ বৎসর আগে সৈয়দ রিপন আহমদের সাথে আমার পরিচয়। তখন তার বয়স কত হবে? আমার জানামতে চৌদ্দ প্লাসই হবে। ছড়াপরিষদের আসরে ছড়া পাঠ করতে এসেছিলো। মাত্র দু’চারদিনের মাথায় আমি তাকে ছড়াপরিষদের প্রচার সম্পাদকের দায়ীত্ব দিয়ে দেই। তারপরে শুরু হয় তার কাজ। আমি তখন সকল ঝিমিয়ে পড়া লেখকদের বাসায় পাঠাতাম তাকে। সে আমার কথার হেরফের করতো না মোটেও। একেকজন লেখকের বাসায় দু’এক বার কড়া নাড়ার পর দেখা যেত ঐ লেখক আসরে এসে হাজির। এভাবে অনেক লেখক নুতন উদ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। সৈয়দ রিপন আহমদ এভাবে একদিন রিপন আহমদ ফরিদী হয়ে যায়। হুমায়ূন ফরিদী সাহেব ছিলেন তার প্রিয় অভিনেতা। সৈয়দ রিপন আহমদ তার নাম থেকে সৈয়দ কেটে দিয়ে নামের শেষে ফরিদী যোগ করে হয়ে যায় রিপন আহমদ ফরিদী। তাকে নিয়ে অনেক স্মৃতি আমার। এমন কোন কাজ নেই যা ফরিদী পারে না। তাকে যদি বলা হতো অমুক মন্ত্রীর সাথে দেখা করতে হবে, ফরিদীর জন্য এ কাজ অত্যন্ত মামুলীই ছিলো।

২০০৩ সালের কথা। একদিন মাগরিবের পর ফরিদী আমার অফিসে এসে হাজির। আমি তখন নৈশ ডাকঘরে কর্মরত। ফরিদী বললো-দাদু ভাই আগামী কাল সিলেট আসছেন। আগামীকাল একটা ছড়া উৎসব করবো ছড়াপরিষদ থেকে। আমি বললাম-মাথা খারাপ? এখন বাজে সন্ধ্যা ৭ টা। দাওয়াত কার্ড রেডি করতে হবে। তারপর বিলি করতে হবে। পত্রিকায় নিউজ দিতে হবে। ব্যানার বানাতে হবে, ফেসটুন বানাতে হব, মাইকের ব্যবস্থা করতে হবে, হল ভাড়া করতে হবে। এত কিছু না হয় করা গেলো, কিন্তুু একদিনের নোটেশে অনুষ্টান, যদি হল না ভরে, তাহলে তো বেইজ্জতি। ফরিদী বললো- আপনি এখনই অফিস থেকে বের হয়ে যান। তারপর আমরা দুজনই যথেষ্ট। পাগলের মত অফিস থেকে বের হয়ে গেলাম শাহিনের বাসায়। শাহিন তো আকাশ থেকে পড়লো। বললো- অসম্ভব। শুধু রাতটাই আছে। কাজ করবে কখন? তারপর আমি ও ফরিদী সারা রাত কাজ করলাম। সারা রাত ঘুম নেই। তখন ফোন ছিলোনা। এ বাড়ি, ও বাড়ি রিক্সা নিয়ে চক্কর দিলাম। গভীর রাতে গিয়ে লেখকদের বাসায় ডাকাডাকি। সবাই হতভম্ব হয়ে গেলো। কী ব্যাপার? কোন দূর্ঘটনা নয় তো? আমি বললাম, দূর্ঘটনা নয়, আবার দূর্ঘটনাও। আগামীকাল ছড়া উৎসব। উপস্থিত হওয়া চাই, নইলে ইজ্জত শেষ। সকালে এলেন দাদু ভাই। তাকে হোটেলে জায়গা করে দিলাম। বুক ধড়ফড় করছে, যদি ভাল জমায়েত না হয়। বিকেল ৪টায় অনুষ্টান। সব কাজ শেষ। উপস্থিত সব লেখকের জন্য আপ্যায়নেরও ব্যবস্থা করা হলো। কিভাবে এতকিছু করা হলো তা ভাবলে এখনও অবাক হই। হঠাৎ কয়েকজন ছড়াকার বেঁকে বসলো। আমরা কিছুই জানি না। সুতরাং উৎসবে আসবো না। তারপর এদের একেকজনকে একেকটা দায়ীত্ব দিয়ে মেনেজ করলাম। বিকেল হলো। সাড়ে চারটা বাজার আগে শহীদ সোলেমান হলের বড় হল ছড়াকারদের উপস্থিতিতে ভরে গেলো। এরপরে যারা আসলো তারা জায়গা না পেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে অনুষ্টান উপভোগ করলো। দাদু ভাই নিজেও অবাক। এই স্মৃতি আমার সাংগঠনিক জীবনের সেরা স্মৃতি।

রিপন আহমদ ফরিদী। একজন ছড়াকার। একজন ভাল সংগঠক। সে অনুপ্রেরণায় উদ্দীপ্ত করতে পারে। আমি যখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে নর্থ ইস্টে। তখন নিশাচর ফরিদী রাত বারোটায় আমাকে দেখতে যেত। তারপর রাত চারটা পর্যন্ত গল্প করে মাতিয়ে রাখতো। সাহিত্যের আলাপ করলে আমি সজীব হয়ে উঠি, এটা ফরিদী জানতো। তাই সে সাহিত্যের আলাপ শুরু করলেই আমি উঠে বসতাম। তারপর চলতো রাত চারটা পর্যন্ত খোশগল্প। ফরিদী চলে যাওয়ার পর আমি আবারও অসুস্থ হয়ে যেতাম। এভাবে দশদিন ছিলাম নর্থ ইস্টে। ফরিদীকে আমার আম্মা খুব স্নেহ করতেন। মাত্র একদিন ফরিদী আমার বাসায় না এলে আম্মা বলতেন- ওর খোঁজ নাও। ফরিদী হলো এক মজার মানুষ। হঠাৎ রাত এগারোটায় ফোন দিয়ে বলবে আজ রাতে এসে খাবো। কখনও এমনও হয়েছে আমরা খাওয়া দাওয়া শেষ করে শুয়ে পড়েছি। তখন ফরিদীর ফোন পেয়ে আবারও চুলায় হাড়ি বসাতে হয়েছে। বাচ্চারা ফরিদী আংকেলের অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে। রাত দুইটায় ফরিদী এসেছে দুইজন মেহমান সহ। ফরিদী আসলেই এরকম।

আমাদের স্নেহভাজন ফরিদীর আজ জন্মদিন। ৪১ তম জন্মদিন। শত বৎসর বেঁচে থাকো রিপন আহমদ ফরিদী। এই কামনা করছি।

“জয়নাল আবেদীন জুয়েল”

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *